ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তের প্রকৃত অবস্থা সরেজমিনে খতিয়ে দেখতে এক সদস্যের একটি কমিটি গড়ে দিল সুপ্রিম কোর্ট। সেই সঙ্গে গৌহাটি হাইকোর্ট ও রাজ্য সরকারকে বিদেশি চিহ্নিতকরণ ট্রাইবুনালগুলিতে আগামী দেড় মাসের মধ্যে বিচারক নিয়োগ করারও নির্দেশ দিলেন সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি রঞ্জন গগৈ ও রোহিংটন ফলির ডিভিশন বেঞ্চ।
জাতীয় নাগরিক পঞ্জি চূড়ান্ত করা ও অনুপ্রবেশ সমস্যা নিয়ে অসম পাবলিক ওয়ার্কস সুপ্রিম কোর্টে ২০০৯ সালে একটি মামলা দায়ের করে। সেই মামলার জেরে গত ১৭ ডিসেম্বর সীমান্ত সুরক্ষা, বাংলাদেশি চিহ্নিতকরণ ও অনুপ্রবেশ বন্ধ করা নিয়ে রাজ্য ও কেন্দ্রকে কিছু নির্দেশ দিয়েছিল সুপ্রিম কোর্ট। গত কাল সেই মামলার শুনানি ছিল। সেখানে সীমান্ত প্রসঙ্গে রাজ্য সরকার ও কেন্দ্র যে রিপোর্ট জমা দিয়েছে তাতে আদৌ সন্তুষ্ট হতে পারেননি বিচারপতিরা। দুই সরকারেরই সমালোচনা করে বিচারপতিরা বলেন: এক দিকে নাগরিক পঞ্জি উন্নয়নের কাজ শুরু হচ্ছে, অন্য দিকে অনুপ্রবেশ সমস্যা এখনও ভয়াবহ ভাবে চলছে। এখন সীমান্ত ও অনুপ্রবেশ নিয়ে এমন অবহেলা দেখাবার সময় নেই। কেন্দ্র ও রাজ্যের রিপোর্টে মিল না থাকায় সীমান্তের প্রকৃত অবস্থা জানতে সুপ্রিম কোর্টের প্রবীণ আইনজীবী উপমন্যু হাজরিকার নেতৃত্বে সুপ্রিম কোর্ট একটি কমিটি গড়ে দিয়েছে। সীমান্ত সুরক্ষায় সুপ্রিম কোর্ট যা নির্দেশ দিয়েছিল সেগুলি কতদূর পালন করা হয়েছে তা সরেজমিনে দেখে হাজরিকা ৩০ জুনের মধ্যে রিপোর্ট দেবেন।রাজ্য সরকারের রিপোর্ট অনুযায়ী, রাজ্যে বিদেশি চিহ্নিতকরণের জন্য থাকা ৩৬টি ফরেনার্স ট্রাইবুনালে বিচারকের আসন খালি রয়েছে। পাশাপাশি, এখনও আরও ৬৪টি নতুন ট্রাইবুনাল গড়ার কথা। নতুন ট্রাইবুনাল গড়া ও বিচারক নিয়োগে ঢিলেমি করায় রাজ্য সরকার ও গৌহাটি হাইকোর্টের সমালোচনা করে সুপ্রিম কোর্ট নির্দেশ দিয়েছে, আগামী ৪৫ দিনের মধ্যে ৩৬টি ট্রাইবুনালে বিচারক নিয়োগ ও নতুন ট্রাইবুনাল গড়তে হবে।
রাজ্যে নাগরিক পঞ্জি উন্নয়নের জন্য মে মাসের শেষ সপ্তাহে এনআরসি সেবাকেন্দ্রগুলি থেকে বাড়ি বাড়ি ফর্ম বিলি শুরু করা হবে। পরিবার পিছু একটি করে ফর্ম দেওয়া হবে। মার্চ থেকে ফর্ম বিলি শুরু হওয়ার কথা থাকলেও রেজিস্ট্রার জেনারেলের দফতর থেকে সবুজ সংকেত আসতে বিলম্ব হওয়ায় ফর্ম বিলির কাজ দু’মাস পিছিয়ে যায়। অনলাইনেও ফর্ম পাওয়া যাচ্ছে। ফর্ম মিলবে অসমীয়া, বাংলা ও ইংরাজি ভাষায়। আবেদন জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ৩১ জুলাই। ৩১ অক্টোবর নাগরিক পঞ্জির প্রথম খসড়া প্রকাশিত হবে। নভেম্বর থেকে ২০১৬ সালের জানুয়ারি অবধি এই খসড়ার ভিত্তিতে অভিযোগ গ্রহণ করা হবে। চূড়ান্ত নাগরিক পঞ্জি প্রকাশ করার সম্ভাব্য তারিখ ২০১৬ সালের ৩১ জানুয়ারি। ১৯৫১ সালে আগের নাগরিক পঞ্জিটি তৈরি হয়েছিল। এ বার ১৯৭১ সালের ২৪ মার্চকে নাগরিক পঞ্জির ভিত্তি হিসেবে ধরা হয়েছে। তবে তা নিয়েও বিস্তর আপত্তি রয়েছে। মামলাও চলছে।
অসম পাবলিক ওয়ার্কস সুপ্রিম কোর্টে জানিয়েছে, রাজ্যে নাগরিক পঞ্জি উন্নয়নেরক প্রক্রিয়া আদপেই ত্রুটিমুক্ত নয়। তারা এও দাবি করেছে, কেবল মাত্র অসমে মেলে এমন পদবী থাকা লোকেদের ক্ষেত্রে নাগরিক পঞ্জিতে নাম এমনিতেই অন্তর্ভুক্ত করা হোক। রাজ্যের বিভিন্ন ভাষার সাহিত্য সভাগুলিও একই দাবি জানিয়েছে। রাজ্য সরকার সুপ্রিম কোর্টে জানিয়েছে, ১৯৫১ সালের নাগরিক পঞ্জি ও ১৯৭১ সালের ভোটার তালিকার ভিত্তিতে নাগরিক পঞ্জি তৈরি করা হচ্ছে। এ নিয়ে ১৪ জুলাই ফের শুনানির নির্দেশ দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। রাজ্যে নাগরিক পঞ্জি উন্নয়নের ভারপ্রাপ্ত সচিব প্রতীক হাজেলাকেও সেদিন হাজির হতে বলা হয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy