আরএসএস চাইছিল ইজরায়েলের সঙ্গে গভীর সম্পর্ক গড়ে তুলুক ভারত
ঘন-ঘন আলিঙ্গন, কখনও সৈকতে সমুদ্রে পা ভিজিয়ে একান্তে— তিন দিন ধরে গোটা বিশ্ব চাক্ষুষ করেছে নরেন্দ্র মোদী আর ইজয়ারেলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর উষ্ণতা। এর বীজ আসলে বপন হয়েছিল অনেক আগেই। বহু দশক ধরে আরএসএসও চাইছিল ইজরায়েলের সঙ্গে গভীর সম্পর্ক গড়ে তুলুক ভারত।
২০১৪ সাল। মোদী ক্ষমতায় আসার সাত মাসের মাথায় চলে যেতে বলা হয় বিদেশসচিব সুজাতা সিংহকে। অবসরের সাত মাস বাকি থাকতেই ইস্তফা দিতে বাধ্য হন তিনি। সুজাতাকে সরানোর পিছনে অন্যতম কারণ নাকি ছিল এই ইজরায়েলই। বিজেপির এক নেতার বক্তব্য, মোদী স্পষ্ট করে দিয়েছিলেন যে, ইজরায়েল তাঁর অগ্রাধিকার। তবু সুজাতার নেতৃত্বে বিদেশ মন্ত্রক ব্রিকস সম্মেলনে ইজরায়েলের সমালোচনা করে একটি অনুচ্ছেদ যোগ করেছিল। রাষ্ট্রপুঞ্জের মানবাধিকার পরিষদেও ইজরায়েলের বিরুদ্ধে ভারতের ভোট দেওয়ার অবস্থান নিচ্ছিলেন সুজাতা, যেটি মোটেই পছন্দ হয়নি মোদীর। এখন মোদীর তিন দিনের ইজরায়েল সফরের পরে বিজেপি নেতা অমিত মালব্যের মন্তব্য, ‘‘সুজাতা সিংহ নিশ্চয়ই প্রধানমন্ত্রীর ইজরায়েল সফর মনোযোগ দিয়ে দেখেছেন।’’
সঙ্ঘের বহু দশকের প্রয়াস রয়েছে মোদীর এই ইজরায়েল-প্রীতির নেপথ্যে। দ্বিতীয় সরসঙ্ঘচালক এম এস গোলওয়লকরের সময় থেকে যার শুরু। তৃতীয় সরসঙ্ঘচালক বালাসাহেব দেওরস ওরফে মধুকর দত্তাত্রেয় দেওরসের ভাই ভাউরাও দেওরস তো আরও সক্রিয় ছিলেন এ বিষয়ে। এক সঙ্ঘ-নেতার মতে, ইজরায়েল ইসলামের এক বিপরীত প্রতীক। তারা প্রাচীন হিব্রু ভাষাকে পুনরুজ্জীবিত করতে চেয়েছিল, দেওরসও চেয়েছিলেন সংস্কৃতের পুনরুদ্ধার। ইজরায়েলের জাতীয়তাবাদের ভাবনাও আকৃষ্ট করেছিল তাঁকে।
সঙ্ঘ নেতাটির কথায়, নরসিংহ রাওয়ের আগে ভারতের বিদেশনীতি আরব-পন্থীই ছিল। ভাউরাও দেওরস উদ্যোগী হন যাতে রাও কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করেন ইজরায়েলের সঙ্গে। রাও জমানা থেকেই প্যালেস্তাইনের পাশাপাশি ইজরায়েলের সঙ্গেও কূটনৈতিক সম্পর্ক শুরু হয় ভারতের। উপপ্রধানমন্ত্রী হয়ে আডবাণী ইজরায়েল সফরও করেন। প্রধানমন্ত্রী হয়ে অটলবিহারী বাজপেয়ী স্বাগত জানান সে দেশের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীকে। সঙ্ঘের প্রাক্তন প্রচারক মোদী এ বার নিজেই গেলেন ইজরায়েলে। যা নিয়ে হিন্দুত্বের অন্যতম মুখ যোগী আদিত্যনাথের মন্তব্য, ‘‘ভোটব্যাঙ্ক খোয়ানোর ভয়ে ৭০ বছরে দেশের কোনও প্রধানমন্ত্রী ইজরায়েলে যাননি।’’ কিন্তু সরকারে আসার পরে সেখানে যেতে কেন তিন বছর সময় নিলেন মোদী?
বিজেপির বক্তব্য, পশ্চিম এশিয়ার সঙ্গে সুসম্পর্ক স্থাপন করেই এগোতে চাইছিলেন তিনি। যাতে আরব দুনিয়া ও ইজরায়েলের সঙ্গে ভারসাম্য রক্ষা করা যায়। তবে কংগ্রেস নেতা শশী তারুরের বক্তব্য, ‘‘ইজরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক রাখা জরুরি। কিন্তু আশা করি, সেটি প্যালেস্তাইনের সঙ্গে চিরাচরিত বিশ্বাস ও সম্পর্কের বিনিময়ে নয়।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy