দিল্লির সেন্ট স্টিফেন্স কলেজে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তৃতা বাতিল হয়ে গেল। আগামী ১ অগস্ট কলেজের ছাত্রছাত্রীদের দু’টি সংগঠন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর বক্তৃতার আয়োজন করেছিল। বিষয়বস্তু ছিল, ভারত নামক ভাবনা। নেহরু-গাঁধীর ভারতই যে প্রকৃত ভারত, সে বিষয়েই বলার কথা ছিল মুখ্যমন্ত্রীর। কিন্তু আয়োজকদের তরফে মুখ্যমন্ত্রীকে ওই অনুষ্ঠান বাতিলের কথা জানিয়ে দুঃখ প্রকাশ করা হয়েছে।
এই ঘটনায় বিজেপি-আরএসএসের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের অভিযোগ তুলেছেন তৃণমূল নেতৃত্ব। তৃণমূলের এক সাংসদ বলেন, ‘‘শিকাগো, চিন সফরের পর এ বার সেন্ট স্টিফেন্স! মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিজেপি-আরএসএস-এর ঘুম কেড়ে নিয়েছেন। কিন্তু ওরা যত চেষ্টাই করুক, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে দমিয়ে রাখা যাবে না। বাংলার মুখ্যমন্ত্রীর দিল্লির সফর বহাল থাকছে।’’
তৃণমূল নেতাদের ইঙ্গিত, বিজেপিই কলেজ কর্তৃপক্ষের উপর চাপ তৈরি করে মুখ্যমন্ত্রীর অনুষ্ঠান বাতিল করেছে। কিন্তু সেন্ট স্টিফেন্স কলেজ সূত্রের বক্তব্য, এমন কোনও চাপ বা তার সামনে মাথা নোয়ানোর প্রশ্ন নেই। বিজেপি নেতাদের যুক্তি, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দিল্লিতে এসে জাতীয় রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিতে চাইলে কংগ্রেসের দুশ্চিন্তা হওয়ার কথা। বিজেপির নয়। তা হলে সেন্ট স্টিফেন্সের অনুষ্ঠান বাতিল হল কেন? ধোঁয়াশা থেকেই যাচ্ছে।
অনুষ্ঠানের আয়োজক ছিল সেন্ট স্টিফেন্সের প্ল্যানিং ফোরাম ও বেঙ্গলি লিটারারি সোসাইটি নামে দু’টি সংগঠন। তাদের কোনও সদস্যই মুখ খোলেননি। এক সদস্যের দাবি, ‘‘আমাদের মুখ খুলতে বারণ করা হয়েছে। কলকাতা থেকে দিল্লিতে পড়তে এসে এই রাজনীতিতে জড়াতে চাইছি না।’’ কলেজের মুখপাত্র বলেন, ‘‘এ বিষয়ে কিছুই জানি না। খোঁজ নিয়ে বলতে হবে।’’
কলেজের প্রোটোকল অনুযায়ী, কোনও গণ্যমান্য ব্যক্তিকে আমন্ত্রণ জানাতে হলে আগে অধ্যক্ষকে জানাতে হয়। অনুমতি চাইতে হয়। এ ক্ষেত্রে অনুষ্ঠানের খবর অধ্যক্ষকে জানানোর আগেই সংবাদমাধ্যমে প্রকাশ হয়ে যায় বলে সূত্রের খবর। পরে অধ্যক্ষ জন ভার্গিসের কাছে অনুমতি চাইতে গেলে তা মেলেনি। কেন? সদুত্তর নেই।
এর আগে মুখ্যমন্ত্রীর বেজিং সফর শেষ মুহূর্তে বাতিল হয়েছিল। সে বার প্রধানমন্ত্রীর দফতর তথা বিদেশ মন্ত্রকের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল। অগস্টে স্বামী বিবেকানন্দের বক্তৃতার ১২৫ বছর পূর্তি অনুষ্ঠানে মমতাকে আমন্ত্রণ জানিয়েও পরে অনুষ্ঠান বাতিলের কথা জানায় শিকাগোর বিবেকানন্দ বেদান্ত সোসাইটি। তবে সেন্ট স্টিফেন্সের অনুষ্ঠান না হলেও মুখ্যমন্ত্রী ৩১ জুলাই দুপুরে ‘ক্যাথলিক বিশপস কনফারেন্স অব ইন্ডিয়া’-র সম্মেলনে প্রধান অতিথি হিসেবে যোগ দেবেন। ৩১ জুলাই দিল্লি পৌঁছচ্ছেন তিনি। সংসদে এসেও একাধিক নেতানেত্রীর সঙ্গে দেখা করার পরিকল্পনা রয়েছে মমতার।