প্রতীকী ছবি।
থানা থেকে প্রথম যখন ফোনটা আসে, বুকের ভেতরটা ধড়াস করে উঠেছিল। আত্মীয়স্বজন, পাড়া-প্রতিবেশীদের থেকে কিছুটা আশ্বাস মিলেছিল। পুলিশ যাঁর মৃতদেহ পেয়েছে, সে অন্য কোনও তরুণী। আর সেই আশ্বাসের জেরেই মনের জোরে ছুটে গিয়েছিলেন থানায়। সেই শেষ। তারপর আর শুধু মনেই নয়, সারা শরীরেও বল হারিয়েছেন তিনি। তিনি অর্থাৎ রোহতকে গণধর্ষণ এবং তারপর নৃশংসভাবে খুন করা সেই তরুণীর মা। নিজের চোখে মেয়ের সেই ছিন্নভিন্ন, থ্যাঁতলানো, আধপচা মৃতদেহ দেখার পর তিন দিন কেটে গিয়েছে। কিন্তু থানা থেকে ফিরে সেই যে ঘরের মেঝেয় শুয়ে পড়েছিলেন, আজও একইভাবে সেখানেই পড়ে রয়েছেন। শুধু আউড়ে যাচ্ছেন একটাই শব্দ, নির্ভয়ার দোষী শাস্তি পেল, কিন্তু মেয়েরা কেউই সুরক্ষিত নয়। ওরা কেউই ভয় পায়নি’।
পুলিশ জানিয়েছে, বদলা নিতেই ওই তরুণীকে গণধর্ষণ করে খুন করা হয়েছে। ধৃত দু’জনকে জেরা করেই এই তথ্য পেয়েছে পুলিশ। তারাই পুলিশকে জানায় যে, তরুণীর প্রতিবেশী এক যুবকের দেওয়া বিয়ের প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়েছিলেন। তারপরও চলত তাঁর উপর অত্যাচার। রাস্তাঘাটে তাঁকে লক্ষ্য করে উড়ে আসত নানা কটূক্তি। এর পর তাঁর পরিবারের তরফে থানায় ওই যুবকের নামে অভিযোগ করা হয়েছিল। তরুণীকে গণধর্ষণ করে খুন করে এরই বদলা নিয়েছে ওই যুবক ও তার সঙ্গীরা। অভিযুক্ত ওই প্রতিবেশী যুবককে চিনতে পেরে যাওয়াতেই তাঁকে খুন করে তারা।
আরও পড়ুন: দিল্লিতে ফের গাড়ির ভিতর গণধর্ষণ করে রাস্তায় ছুড়ে ফেলা হল তরুণীকে!
ওই তরুণীর বাবা জানান, তাঁর খুব ইচ্ছা ছিল পড়াশোনার। কিন্তু অর্থের অভাবে দশমের পর আর স্কুলের গণ্ডি মাড়ানো হয়নি। বাধ্য হয়েই ৪০০০ টাকা মাইনের একটি চাকরিতে ঢুকেছিলেন। ওই দিনও বাড়ি থেকে বেরিয়ে সেখানেই কাজে যাচ্ছিলেন ওই তরুণী। সুযোগ বুঝে মাঝ রাস্তা থেকে তাঁকে অপহরণ করে নেয় অভিযুক্তেরা।
ময়নাতদন্তের রিপোর্ট থেকে পুলিশ জেনেছে, ওই দিন অপহরণের পর তাঁকে প্রথমে কিছু ড্রাগ খাওয়ানো হয়েছিল। তারপর তাঁর উপর চালানো হয় সেই অকথ্য অত্যাচার। ৯ মে হরিয়ানার রোহতকের এক পরিত্যক্ত এলাকা থেকে ছিন্নভিন্ন দেহ উদ্ধার করা হয়েছিল ওই তরুণীর। পরিচয় গোপন রাখতে গণধর্ষণের পর ইটের আঘাতে তাঁর মাথা ফাটিয়ে দেওয়া হয়েছিল। তারপর মুখের উপর দিয়ে গাড়ি চালিয়ে থেঁতলে দেওয়া হয়েছিল তাঁর মুখ। যৌনাঙ্গে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছিল ধারালো অস্ত্র। টানা তিন দিন কোনও খোঁজ ছিল না ওই তরুণীর। নিখোঁজ ডায়েরি করেছিল পরিবার। ওই তিনদিন একদিকে যখন তন্ন তন্ন করে খোঁজ করছিল পরিবার, অন্যদিকে তখন তাঁর দেহের বিভিন্ন অংশ থেকে মাংস খুবলে খাচ্ছিল কতগুলো রাস্তার কুকুর। ১২ মে মৃতদেহ উদ্ধারের পর পরিবারের অভিযোগের ভিত্তিতে দু’জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। খোঁজ চলছে গণধর্ষণে জড়িত আরও ছ’জনের। এই ঘটনার কয়েক দিন আগেই নির্ভয়ার দোষীদের জন্য মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখার সাজা শুনিয়েছে শীর্ষ আদালত। টিভিতে সেই খবর শুনে আনন্দে চোখ ঝলসে উঠেছিল রোহতকের এই ‘নির্ভয়ার’ পরিবারের লোকেদেরও। ভেবেছিলেন এর পর হয়তো আর কোনও মেয়েকে এই ভাবে খুন হতে হবে না। কিন্তু জানতেন না, তাঁদের জন্যও এমনই এক দুর্ঘটনা অপেক্ষা করে রয়েছে। মেয়েকে আর ফিরে পাবেন না, আর একটা ‘নির্ভয়া’ যেন না হয় কেউ, ঘরের মেঝেয় শুয়ে এখন শুধু একটাই প্রার্থনা ওই তরুণীর মায়ের।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy