Advertisement
E-Paper

আসরে প্রিয়ঙ্কা, জট কাটিয়ে জোট করল সপা-কংগ্রেস

অভিন্ন ‘শত্রু’ বিজেপিকে হারাতে শেষ পর্যন্ত হাত মেলালেন রাহুল গাঁধী ও অখিলেশ যাদব। গত কয়েক দিনের টানটান উত্তেজনার পর রবিবার সন্ধ্যায় লখনউয়ের একটি হোটেলে কংগ্রেস ও সমাজবাদী পার্টির আসন সমঝোতার কথা ঘোষণা করলেন দুই দলের রাজ্য সভাপতি রাজ বব্বর ও নরেশ উত্তম পটেল।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৩ জানুয়ারি ২০১৭ ০৩:৩৮
সপা-র নির্বাচনী ইস্তাহার প্রকাশে দলের সর্বভারতীয় সভাপতি অখিলেশ যাদব। রবিবার লখনউয়ে। ছবি: পিটিআই

সপা-র নির্বাচনী ইস্তাহার প্রকাশে দলের সর্বভারতীয় সভাপতি অখিলেশ যাদব। রবিবার লখনউয়ে। ছবি: পিটিআই

অভিন্ন ‘শত্রু’ বিজেপিকে হারাতে শেষ পর্যন্ত হাত মেলালেন রাহুল গাঁধী ও অখিলেশ যাদব।

গত কয়েক দিনের টানটান উত্তেজনার পর রবিবার সন্ধ্যায় লখনউয়ের একটি হোটেলে কংগ্রেস ও সমাজবাদী পার্টির আসন সমঝোতার কথা ঘোষণা করলেন দুই দলের রাজ্য সভাপতি রাজ বব্বর ও নরেশ উত্তম পটেল। ঘোষণা করা হল, অখিলেশের নেতৃত্বেই উত্তরপ্রদেশ ভোটে লড়বে জোট। সপা ২৯৮টি আসনে ও কংগ্রেস ১০৫টি আসনে লড়াই করবে। দুই পক্ষই জানিয়েছে, ‘সাম্প্রদায়িক’ বিজেপিকে ঠেকাতে ও জাত-ধর্মের উপরে উঠে আমজনতার উন্নয়নের স্বার্থেই এই ‘ঐতিহাসিক’ সিদ্ধান্ত।

‘জোট চূড়ান্ত হয়ে গিয়েছে’, এই কথাটা রবিবার সন্ধ্যায় অতি সহজে দুই দলের নেতারা ঘোষণা করলেও কাজটা মোটেই সহজে হয়নি। এবং জোট ঘোষণার পরেও সম্পর্কের চোরাস্রোত পুরোপুরি কাটেনি। রাহুল ও অখিলেশ আগেই ঠিক করে ফেলেছিলেন, এ বারের নির্বাচনে জোট বেঁধেই লড়বে দুই দল। কিন্তু বাদ সাধছিল আসন সংখ্যা। কংগ্রেস গোড়ায় ১৩৭টি আসন দাবি করে। যা নিয়ে সপা-র মুলায়মপন্থী নেতারা প্যাঁচ কষতে শুরু করেন। তাঁরা অখিলেশকে বোঝান, উত্তরপ্রদেশে কংগ্রেস কোন যুক্তিতে এত আসন চাইছে! এর পরেই অখিলেশ একতরফা সপা-র ১৯১টি আসন ঘোষণা করে দেওয়ায় পরিস্থিতি জটিল হয়ে ওঠে। ওই আসনগুলির মধ্যে কংগ্রেসের গত বার জেতা ৯টি আসনও ছিল। গত কাল সন্ধ্যায় পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌঁছে যায়, দু’দলের পক্ষ থেকেই পরোক্ষে জোট ভেঙে যাওয়ার বার্তা দেওয়া হচ্ছিল।

কিন্তু তার পরেই পরিস্থিতির মোড় দ্রুত ঘুরতে থাকে। রাহুল গাঁধী কথা বলেন সনিয়ার সঙ্গে। তার পরেই রাহুল দলের উত্তরপ্রদেশের নেতাদের নির্দেশ পাঠান, সপা-র সঙ্গে জোট গড়তেই হবে। এই প্রসঙ্গেই অসম ও বিহারের উদাহরণ দেন তিনি। অসমে দলের হার এবং বিহারে জোট গড়ে কংগ্রেসের ফায়দার উদাহরণ দিয়ে রাহুল বোঝান, কেন উত্তরপ্রদেশে জোট জরুরি। পরিস্থিতি অনুকূল বুঝে অখিলেশও বার্তা দেন, কংগ্রেসের জেতা আসনগুলিতে তাঁরা প্রার্থী প্রত্যাহারে রাজি। কিন্তু যা করার, রাতের মধ্যেই চূড়ান্ত করতে হবে। এর পরেই গোটা দর কষাকষির নেপথ্যে থাকা প্রিয়ঙ্কা বঢরার দূত ভোর সাড়ে চারটে পর্যন্ত সপা নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করে ১০৫টি আসনে সমঝোতা চূড়ান্ত করেন। রাতেই জিতিন প্রসাদ, আমরান মাসুদ-সহ ৪১ জন প্রার্থীর নাম ঘোষণা করে দিয়েছে কংগ্রেস।

কংগ্রেস শিবির বলছে, আসলে রাহুল আগেই রাজি হয়েছিলেন জোট গড়তে। কিন্তু রাজ বব্বর, অজয় মাকেনের মতো নেতারা তাঁকে সহজে হার না মানার কথা বলে তাতাচ্ছিলেন। তাঁদের বক্তব্য ছিল, রাহুল জাতীয় নেতা হয়ে কেন অখিলেশের মতো একজন আঞ্চলিক নেতার কাছে সহজে বশ্যতা স্বীকার করবেন? এটাকেই ভাল ভাবে নেননি অখিলেশ। বিশেষ করে উত্তরপ্রদেশে কংগ্রেসের করুণ দশার পরেও তাদের নেতাদের মনোভাবে বিরক্ত হন তিনি। সপা সূত্রের বক্তব্য, উত্তরপ্রদেশে কংগ্রেসের এমনই দশা যে, তাদের ১০৫টি আসন দেওয়া হলেও তার মধ্যে ১২টি আসনে ‘হাত’ চিহ্ন নিয়ে লড়বেন সপা-র ১২ জন নেতা!

আজ সকালে ‘নেতাজি’ মুলায়ম সিংহের অনুপস্থিতিতে দলের ইস্তাহার প্রকাশের সময় অখিলেশ খোলাখুলি বিজেপি, মায়াবতীকে আক্রমণ করার পাশাপাশি রাহুল সম্পর্কে এমন একটি মন্তব্য করেছেন, যা ভাল ভাবে নেয়নি কংগ্রেস। সনিয়ার নির্বাচনী কেন্দ্র রায়বরেলীর এক স্কুলের দৃষ্টান্ত দিয়ে অখিলেশ বলেন, তিনি ছাত্রদের প্রশ্ন করেছিলেন, ‘জানো, আমি কে?’ জবাবে তারা বলে, রাহুল গাঁধী! অখিলেশের অমন মন্তব্যের পরে লখনউয়ে জল্পনা শুরু হয়, তা হলে কি মুখ্যমন্ত্রী বোঝাতে চাইলেন, মায়ের কেন্দ্রেই রাহুলকে চেনেন না বাসিন্দারা? অখিলেশ কি বোঝাতে চাইলেন, এই রাহুল কী করে এত দর হাঁকছেন উত্তরপ্রদেশে? সপা শিবির অবশ্য এখন এ নিয়ে কোনও আলোচনায় যেতে রাজি নয়।

অখিলেশের উষ্মার আর একটি কারণ, ৩০ জানুয়ারি রাহুল, মমতা, লালু প্রসাদের মতো ধর্মনিরপেক্ষ নেতাদের নিয়ে একটি যৌথ সভা করতে চাইছেন তিনি। কিন্তু রাহুলের তরফে জানিয়ে দেওয়া হয়, তাঁর বদলে গুলাম নবি আজাদ ওই সভায় যাবেন। যা নিয়ে মোদী-বিরোধী শিবিরের অনেকের বক্তব্য, আড়াই বছরের মাথায় লোকসভা নির্বাচনের কথা ভেবে বৃহত্তর মঞ্চ গড়া প্রয়োজন। সেখানে এই ‘ইগো’ রাখা ঠিক নয়। রাহুল-ঘনিষ্ঠেরা অবশ্য ‘ইগো’ সংক্রান্ত অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন।

এ দিন জোট হওয়ায় স্বস্তিতে বিজেপি-বিরোধী শিবিরের নেতারা। এ দিন জোট ঘোষণার পরে মমতা জোটকে ‘পূর্ণ সমর্থন’ জানিয়ে টুইট করেন। খুশি লালু প্রসাদও। বিজেপি-বিরোধী এই মহাজোট যাতে ভেঙে না যায়, সে জন্য গত কাল থেকে তিনি দফায় দফায় কথা বলেছেন সপা-র শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গে। জোট ঘোষণার পর গুলাম নবি আজাদ তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে আসন রফায় ‘গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা’র জন্য প্রিয়ঙ্কা গাঁধীকে ধন্যবাদ জানান। কংগ্রেস সূত্র বলছে, সনিয়া বা প্রিয়ঙ্কা কিছুটা সক্রিয় হলেও আসল কাজের কাজটি করেছেন কিন্তু রাহুলই। প্রিয়ঙ্কা নীরবে রাহুলের সমর্থনে নেমেছিলেন। এবং সবটাই আড়াল থেকে।

সপা সূত্র অবশ্য এখনও জট পুরোপুরি কাটেনি বলে জানিয়েছে। এ দিন লখনউয়ের একটি হোটেলে জোট নিয়ে চূড়ান্ত ঘোষণার সময় প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি রাজ বব্বর বলেন, ‘‘এক সপ্তাহের মধ্যে শাসন-প্রশাসন নিয়ে দুই দলের অভিন্ন কর্মসূচিও ঘোষণা করা হবে।’’ সপা নেতারা বলছেন, রাজ বব্বর একতরফা ভাবে অভিন্ন কর্মসূচির কথা বলে আসলে সরকারে সামিল হওয়ার কথা বলছেন। অথচ এ নিয়ে এখনও কোনও কথাই হয়নি! সপা নেতাদের বক্তব্য, জোট গড়লেও নিজের আসন সংখ্যার জোরে একাই সরকার গড়তে পারেন অখিলেশ। অমেঠী ও রায়বরেলী নিয়ে কংগ্রেসের দাবি অবশ্য শেষ পর্যন্ত মেনেছে সপা। দুই লোকসভা কেন্দ্র মিলিয়ে ১১টি আসনের মধ্যে দু’টি করে মোট চারটি আসন কংগ্রেসকে ছেড়েছে সপা।

এ দিন জোট ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে নিঃশব্দে আর একটি ঘটনা ঘটে গেল। প্রশান্ত কিশোরের সূত্র মেনে ব্রাহ্মণ ভোট টানতে শীলা দীক্ষিতকে মুখ্যমন্ত্রী পদের প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করেছিল রাহুল গাঁধীর দল। কংগ্রেস অখিলেশের নেতৃত্ব মেনে নেওয়ায় আর সে পদের দাবিদার রইলেন না দিল্লির প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী। শীলা নিজে জানিয়েছেন, দল যে দায়িত্ব দেবে, তিনি তা-ই পালন করতে রাজি।

Akhilesh Yadav Samajwadi Party Alliance congress Assembly elections Uttar Pradesh
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy