পাকড়াও: ধরে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে এক বিক্ষোভকারীকে। শুক্রবার শ্রীনগরে। ছবি: এএফপি।
সকালে অনন্তনাগের আরওয়ানি গ্রামে অভিযান চালিয়ে লস্কর-ই-তইবার তরুণ কম্যান্ডার জুনেইদ মাট্টুকে খতম করেছিল যৌথবাহিনী। ঠিক তার কয়েক ঘণ্টা পরে সেই অনন্তনাগেই ইদানিং কালের সব চেয়ে সংগঠিত ও বৃহত্তম জঙ্গি হামলায় প্রাণ হারালেন কাশ্মীর পুলিশের ছয় কর্মী-অফিসার। উন্মত্ত আক্রোশে তাদের মুখ ক্ষত-বিক্ষত করে বিকৃত করে দিয়েছে জঙ্গিরা। সব মিলিয়ে শুক্রবারের কাশ্মীর আরও এক বার বুঝিয়ে দিল, পরিস্থিতি ক্রমেই হাতের বাইরে চলে যাচ্ছে রাজ্য সরকার ও প্রশাসনের।
শুক্রবার অনন্তনাগের সকালটা ছিল নিরাপত্তা বাহিনীর। নিশ্চিত খবর আসে, আরওয়ানি গ্রামে লুকিয়ে রয়েছে লস্কর কম্যান্ডার মাট্টু— যার মাথার দাম ১০ লক্ষ টাকা। সেনা, পুলিশ ও সিআরপি গ্রাম ঘিরে ফেললে শুরু হয় গুলির লড়াই। কোণঠাসা মাট্টু ও তার এক সঙ্গী মারা যায় বলে দাবি বাহিনীর। গুলির লড়াইয়ের মধ্যে পড়ে মারা যান দুই গ্রামবাসীও। কিন্তু এই অভিযানের পর থেকেই দক্ষিণ কাশ্মীরের পরিস্থিতি ঘোরালো হয়ে উঠতে শুরু করে। জায়গায় জায়গায় শুরু হয় বিক্ষোভ, নিরাপত্তা বাহিনীকে লক্ষ করে দেদার পাথর ছোড়া।
কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই পাল্টা আঘাত হানল লস্কর। বিকেলে টহলদারিতে বেরিয়েছিলেন এক স্টেশন হাউজ অফিসার (এসএইচও)-এর নেতৃত্বে পাঁচ পুলিশকর্মী। আচ্ছাবলের মোড়ে তাঁদের গাড়িটি আসতেই এক ঝাঁক জঙ্গি সেটি ঘিরে ধরে গুলি ছুড়তে থাকে। অন্তত ১৫ জন জঙ্গি নিজেদের মধ্যে সমন্বয় রেখে এই হামলা চালিয়েছে বলে জানিয়েছেন পুলিশের ডিজি এস পি বৈদ। মাট্টুকে খতমের বদলা নিতে এই হামলা করা হয়ে থাকতে পারে বলে মন্তব্য করেন তিনি। পরে অবশ্য লস্করের মুখপাত্র আবদুল্লা গজনভি বিবৃতি দিয়ে হামলার দায় স্বীকার করে। জানায়— কম্যান্ডার মাট্টুর হত্যার বদলা নিতেই এই হামলা। কাশ্মীর পুলিশ কাশ্মীরিদের গায়ে হাত তোলা বন্ধ না-করলে আরও এ ধরনের হামলা তারা চালাবে।
আরও পড়ুন:চব্বিশ বছর পরে রায়, মুম্বই হানায় দোষী সালেম
এত দিন সেনাবাহিনী ও আধাসেনাদের জঙ্গিরা নিশানা করলেও পুলিশের ওপর বিশেষ হামলা চালাত না জঙ্গিরা। তার প্রধান কারণ, কাশ্মীর পুলিশের অধিকাংশ কর্মীই কাশ্মীরি। এ দিন কিন্তু তাদেরও রেয়াত করল না লস্কর। এ দিন নিহতরা সকলেই কাশ্মীরের বাসিন্দা। তাঁদের শুধু হত্যা করেই ক্ষান্ত থাকেনি জঙ্গিরা, ‘শিক্ষা দিতে’ বিকৃত করে দেওয়া হয়েছে ছয় পুলিশের মাথা। তাঁদের অস্ত্রশস্ত্রও লুঠ করে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
নিহত এসএইচও ফিরোজ দার পুলওয়ামারা বাসিন্দা। বাকি নিহতদের মধ্যে রয়েছেন জিপের চালক এবং চার পুলিশকর্মী। এই ঘটনার পরেই গোটা এলাকা ঘিরে রেখে তল্লাশি শুরু করেছে যৌথ বাহিনী। ইন্টারনেট সংযোগ ছিন্ন করে দেওয়া হয়েছে। যুদ্ধকালীন তৎপরতায় শুরু হয়েছে জঙ্গি-বিরোধী অভিযান। ডিজিপি বৈদের অবশ্য দাবি, চূড়ান্ত হতাশা থেকেই পুলিশের উপর হামলা চালাচ্ছে জঙ্গিরা। বৃহস্পতিবারই শ্রীনগরের হায়দারপোরায় জঙ্গিদের গুলিতে নিহত হয়েছেন পুলিশকর্মী সাজ্জাদ আহমেদ বাট। গত মঙ্গলবারেও ছ’টি জঙ্গি হামলায় জখম হন ১৩ জন সিআরপি জওয়ান। তাঁদের অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে পালায় জঙ্গিরা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy