ফাইল চিত্র
এত দিন ছিল ৩০ হাজার ঘরে। আজ সংক্রমণ পৌঁছে গিয়েছে প্রায় ৪০ হাজারের ঘরে। এক দিনে এত সংখ্যক মানুষ সংক্রমিত হওয়া সত্ত্বেও দেশে যে গোষ্ঠী সংক্রমণ শুরু হয়েছে, তা মানতে নারাজ নরেন্দ্র মোদী সরকার। শনিবার ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন (আইএমএ)-এর চেয়ারম্যান (হসপিটাল বোর্ড) ভি কে মোঙ্গা বলেছিলেন, দেশে গোষ্ঠী সংক্রমণ শুরু হয়ে গিয়েছে। আজ ‘চাপ’-এ পড়ে সেই বক্তব্য মোঙ্গার নিজস্ব মত বলে বিবৃতি দিল আইএমএ।
যদিও ভাইরোলজিস্টদের মতে, বর্তমান পরিস্থিতিতে গোষ্ঠী সংক্রমণ শুরু হয়েছে কি হয়নি, এই প্রশ্নটাই অবান্তর। বিশেষ করে দিনে যখন এত মানুষ সংক্রমিত হচ্ছেন, তখন প্রত্যেকে কোথা থেকে সংক্রমিত হয়েছেন, সেই ‘কনট্যাক্ট ট্রেসিং’ করা কার্যত অসম্ভব বলেই মনে করছেন তাঁরা।
কেন্দ্র গোষ্ঠী সংক্রমণ তত্ত্ব অস্বীকার করলেও, বেশ কিছু রাজ্যের কনটেনমেন্ট জ়োন বা গণ্ডিবদ্ধ সংক্রমিত এলাকায় যে স্থানীয় পর্যায়ে সংক্রমণ শুরু হয়েছে, তা স্বীকার করে নিয়েছেন এমসের ডিরেক্টর রণদীপ গুলেরিয়া। আজ সাংবাদিক সম্মেলনে তিনি এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘‘কোনও কোনও এলাকায় এক সঙ্গে প্রচুর সংখ্যায় করোনা সংক্রমণের খবর আসার অর্থই হল, স্থানীয় পর্যায়ে গোষ্ঠী সংক্রমণ ছড়িয়েছে। তা না হলে এক জায়গা থেকে এত বেশি রোগী পাওয়া সম্ভব নয়। তবে গোটা দেশে গোষ্ঠী সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়েছে, এমনটা বলা মুশকিল।’’ শনিবার চিকিৎসক মোঙ্গা দাবি করেছিলেন, গ্রামীণ এলাকায় সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়াই প্রমাণ করছে দেশে গোষ্ঠী সংক্রমণ শুরু হয়েছে। আজ সেই সুরেই গুলেরিয়া বলেন, গ্রামীণ এলাকায় সংক্রমণ বাড়ছে। এটি অন্যতম উদ্বেগের কারণ।’’
বিশেষজ্ঞদের মতে, গোড়ার দিকে প্রতিটি সংক্রমণের ঘটনা বিশ্লেষণ করে দেখা যাচ্ছিল, ওই ব্যক্তিরা মূলত বিদেশ থেকে আসা ব্যক্তিদের সংস্পর্শে আসার কারণেই করোনা সংক্রমিত হচ্ছিলেন। স্বাস্থ্য মন্ত্রকও কার্যত স্বীকার করে নিয়েছে, এখন সংক্রমণ যেখানে ১১ লক্ষে পৌঁছে গিয়েছে, তখন কে কোথা থেকে সংক্রমিত হয়েছেন, সেই উৎস খুঁজে পাওয়া কার্যত অসম্ভব ব্যাপার। ভাইরোলজিস্টদের প্রশ্ন, গোষ্ঠী সংক্রমণ না-হলে কি সংক্রমিতের সংখ্যা ১১ লক্ষে পৌঁছে যাওয়া সম্ভব?
যদিও স্বাস্থ্য মন্ত্রকের পাল্টা যুক্তি, দেশের ৫০টি জেলা থেকেই ৭০-৮০ শতাংশ সংক্রমণের খবর পাওয়া যাচ্ছে। সে ক্ষেত্রে গোটা দেশে গোষ্ঠী সংক্রমণ ছড়িয়েছে কী ভাবে বলা যায়?
এমসের এক চিকিৎসকের মতে, গোষ্ঠী সংক্রমণ শুরু হয়েছে বলে স্বীকার করার অর্থ দাঁড়াবে, অতিমারি রুখতে এত দিনের লকডাউন বা কনটেনমেন্ট জ়োন করে যা-যা পদক্ষেপ সরকার করেছে তা পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছে বলে মেনে নেওয়া। ফলে অনেকেই মনে করছেন, করোনা রুখতে সরকারের ব্যর্থতা সামনে এসে পড়লে ফের সরব হবে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলি। সে কারণেই গোষ্ঠী সংক্রমণের কথা মানতে চাইছেন না সরকার।
অতিমারির গোড়ার দিকে অবশ্য স্বাস্থ্য মন্ত্রকের যুগ্মসচিব পর্যায়ের অফিসার স্বীকার করে নিয়েছিলেন, আজ না হোক কাল দেশে গোষ্ঠী সংক্রমণ হবেই। যে কোনও অতিমারির সেটাই নিয়ম। কারণ করোনা সংক্রমণ একবার গোষ্ঠী পর্যায়ে পৌঁছে গেলে তা ইনফ্লুয়েঞ্জা বা যক্ষার মতো স্থানীয় পর্যায়ের রোগে পরিণত হবে। তখন ওই সংক্রমণকে ঘিরে ভয় থাকবে না। কিন্তু বিশেষজ্ঞদের মতে, সেই সত্যিটাই স্বীকার করার সৎ সাহস দেখাতে পারছে না সরকার।
আরও পড়ুন: সিঙ্ঘভির মাইকে রাজস্থান হাইকোর্টে শুনানি ‘পৌঁছল’ সুপ্রিম কোর্টে
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy