Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪

পাসপোর্ট নিয়েও দ্বন্দ্ব দুই মন্ত্রকে

ক্ষত সামালের সাংবাদিক বৈঠকেই কৌশলে বিদেশমন্ত্রীর সঙ্গে তাঁর বিভাজন স্পষ্ট করেছেন অর্থমন্ত্রী। ললিত মোদীর পাসপোর্ট খারিজ নিয়ে এ বার চাপানউতোর শুরু হয়ে গেল দুই মন্ত্রকের মধ্যেও। ৪২৫ কোটি টাকার দুর্নীতির অভিযোগে ২০১০ সালে আইপিএল-চেয়ারম্যান পদ ছাড়তে হয় ললিত মোদীকে। তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা এক গুচ্ছ আর্থিক কেলেঙ্কারির অভিযোগের তদন্ত শুরু করে ইডি এবং আয়কর দফতর।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৭ জুন ২০১৫ ০৩:১১
Share: Save:

ক্ষত সামালের সাংবাদিক বৈঠকেই কৌশলে বিদেশমন্ত্রীর সঙ্গে তাঁর বিভাজন স্পষ্ট করেছেন অর্থমন্ত্রী। ললিত মোদীর পাসপোর্ট খারিজ নিয়ে এ বার চাপানউতোর শুরু হয়ে গেল দুই মন্ত্রকের মধ্যেও।

৪২৫ কোটি টাকার দুর্নীতির অভিযোগে ২০১০ সালে আইপিএল-চেয়ারম্যান পদ ছাড়তে হয় ললিত মোদীকে। তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা এক গুচ্ছ আর্থিক কেলেঙ্কারির অভিযোগের তদন্ত শুরু করে ইডি এবং আয়কর দফতর। যে অভিযোগের মধ্যে বিদেশি মুদ্রা আইন লঙ্ঘনের ১৬টি মামলা রয়েছে। সে বছরই অক্টোবরে দেশ ছাড়েন ললিত। তাঁর পাসপোর্ট খারিজের আবেদন নিয়ে আদালতের দ্বারস্থ হয় ইডি। দায়রা আদালতের রায়ে খারিজও হয়ে যায় ললিতের পাসপোর্ট। ললিত পাল্টা মামলা করেন দিল্লি হাইকোর্টে। ২০১৪-র অগস্টে হাইকোর্টের নির্দেশে পাসপোর্ট ফেরতও পেয়ে যান তিনি। উচ্চ আদালতে ললিতের হয়ে মামলা লড়েছিলেন সুষমার স্বামী স্বরাজ কৌশল ও মেয়ে বাঁসুরী।

বিরোধীদের প্রশ্ন, তার পর প্রায় এক বছর কেটে গেলেও দিল্লি হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করা হল না কেন? কংগ্রেসের দাবি, তাদের আমলে অর্থমন্ত্রী পি চিদম্বরম ব্রিটিশ সরকারকে চিঠি লিখে জানতে চেয়েছিলেন, যে ব্যক্তির পাসপোর্ট বাতিল হয়ে গিয়েছে, তিনি কী করে ব্রিটেনে রয়েছেন? এ নিয়ে ব্রিটিশ সরকারের সঙ্গে ভারত সরকারের দীর্ঘ চিঠি চালাচালিও হয়েছিল। এই তথ্য সামনে এনে কংগ্রেস দাবি করছে, ললিত মোদীকে দেশে ফেরানোর প্রবল চেষ্টা তারা করেছিল। কিন্তু এনডিএ ক্ষমতায় আসতেই ছবিটা পাল্টে যায়। কংগ্রেসের অভিযোগ, সুষমা স্বরাজ ট্র্যাভেল ডকুমেন্ট পাওয়ার ব্যাপারে ললিত মোদীর দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন, তেমনই বিজেপি সরকারও তাঁর পাসপোর্ট বাতিল নিয়ে উচ্চ আদালতে আবেদন না করে তাঁকে সাহায্য করেছেন।

কেন্দ্র পাসপোর্ট নিয়ে সুপ্রিম কোর্টে গেল না কেন? সাংবাদিক বৈঠকে এই প্রশ্নের জবাবেও বিদেশ মন্ত্রকের ঘাড়েই দায় চাপিয়েছেন জেটলি। তিনি বলেন, ‘‘এটা পাসপোর্ট কর্তৃপক্ষের বিষয়। তারাই এর দায়িত্বে রয়েছে।’’ পাসপোর্ট কর্তৃপক্ষ বিদেশ মন্ত্রকের অধীনে। ফলে পরোক্ষে সুষমা স্বরাজকেই তিনি দায়ী করলেন বলে অনেকের মত।

বিজেপির অনেক শীর্ষস্থানীয় মন্ত্রীও আজ ঘরোয়া আলোচনায় বোঝানোর চেষ্টা করেছেন, কী ভাবে ললিতের বিরুদ্ধে যাবতীয় অভিযোগ গোপন রেখে তাঁকে সাহায্য করেছেন সুষমা। ললিত দেশ ছাড়ার পরে ইডির অনুরোধে তাঁর বিরুদ্ধে লাইট ব্লু কর্নার নোটিস জারি করেছিল ডিরেক্টরেট অব রেভিনিউ ইন্টেলিজেন্স (ডিআরআই)। এই নোটিসের সঙ্গে ইন্টারপোলের ব্লু কর্নার নোটিসের কোনও সম্পর্ক নেই। এই নোটিসে কাউকে গ্রেফতার করার প্রশ্নও নেই। শুধু যাঁর বিরুদ্ধে লাইট ব্লু কর্নার নোটিস জারি হয়েছে, তিনি তাঁর যাবতীয় গতিবিধি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানাতে বাধ্য। ইন্টারপোল ব্লু কর্নার নোটিস জারি করলে ওই ব্যক্তিকে বিদেশে বিমানবন্দরে দেখা গেলে আটক করার কথা। কিন্তু বিজেপির ওই মন্ত্রীদের বক্তব্য, ইন্টারপোলের নোটিস না থাকলেও ডিআরআই যে নোটিস জারি করেছে, সেটা বিদেশমন্ত্রী হিসেবে সুষমা স্বরাজের জানা থাকা উচিত ছিল। এবং সে ক্ষেত্রে তাঁর ললিতকে সাহায্য করা কোনও মতেই উচিত হয়নি।

মন্ত্রীর নির্দেশেই কি বিদেশ মন্ত্রকের কর্তারা ললিতের পাসপোর্ট বাতিল নিয়ে শীর্ষ আদালতের দ্বারস্থ হননি? বিরোধীরা এমন অভিযোগ করলেও মন্ত্রক সূত্রে অবশ্য অর্থ মন্ত্রকের ঘাড়েই দায় চাপানো হচ্ছে। বিদেশ মন্ত্রকের কর্তাদের বক্তব্য, ‘‘ললিত মোদীর বিরুদ্ধে মামলা করছে ইডি। ফলে দিল্লি হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আর্জি জানানোর কথা অর্থ মন্ত্রকেরই। এই মামলায় বিদেশ মন্ত্রকের যোগসূত্র একেবারেই টেকনিক্যাল। যে হেতু পাসপোর্ট কর্তৃপক্ষ বিদেশ মন্ত্রকের অধীনে তাই। ’’

এই যুক্তি অবশ্য মানছেন না অর্থ মন্ত্রকের কর্তারা। তাঁদের পাল্টা বক্তব্য, ‘‘বিদেশ মন্ত্রক এই মামলার একটি পক্ষ। তাই পাসপোর্ট সংক্রান্ত কোনও রায়ের ক্ষেত্রে পরবর্তী পদক্ষেপ করার দায়িত্ব তাদেরই।’’ আইনজীবীদেরও একাংশের মতে, ইডি নয়, পাসপোর্ট খারিজের আর্জি নিয়ে আদালতের দ্বারস্থ হওয়ার কথা বিদেশ মন্ত্রকেরই।

ফলে সরকারি ভাবে জেটলি তাঁর পাশে দাঁড়ালেও দিনের শেষে দল ও সরকারে সুষমা স্বরাজ কোণঠাসাই। সেই সুযোগ নিয়ে বিরোধীরাও আজ ফের বিঁধেছেন তাঁকে। কংগ্রেস নেতা আনন্দ শর্মার কটাক্ষ, ‘‘তর্কের খাতিরে যদি ধরেও নিই যে, বিদেশমন্ত্রী মানবিকতার খাতিরে ললিতকে সাহায্য করেছিলেন, তা হলেও তাঁকে লন্ডনের বাইরে যাওয়ার ছাড়পত্র দেওয়ার কথা ছিল ভারতীয় পাসপোর্ট কর্তৃপক্ষের। তা না করে বিদেশমন্ত্রী কী ভাবে অন্য রাষ্ট্রকে ট্র্যাভেল ডকুমেন্ট দেওয়ার জন্য অনুরোধ করতে পারেন!’’ তৎকালীন বিদেশসচিব সুজাতা সিংহও বিষয়টি জানতেন না বলে দাবি করেছেন আনন্দ।

কংগ্রেসের অভিযোগ, ললিত মোদীর স্ত্রীর কোনও বড় অস্ত্রোপচারই হয়নি। ভিসা পাওয়ার চার দিনের মধ্যেই সপরিবার ললিতকে স্পেনের ইবিজা রিসর্টে দেখা গিয়েছে। আদতে ধাপে ধাপে ললিত মোদীকে সাহায্য করেছে বিজেপি। আর এখন মানবিকতার কুম্ভীরাশ্রু বইয়ে পার পেতে চাইছেন বিদেশমন্ত্রী।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE