Advertisement
E-Paper

স্লগ ওভারে ছক্কা হাঁকানোর মতো অবসরের মুখে বেশি করে নির্দেশ! ‘বিচারকদের প্রবণতা’য় আপত্তি সুপ্রিম কোর্টের

মধ্যপ্রদেশের এক বিচারকের কিছু নির্দেশ নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। ওই ঘটনার জেরে তাঁকে দায়িত্ব থেকে সরানোর সিদ্ধান্ত নেয় মধ্যপ্রদেশ হাই কোর্টের ফুল বেঞ্চ। ওই সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে যান বিচারক।

আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক

শেষ আপডেট: ১৮ ডিসেম্বর ২০২৫ ১৪:৪০
অবসরের মুখে বিচারকদের বেশি করে নির্দেশ দেওয়া নিয়ে মন্তব্য সুপ্রিম কোর্টের।

অবসরের মুখে বিচারকদের বেশি করে নির্দেশ দেওয়া নিয়ে মন্তব্য সুপ্রিম কোর্টের। — প্রতীকী চিত্র।

অবসরের মুখে বিচারকদের পর পর অনেকগুলি নির্দেশ দেওয়ার প্রবণতায় আপত্তি জানাল সুপ্রিম কোর্ট। দেশের প্রধান বিচারপতি সূর্য কান্তের বেঞ্চের মন্তব্য, শেষ ওভারগুলিতে ব্যাটারেরা যে ভাবে ছয় মারেন, এই প্রবণতাও সেই রকমই।

মধ্যপ্রদেশের এক নিম্ন আদালতের বিচারকের আবেদনের শুনানি চলছিল সুপ্রিম কোর্টে প্রধান বিচারপতির বেঞ্চে। ওই বিচারক অবসর নেওয়ার ১০ দিন আগে তাঁকে দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেয় মধ্যপ্রদেশ হাই কোর্ট। ওই বিচারকের কিছু নির্দেশ ঘিরে প্রশ্ন ওঠায় একটি ফুল কোর্ট বৈঠকে তাঁকে দায়িত্ব থেকে সরানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছিল হাই কোর্ট। ওই সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হন বিচারক।

সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতির সঙ্গে এই বেঞ্চে ছিলেন বিচারপতি জয়মাল্য বাগচী এবং বিচারপতি বিপুল এম পঞ্চোলি। তিন বিচারপতির ওই বেঞ্চের পর্যবেক্ষণ, “আবেদনকারী অবসরের ঠিক আগে ছক্কা মারতে শুরু করেছেন। এটি একটি দুর্ভাগ্যজনক প্রবণতা। আমরা এ বিষয়ে বিস্তারিত বলতে চাই না।” প্রধান বিচারপতি কান্তও বলেন, “অবসরের আগে বিচারকদের বেশি করে নির্দেশ দেওয়ার একটি প্রবণতা ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে।”

গত ৩০ নভেম্বর মধ্যপ্রদেশের ওই বিচারকের অবসর নেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু দু’টি নির্দেশ নিয়ে প্রশ্ন ওঠায় অবসরের আগেই গত ১৯ নভেম্বর তাঁকে দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়। তাঁর হয়ে আইনজীবী বিপিন সাঙ্ঘি সুপ্রিম কোর্টে সওয়াল করেন। আইনজীবী জানান, তাঁর (ওই বিচারকের) কর্মক্ষেত্রে খুব ভাল রেকর্ড রয়েছে। কর্মক্ষেত্রের বার্ষিক রিপোর্টেও তিনি ধারাবাহিক ভাবে ভাল রেটিং পেয়েছেন বলে সওয়াল করেন আইনজীবী। হাই কোর্টের সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রশ্ন তুলে আইনজীবীর বক্তব্য, কোনও বিচার বিভাগীয় আধিকারিকের বিরুদ্ধে শুধুমাত্র তাঁর নির্দেশের জন্য এমন পদক্ষেপ করা যায় না।

আবেদনকারীর আইনজীবীর প্রশ্ন, “যে নির্দেশগুলিকে উচ্চতর আদালতে চ্যালেঞ্জ করা যায় এবং তা সংশোধন হওয়ার সুযোগ থাকে, এমন নির্দেশের জন্য কী ভাবে একজন আধিকারিককে দায়িত্ব থেকে সরানো যেতে পারে?” এ ক্ষেত্রে সুপ্রিম কোর্ট নীতিগত ভাবে একমত হয়। আদালত জানায়, শুধুমাত্র ভুল নির্দেশের জন্য কোনও বিচারবিভাগীয় আধিকারিকের বিরুদ্ধে এমন পদক্ষেপ করা যায় না। তবে একই সঙ্গে বিচারের ত্রুটি এবং অসদাচরণের মধ্যে যে ফারাক থাকে, তা-ও বুঝিয়ে দেয় সুপ্রিম কোর্ট।

প্রধান বিচারপতির বেঞ্চে মন্তব্য, এর জন্য দায়িত্ব থেকে সরানো যায় না। কিন্তু নির্দেশগুলি সুস্পষ্ট ভাবে কোনও অসৎ উদ্দেশপ্রণোদিত কি না, তা কী ভাবে বোঝা যাবে— সেই নিয়েও প্রশ্ন তোলেন তিনি। সুপ্রিম কোর্ট এ-ও জানায়, বিচারবিভাগীয় আধিকারিকদের অবসরের বয়স ৬০ থেকে বাড়িয়ে ৬১ বছর করার জন্য গত ২০ নভেম্বর মধ্যপ্রদেশ সরকারকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। ফলে ওই বিচারকের অবসরের সময় পরিবর্তন হয়ে ২০২৬ সালের ৩০ নভেম্বর হচ্ছে। বিতর্কিত নির্দেশগুলি দেওয়ার সময়ে বিচারক যে অবসরের বয়স বাড়ানোর বিষয়ে অবগত ছিলেন না, তা-ও উল্লেখ করেন প্রধান বিচারপতি কান্ত।

তবে এই মামলা সুপ্রিম কোর্ট শুনতে চায়নি। ওই সিদ্ধান্তে আপত্তি থাকলে হাই কোর্টেই আবেদন জানানোর পরামর্শ দিয়েছে প্রধান বিচারপতির বেঞ্চ। হাই কোর্টকে আগামী চার সপ্তাহের মধ্যে বিষয়টি বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে শীর্ষ আদালত।

Supreme Court
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy