Advertisement
E-Paper

‘আম্মা’ আর নেই, বিলাপ শুরু তামিলনাড়ু জুড়ে, সঙ্কটে দল, সরকারও

প্রয়াত তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী তথা এআইএডিএমকে সুপ্রিমো জয়রাম জয়ললিতা। চেন্নাইয়ের অ্যাপোলো হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি আজ শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন।

সংবাদ সংস্থা

শেষ আপডেট: ০৬ ডিসেম্বর ২০১৬ ০০:২৪

প্রয়াত তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী তথা এআইএডিএমকে সুপ্রিমো জয়রাম জয়ললিতা। চেন্নাইয়ের অ্যাপোলো হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি আজ শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন।

গত ৭৪ দিন ধরে হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন জয়া। তাঁর অসুস্থতা ঠিক কী ধরনের এবং কতটা, খুব স্পষ্ট করে তা জানানো হয়নি। দল এবং রাজ্য সরকারের তরফে বার বার দাবি করা হচ্ছিল, মুখ্যমন্ত্রী সুস্থ হয়ে উঠছেন। গতকালই এআইএডিএমকে নেতৃত্ব জানিয়েছিল ‘আম্মা’ সম্পূর্ণ সেরে উঠেছেন, শীঘ্রই হাসপাতাল থেকে বাড়ি ফিরবেন। এই ঘোষণার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই অ্যাপোলো হাসপাতাল জানায়, বড় ধরনের হার্ট অ্যাটাক হয়েছে মুখ্যমন্ত্রীর, তাঁকে জীবনদায়ী ব্যবস্থায় রাখা হয়েছে। কিন্তু জীবনে আর ফিরতে পারলেন না ‘আম্মা’। সোমবার রাত সাড়ে ১১টায় অ্যাপোলো হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়ে দিল, ‘আম্মা’ আর নেই।

রবিবার সন্ধ্যায় বড়সড় হার্ট অ্যাটাকের পর থেকেই জয়ললিতার শারীরিক অবস্থা অত্যন্ত সঙ্কটজনক ছিল। ফলে তা নিয়ে মাঝেমধ্যেই গুজব ছড়াচ্ছিল। সোমবার বিকেলে দু’টি তামিল টেলিভিশন চ্যানেলে সম্প্রচারিত খবর সেই গুজবের আগুনে ঘি ঢালে। জয়ললিতা আর নেই বলে তখনই দাবি করেছিল চ্যানেল দু’টি। তবে সন্ধ্যা ৬টা নাগাদ প্রেস বিজ্ঞপ্তি জারি করে অ্যাপোলো কর্তৃপক্ষ তখন জানিয়ে দেয়, সে খবর ঠিক নয়।

চেন্নাইতে এআইএডিএমকে সদর দফতরেও বিকেলে হঠাৎ দলীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখা হয়েছিল। সেই ছবিও গুজব ছড়ানোর অন্যতম কারণ হয়ে ওঠে। অ্যাপোলো হাসপাতালের বাইরে সমবেত জয়ার হাজার হাজার অনুগামী অস্থির হয়ে ওঠেন। পুলিশের সঙ্গে তাঁদের খণ্ডযুদ্ধ শুরু হয়ে যায়। হাসপাতাল থেকে বিবৃতি প্রকাশিত হওয়ার পরে পরিস্থিতি কিছুটা নিয়ন্ত্রণে আসে। এআইএডিএমকে সদর দফতরেও পতাকা আবার তুলে দেওয়া হয়।

তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী জয়ললিতার শারীরিক অবস্থা ঠিক কেমন? এ নিয়ে সোমবার সকাল থেকেই চূড়ান্ত বিভ্রান্তি ছিল। রবিবার সন্ধ্যায় চেন্নাইয়ের অ্যাপোলো হাসপাতালেই জয়ললিতার বড় ধরনের হার্ট অ্যাটাক হয়েছিল। কিন্তু, তার মাত্র কয়েক ঘণ্টা আগে জয়ার দল এআইএডিএমকে-র তরফে জানানো হয়েছিল, ‘আম্মা’ সম্পূর্ণ সুস্থ, কয়েক দিনের মধ্যেই বাড়ি ফিরবেন। সোমবারও তামিলনাড়ুর শাসক দল জানায়, সকালে জয়ললিতার হার্ট সার্জারি হয়েছে এবং তিনি ভাল আছেন। অ্যাপোলো হাসপাতালের তরফে জানিয়ে দেওয়া হয়েছিল, কোনও অস্ত্রোপচার হয়নি এবং মুখ্যমন্ত্রীর অবস্থা ‘অত্যন্ত সঙ্কটজনক’।


হাসপাতালের পক্ষ থেকে জারি করা প্রেস বিজ্ঞপ্তি

৭৪ দিন ধরে হাসপাতাল-বন্দি ছিলেন জয়ললিতা। তাঁর শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে কোনও স্পষ্ট তথ্য পাওয়া যাচ্ছিল না। মাঝে-মধ্যে শুধু দলের তরফে দাবি করা হচ্ছিল, আম্মা সুস্থ হচ্ছেন, তাঁর শারীরিক অবস্থার উন্নতি হচ্ছে। এর মাঝে তামিলনাড়ুর একটি উপনির্বাচনে এআইএডিএমকে-র প্রার্থীকে মনোনয়ন দেওয়ার জন্য জয়ললিতার সই জরুরি হয়ে পড়েছিল। কিন্তু জয়ার স্বাক্ষর জোগাড় করা যায়নি। এআইএডিএমকে নেতৃত্ব হাসপাতাল থেকে জয়ললিতার টিপসই নিয়ে এসেছিলেন। জানানো হয়েছিল, হাতে সংক্রমণ রয়েছে বলে আম্মা সই করতে পারেননি। সম্প্রতি অবশ্য জয়ার সই করা একটি চিঠি এআইএডিএমকে প্রকাশ্যে আনে। ‘আম্মা’ সুস্থ হয়ে উঠেছেন, এমন বার্তাই তাঁর লক্ষ লক্ষ অনুগামীর মধ্যে চারিয়ে দেওয়ার চেষ্টা হয়। কিন্তু রবিবার সন্ধ্যা থেকে পরিস্থিতি সম্পূর্ণ উল্টো দিকে মোড় নিতে শুরু করে।

সোমবার সকালে বিভ্রান্তি ছড়িয়েছিল জয়ার দল এবং হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বক্তব্যের মধ্যে আকাশ-পাতাল ফারাকের জেরেই। এআইএডিএমকে মুখপাত্র সিআর সরস্বতী জানিয়েছিলেন, সকালেই একটি অস্ত্রোপচার হয়েছে, চিকিত্সকেরা জানিয়েছেন, আম্মা সুস্থ হয়ে যাবেন। তার পর জয়ার দলের আর এক নেতা পি রামচন্দ্রন দাবি করেছিলেন, আম্মার শারীরিক অবস্থার উন্নতি হচ্ছে বলে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন। জয়ার শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে খোঁজ নিতে অ্যাপোলো হাসপাতালে পৌঁছেছিলেন এক কংগ্রেস নেতা। তামিলনাড়ুর মুখ্য সচিব পি মোহন রাও ওই কংগ্রেস নেতাকে নাকি জানান, মুখ্যমন্ত্রী ভাল আছেন। কিন্তু অ্যাপোলো হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এই সব দাবি নস্যাৎ করে দেয়। মেডিক্যাল বুলেটিন প্রকাশ করে হাসপাতালের তরফে জানানো হয়, সোমবার সকালে জয়ললিতার হৃদযন্ত্রে কোনও অস্ত্রোপচার হয়নি। তাঁকে একস্ট্রাকর্পোরিয়াল মেমব্রেন অক্সিজেনেশন বা একমো নামের একটি জীবনদায়ী ব্যবস্থার মধ্যে রাখা হয়েছে। চিকিৎসকরা জানিয়েছিলেন, রবিবার সন্ধ্যায় হার্ট অ্যাটাক হওয়ার পর থেকে মুখ্যমন্ত্রীর অবস্থা এতই সঙ্কটজনক যে এই একমো ব্যবস্থার মাধ্যমে তাঁর হৃদযন্ত্র ও ফুসফুসের স্বাভাবিক ক্রিয়া নিশ্চিত রাখার চেষ্টা করা হচ্ছে। অ্যাপোলো কর্তৃপক্ষের অনুরোদে নয়াদিল্লির এইমস থেকে চার বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের একটি দলকেও চেন্নাই পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু কোনও ব্যবস্থাই কাজে এল না। চিকিৎসকদের আপ্রাণ চেষ্টা ব্যর্থ করে চলে গেলেন জয়রাম জয়ললিতা।

তামিলনাড়ুর রাজনীতিতে ‘পুরুতচি থালাইভি’ বা ‘বিপ্লবী নেত্রী’ নামে পরিচিত ছিলেন অভিনেত্রী থেকে রাজনৈতিক নেত্রী হয়ে ওঠা জয়া। অনুগামীরা ডাকতেন ‘আম্মা’ বলে। আম্মার অনুপস্থিতিতে দল ও সরকার চালানোর জন্য বিকল্প মুখ হয়তো খুঁজে নিতে হচ্ছে। কিন্তু আম্মার কোনও বিকল্প খুঁজে পাওয়া সম্ভব নয়, গোটা এআইএডিএমকে জুড়েই এখন বিলাপ এই সুরে।

আরও পড়ুন:
চেন্নাইয়ের রাস্তায় জনসমুদ্র, হাই-অ্যালার্টে রাজ্য

Jayalalitha Tamilnadu Chief Minister
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy