Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪
Gandhi Institute

সোদপুর আশ্রমের বেহাল দশা, সংস্কার চেয়ে চিঠি মমতাকে

দেশের ইতিহাস এবং স্বাধীনতা সংগ্রামের সঙ্গে আমর্ম জড়িয়ে থাকা সোদপুরের এই খাদি প্রতিষ্ঠানটির দশা বিবর্ণ। মেঝে ফেটে দুব্বো গজিয়েছে। বছরে দু’বার মাত্র খোলে স্থানীয় পুরসভার উদ্যোগে।

gandhi institute

আশ্রমে খসে পড়েছে টালি। নিজস্ব চিত্র

অগ্নি রায়
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০১ এপ্রিল ২০২৩ ০৬:৪৬
Share: Save:

দেশের স্বাধীনতা তখন দরজায় কড়া নাড়ছে। সে সময়, ১৯৪৭ সালের ৯ থেকে ১৩ অগস্ট সোদপুরের এই খাদি প্রতিষ্ঠানেই কাটিয়েছিলেন গান্ধী। সাম্প্রদায়িক অশান্তির বাতাবরণে তিনি তখন অস্থির। ওয়াকিবহাল মহল বলছে, এখানে বিভিন্ন সময়ে এসে বহু দিন থেকে গিয়েছেন গান্ধী। লিখেছেন অন্তত ৭০০টি গুরুত্বপূর্ণ চিঠি।

দেশের ইতিহাস এবং স্বাধীনতা সংগ্রামের সঙ্গে আমর্ম জড়িয়ে থাকা সোদপুরের এই খাদি প্রতিষ্ঠানটির দশা বিবর্ণ। মেঝে ফেটে দুব্বো গজিয়েছে। বছরে দু’বার মাত্র (গান্ধীর জন্ম এবং মৃত্যু দিন) খোলে স্থানীয় পুরসভার উদ্যোগে। এই খাদি প্রতিষ্ঠানের নুন খসা দেওয়ালে ফ্রেমে ঝুলছে ঝাপসা হয়ে যাওয়া সুভাষ, নেহরু, গান্ধীর ছবি। এই প্রতিষ্ঠানটিকে পুনরুজ্জীবিত করার জন্য ন্যাশনাল গান্ধী মিউজিয়মের চেয়ারপার্সন তারা গান্ধী ভট্টাচার্য সম্প্রতি একটি চিঠি দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে। সেই চিঠিতে তিনি লিখেছেন, ‘সোদপুরের খাদি প্রতিষ্ঠান এমনই একটি ঐতিহাসিক স্থান, যা আপনার মনোযোগ এবং সহায়তা দাবি করে। এটি গান্ধীজির অন্যতম ক্যাম্প অফিস ছিল, বহু ঘটনার সাক্ষী। খাদি ছাড়াও আরও নানা ভাবে খাদি প্রতিষ্ঠান স্বাধীনতা সংগ্রামকে জনতার কাছে পৌঁছে দিয়েছিল। এটি দেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম এবং সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের অন্যতম সম্পদ।’ এর পরে তারা গান্ধী লিখেছেন, ‘আপনিও আমার সঙ্গে একমত হবেন, আজকের দিনে দাঁড়িয়ে গান্ধীজির মতাদর্শকে জাগিয়ে তোলার সময় এসেছে। ফলে খাদি প্রতিষ্ঠানের বিস্তারিত খোঁজ নিতে আপনাকে অনুরোধ করি। এই মহান প্রতিষ্ঠানটিকে জাগিয়ে তুলতে আপনাকে যে কোনও ধরনের সাহায্য করতে আমরা প্রস্তুত।’ ন্যাশনাল গান্ধী মিউজিয়াম সূত্রে জানা গিয়েছে, এই চিঠির কোনও জবাব এখনও আসেনি।

তথ্য বলছে, ১৯২৭-১৯৪৭ পর্যন্ত একাধিক বার এই বাড়িতে থেকেছেন মোহনদাস কর্মচন্দ গান্ধী। সোদপুরের এই বাড়ি আজও বহন করে চলেছে সুভাষচন্দ্র বসুর কংগ্রেস ত্যাগের সিদ্ধান্তের মতো গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক ঘটনা। ভারতের প্রথম সারির নেতৃবৃন্দ গান্ধীর সঙ্গে সাক্ষাৎ ও আলোচনা করতে বারবার এসেছেন সোদপুরে। কংগ্রেসের অনেক গুরুত্বপূর্ণ সভাও হয়েছে এখানে।

যে বাড়ি আজ অবহেলায়, তার শুরুটা কিন্তু হয়েছিল যথেষ্ট উদ্দীপনায়। ১৯২৬ সালে সোদপুর খাদি প্রতিষ্ঠান গড়েন আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায়ের প্রিয় ছাত্র সতীশচন্দ্র দাশগুপ্ত। গান্ধীর পরামর্শেই বেঙ্গল কেমিক্যালের কর্মীদের দিয়ে চরকায় সুতো কাটা এবং কাপড় বোনার কাজ শুরু করেন সতীশচন্দ্র। কিছু দিন পরে নিজেই খাদি ও কুটির শিল্পের আশ্রম তৈরির পরিকল্পনা করেন তিনি। তৎকালীন সময়ে দু’লক্ষ টাকা দিয়ে সোদপুর স্টেশনের পাশে ৩০ বিঘা জমি কিনে তৈরি হয় খাদি প্রতিষ্ঠান। ১৯২৭ সালের জানুয়ারিতে প্রতিষ্ঠানের ‘কলাশালা’র (হস্তশিল্প বিভাগ) উদ্বোধনে আসেন গান্ধী।

তখন থেকেই এই প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আত্মীয়তা তাঁর। ১৯৩৯ সালের ২৭-২৯ এপ্রিল এখানে পণ্ডিত জওহরলাল নেহরুর উপস্থিতিতে কংগ্রেসের কার্যকরী কমিটির বিষয়ে সুভাষচন্দ্র বসুর সঙ্গে দীর্ঘ আলোচনা করেন গান্ধী। সোদপুরের এই বাড়িতেই দল ছাড়ার সিদ্ধান্ত নেন কংগ্রেস সভাপতি সুভাষচন্দ্র বসু। আবার ১৯৪৫ সালের শেষ দিকে সোদপুরের এই আশ্রমে ৫০ দিন কাটিয়েছিলেন গান্ধী। তখন প্রতিদিন সকাল-সন্ধ্যায় প্রার্থনাসভা বসত। তাতে যোগ দিতে আসা মানুষের ভিড় সামলাতে বিকেলে শিয়ালদহ স্টেশন থেকে সোদপুরের বিশেষ ট্রেন ছাড়ত। ১৯৪৬ সালের জানুয়ারি মাসে তিনি এখান থেকেই পদযাত্রা করে চৈতন্যদেবের স্মৃতি বিজড়িত পানিহাটির মহোৎসবতলা ঘাটে গিয়েছিলেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

mahatma gandhi Mamata Banerjee
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE