আগামী মাস থেকে চা বাগান শ্রমিকদের বেতন ব্যাঙ্কের মাধ্যমে দেওয়া হবে। পুরনো টাকা বাতিলের জেরে হয়রান চা বাগানগুলিতে বেতন প্রক্রিয়া সরল করতে মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সোনোয়ালের অনুরোধে এই উদ্যোগ নিয়েছে ব্যাঙ্কগুলি। সেই সঙ্গে, সব বাগানে এটিএম বসানোর প্রস্তাবও দিয়েছেন সর্বানন্দ। কিন্তু বাগান শ্রমিকদের বক্তব্য, টাকা যখন-তখন তুলতে পারার সুবিধা পেলে তাঁরা টাকা জমাতে পারবেন না!
এ দিন চা বাগান সংগঠন ও ব্যাঙ্কগুলির প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি জানান, বাগান শ্রমিকদের বেতন প্রক্রিয়া নিয়মিত ও সহজ করতে জন-ধন যোজনার অধীনে সকলের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট তৈরি করা দরকার। সে জন্য সহজ প্রক্রিয়ায় সব বাগানকর্মীর ব্যাঙ্ক অ্যাকউন্ট খুলে দেওয়ার জন্য তিনি ব্যাঙ্কগুলিকে আবেদন জানান। সর্বানন্দ বলেন, ‘‘নগদ টাকার অভাবে চা বাগানের উৎপাদনে যাতে সমস্যা না হয় এবং বাগানকর্মীরা নিয়মিত বেতন পান, সে জন্য স্থায়ী ব্যবস্থা করা দরকার। বাগান মালিকদের উচিত যে সব শ্রমিকের ব্যাঙ্ক অ্যাকউন্ট নেই, তাঁদের অ্যাকাউন্ট খোলার জন্য অবিলম্বে ব্যাঙ্কে যোগাযোগ করা।’’ বেতন অ্যাকাউন্টে জমা হলেও বাগানগুলির আশপাশে ব্যাঙ্কের শাখা কম থাকায় শ্রমিকদের সমস্যা হতে পারে। তাই সোনোয়াল সব চা বাগানে এটিএম বসানোর উপরে জোর দেন। সে জন্য সব বাগানে শ্রমিকদের প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করার জন্য ব্যাঙ্কগুলিকে অনুরোধও জানান।
স্টেট ব্যাঙ্কের চিফ জেনারেল ম্যানেজার পিভিএসএনএল মূর্তি জানান, অর্থসঙ্কটের সময় রাজ্য সরকার যে ভাবে চেক ও জেলাশাসকদের মাধ্যমে শ্রমিকদের বেতনের ব্যবস্থা করেছেন সেই মডেল গোটা দেশের চা বাগানের অনুকরণযোগ্য।
মুখ্যমন্ত্রীর ডাকে সাড়া দিয়ে ব্যাঙ্ক প্রতিনিধিরা ঘোষণা করেন, ৫ ডিসেম্বরের মধ্যে রাজ্যের সব বাগানে সব শ্রমিকের অ্যাকাউন্ট খোলার কাজ শেষ করে ফেলা হবে। ১৫ ডিসেম্বরের মধ্যে ব্যাঙ্কে বেতন জমা করার প্রক্রিয়া চালু হয়ে যাবে। যে সব বাগানে শ্রমিক বেশি, সেখানে খোলা হবে এটিএম।
অবশ্য চা শ্রমিক সংগঠনের তরফে বলা হয়, ব্যাঙ্কের মাধ্যমে বেতন ও এটিএম থেকে টাকার তোলার জটিল প্রক্রিয়ার জন্য এখনই প্রস্তুত নন চা বাগানের শ্রমিকরা। অনেকেই স্বল্পশিক্ষিত। তাঁরা প্রথাগত ভাবেই বেতন পেতে ও টাকা জমাতে অভ্যস্ত। ব্যাঙ্কে জমা পড়া বেতনের লেনদেন বুঝে উঠতে পারবেন না তাঁরা। অনেকে আশঙ্কা জানান, এটিএম থেকে যখন-তখন টাকা তোলা গেলে নেশা বা জুয়া খেলায় টাকা খরচ করে ফেলবেন শ্রমিকদের অনেকেই।
এ দিকে, আজ বিধানসভার সর্বদলীয় প্রতিনিধিরা ঢেকিয়াজুলিতে অনেকগুলি চা বাগান ঘুরে দেখে শ্রমিকদের সমস্যার কথা শোনেন। সরেজমিনে দেখেন, বাগান আইনের সুবিধা ও সুপারিশ সব জায়গায় মানা হচ্ছে কি না। মাজেন্দ্র নার্জারির নেতৃত্বে ওই ১০ সদস্যের প্রতিনিধি দলে ছিলেন সুমন হরিপ্রিয়া, নারায়ণ ডেকা, গুরুজ্যোতি দাস, ভবেশ কলিতা, কমল নার্জারি, নিজানুর রহমান, নজরুল হক। সঙ্গে ছিলেন স্থানীয় বিধায়ক অশোককুমার সিঙ্ঘল। ঢেকিয়াজুলিতে ২০টি চা বাগান রয়েছে। সেগুলির অধিকাংশে প্রাখমিক স্কুলের অবস্থা শোচনীয়। পানীয় জল, স্বাস্থ্য পরিকাঠামো নিয়ে বিস্তর অভিযোগ রয়েছে। অনেক বাড়িতেই পাকা শৌচালয় নেই। বিভিন্ন বাগানের তরফে প্রতিনিধিদলকে স্মারকলিপি দেওয়া হয়। এরপর ওই প্রতিনিধিদল বরাক উপত্যকার চা বাগানের অবস্থা দেখতে যাবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy