Advertisement
E-Paper

শিলচর মাতল কৃষ্ণচূড়া উৎসবে

কৃষ্ণচূড়া উৎসবে মেতে উঠলেন শিলচরের মহিলা সাহিত্যিকরা। গত কাল সংবর্ধনা, কবি-কথা ও পুরনো দিনের গানে উতসব পালন করে বরাক উপত্যকা নন্দিনী সাহিত্য ও পাঠচক্র। আজ বরাক নন্দিনী সাহিত্যচর্চা কেন্দ্র নিজেদের অনুষ্ঠান সাজায় আলোচনা, কবিতা ও গল্পপাঠ এবং সাস্কৃতিক অনুষ্ঠানে।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৩ মে ২০১৬ ০৩:২৬

কৃষ্ণচূড়া উৎসবে মেতে উঠলেন শিলচরের মহিলা সাহিত্যিকরা। গত কাল সংবর্ধনা, কবি-কথা ও পুরনো দিনের গানে উতসব পালন করে বরাক উপত্যকা নন্দিনী সাহিত্য ও পাঠচক্র। আজ বরাক নন্দিনী সাহিত্যচর্চা কেন্দ্র নিজেদের অনুষ্ঠান সাজায় আলোচনা, কবিতা ও গল্পপাঠ এবং সাস্কৃতিক অনুষ্ঠানে।

দুই সংগঠনেরই মূল সুর, উদ্দেশ্য, কাজের ধরন এক। তাই একই কথা অনুরণিত হয় দু’দিনের বার্ষিক অনুষ্ঠানে। গত কাল নন্দিনী সাহিত্য ও পাঠচক্রের সাধারণ সম্পাদক জয়শ্রী কর তাঁর লিখিত ভাষণে জানান— ক্রমশ সাহিত্যের জগতে নিজেদের ভিত শক্ত করার কাজ করে চলেছেন তাঁরা। আজ বরাক নন্দিনীর সম্পাদক শিপ্রা দে জানালেন, মহিলাদের নিয়মিত লেখালেখি এবং নবীনদের লেখায় উৎসাহিত করতেই সঙ্ঘবদ্ধ হয়েছেন তাঁরা। দুই সংস্থার অধিবেশনেই নিজেদের মুখপত্র প্রকাশিত হয়, গুণীজনদের মানপত্র ও উপহার সামগ্রীতে সংবর্ধনা জানানো হয়। গত কাল সংবর্ধিত হন তিন কবি পীষূষ রাউত, এন বিদ্যাসাগর সিংহ ও শেলী দাসচৌধুরী। এ দিন সংবর্ধনা জানানো হয় আসাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের প্রধান বেলা দাস, গুয়াহাটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষিকা বিনীতা দাস ও কাছাড় কলেজের শিক্ষক জয়দীপ বিশ্বাসকে। কবিরা যেমন নিজেদের অনুভূতি ব্যক্ত করেন, স্বরচিত কবিতা পাঠ করেন, তেমনই বেলা-বিনীতা-জয়দীপ নির্ধারিত বিষয়ের উপর বক্তৃতা করেন।

কবি পীযূষ রাউত তাঁর দীর্ঘদিনের আক্ষেপ প্রকাশ ও পূরণ করেন। তিনি জানান, তাঁর জীবনের শুরুর দিনগুলি কাটে শিলচরে, পরে দীর্ঘদিন ছিলেন ত্রিপুরায়। এখন আবার এ শহরে পাকাপাকি ভাবে রয়েছেন। তাও কম দিন হয়নি। কিন্তু এখনও এখানে তিনি কবির স্বীকৃতি পাননি। কবি হিসেবে তিনি পশ্চিমবঙ্গে প্রথম সম্মানিত হন। পরে ত্রিপুরায় প্রচুর সম্মান পেয়েছেন। শিলচরে প্রথম তাঁকে এই স্বীকৃতি দিল নন্দিনী সাহিত্য ও পাঠচক্র।

অকাদেমি পুরস্কার জয়ী কাছাড়ের মণিপুরি কবি এন বিদ্যাসাগর সিংহ প্রথমে মাতৃভাষায় রচিত তাঁর কটি কবিতা পাঠ করেন। পরে সেগুলির ইংরেজি অনুবাদও শোনান। শেলী দাসচৌধুরীও তাঁর স্বরচিত কবিতায় হলভর্তি শ্রোতাকে আবিষ্ট করে রাখেন। এই অনুষ্ঠানে নন্দিনীর পারিবারিক সম্মান প্রদান করা হয় হাইলাকান্দির অরুন্ধতী দেব ও করিমগঞ্জের প্রতিমা শুক্লবৈদ্যকে। পরে পুরনো দিনের গানে সবাইকে মন্ত্রমুগ্ধ করে রাখেন করিমগঞ্জের শিল্পী কবিতা রায়। বক্তব্য রাখেন সভাপতি চন্দ্রিমা দত্ত, দেবযানী ভট্টাচার্য এবং সুমিতা ঘোষও।

দু’দিনের অনুষ্ঠানেই স্মরণ করা হয় ১৯৬১-র ভাষাসেনানী প্রয়াত পরিতোষ পালচৌধুরীকে। শুরুতে উপত্যকার মহিলা সাহিত্যিকদের তিনিই সংগঠিত করেছিলেন। তখন অবশ্য নন্দিনীদের দুই সংগঠন অভিন্ন ছিল। নন্দিনী সাহিত্য ও পাঠচক্র তাঁর নামে মঞ্চ উৎসর্গ করেছিল। বরাক নন্দিনীর উপ-সভাপতি অঞ্জু এন্দও পরিতোষবাবুর অবদান শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেন। তাঁরা বিশেষভাবে শ্রদ্ধা জানান চার বছর আগে প্রয়াত প্রথম সভাপতি অনুরূপা বিশ্বাসকে।

এ দিন কবিতা পড়ে সাহিত্যবাসরের উদ্বোধন করেন কবি-আবৃত্তিকার পূজন ঘোষ। তিনি বলেন, ‘‘বরাকের মহিলারা ভাষাশহিদ কমলা ভট্টাচার্যের উত্তরাধিকারী। তাই তাঁরা শুধু নন্দিনীই নন, বীরাঙ্গনাও।’’

নির্ধারিত বক্তারা নানা উদাহরণ, পরিসংখ্যান দেখিয়ে জানান, উপার্জন করলেই মেয়েরা ভাল থাকবে, তা ঠিক নয়। বেলা দাসের কথায়, ‘‘সমাজ পরিকাঠামোতে নারী-পুরুষ ভিন্নতা রয়েছে। সে জন্য নারীরা আজও পিছিয়ে। পিঠে সন্তান নিয়ে যারা খেতে ফসল ফলান, বা মাটি-পাথর টানেন, তাদের অনেককেই ঘরে মার খেতে হয়। অফিস-কাছারিতে যারা চাকরি করেন, তাঁরাও স্বাধীন ভাবে সেই অর্থ ব্যবহার করতে পারেন না। তিনি বলেন, ‘‘বাবা বা স্বামী যাঁর পিছনে দাঁড়ান, সেই নারীরাই সুস্থ ভাবে বেঁচে থাকতে পারেন। তাই নারী-পুরুষ সমব্যথী হতে হবে।’’

বেলাদেবীর সুর ধরেই জয়দীপ বিশ্বাস শোনান, আফ্রিকান দেশের নারীরা স্ক্যান্ডিনেভিয় মেয়েদের তুলনায় বেশি রোজগেরে। তাই বলে আফ্রিকান নারীদেরই বেশি সুখ-সমৃদ্ধি, তা কিন্তু নয়। এর পরও সমাজের স্বার্থে, দেশের অর্থনীতির স্বার্থে নারীদের রোজগেরে করে তোলা প্রয়োজন। কিন্তু ভারতে রোজগেরে নারীর সংখ্যা ক্রমে কমছে বলে তিনি উদ্বেগ প্রকাশ করেন। তুলনা টেনে জয়দীপবাবু দেখান, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ১৫ বছরের বেশি বয়সের ৮৬ শতাংশ মহিলা কোনও-না-কোনও কাজে নিয়োজিত। দক্ষিণ এশিয়ায় সংখ্যাটি ৩২ শতাংশ। ভারতে মাত্র ২৭ শতাংশ।

তিনি বলেন, ‘‘দেশের আয় যত বাড়ছে, তার সঙ্গে তাল মিলিয়ে রোজগার বাড়ছে না। ফলে পুরুষ কি নারী, কর্মরতদের শতকরা হার কমছে। এর মধ্যেও নারীদের কমছে বেশি হারে।’’ তিনি জানান, ১৯৮৪ থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত ২৫ বছরে দেশে রোজগেরে মহিলা হ্রাস পেয়েছে ২৩.৫ শতাংশ। আবার রোজগার যে-সব ক্ষেত্রে বাড়ছে, সেই পরিষেবা ক্ষেত্রে নারীরা নিরাপদ নন। এতসবের মধ্যেও তাঁর কাছে আশার কথা, সর্বশিক্ষা অভিযান চালু হওয়ার পর নারীশিক্ষার হার বাড়ছে। কমছে মেয়েদের ড্রপআউটের সংখ্যা।

সুচিত্রা ভট্টাচার্যের বিভিন্ন উপন্যাসের কথা টেনে বিনীতা দাস বলেন, ‘‘নারীর মানসমুক্তি না-ঘটলে শুধু অর্থনৈতিক স্বাধীনতায় লাভ হবে না।’’ শিক্ষা, স্বনির্ভরতা ও মানসমুক্তির কথায় গুরুত্ব দেন তিনি।

পরে স্বরচিত কবিতা ও গল্পপাঠের আসরে অংশ নেন সংগঠনের অধিকাংশ সদস্য। ছিলেন আমন্ত্রিত সাহিত্যিকরাও। হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানও।

Krishnachura Festival Silchar
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy