Advertisement
১৯ মে ২০২৪
Congress

তৃতীয় ফ্রন্টে সুবিধা বিজেপির: কংগ্রেস

রাহুল গান্ধী উদয়পুরের চিন্তন শিবির থেকেই সওয়াল করছেন, বিজেপিকে হারানোর মতো মতাদর্শ কংগ্রেসের কাছেই রয়েছে। বিজেপিকে সুকৌশলে মদতের অভিযোগ তুলে তৃণমূল কংগ্রেসকে নিশানা করেছেন তিনি।

Picture of Rahul Gandhi.

রাহুল গান্ধী। ছবি: পিটিআই।

প্রেমাংশু চৌধুরী
রায়পুর শেষ আপডেট: ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ০৬:০৩
Share: Save:

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, কে চন্দ্রশেখর রাও বা অরবিন্দ কেজরীওয়ালেরা কংগ্রেসকে বাদ দিয়ে ২০২৪-এর লোকসভা নির্বাচনের আগে কোনও তৃতীয় ফ্রন্টের কথা ভাবলে তা আখেরে বিজেপিকেই সুবিধা করে দেওয়া হবে বলে কংগ্রেস সতর্ক করে দিল।

রাহুল গান্ধী উদয়পুরের চিন্তন শিবির থেকেই সওয়াল করছেন, বিজেপিকে হারানোর মতো মতাদর্শ কংগ্রেসের কাছেই রয়েছে। বিজেপিকে সুকৌশলে মদতের অভিযোগ তুলে তৃণমূল কংগ্রেসকে নিশানা করেছেন তিনি। কিন্তু ২০২৪-এর লোকসভা নির্বাচনে তাদের পক্ষে একা বিজেপির সঙ্গে লড়াই করা যে কঠিন, তা মেনে নিয়ে আজ কংগ্রেস প্লেনারি অধিবেশনের রাজনৈতিক প্রস্তাবে ফের সমমনস্ক দলগুলির জোটেরই বার্তা দিয়েছে। কংগ্রেস মেনে নিয়েছে, ধর্মনিরপেক্ষ শক্তি, আঞ্চলিক দলগুলির জোটের উপরেই কংগ্রেসের ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে। তাই সমমনস্ক দলগুলিকে চিহ্নিত করে তাদের এককাট্টা করার জন্য ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে। সেই জোটে ফাটল ধরলে যে বিপদ, তা মেনে নিয়ে কংগ্রেস বলেছে, ‘কোনও তৃতীয় ফ্রন্টের উদয় হলে বিজেপিকেই সুবিধা করে দেওয়া হবে।’

তৃণমূল শীর্ষ নেতৃত্বের মতো অনেক দলেরই বিরোধী জোটে রাহুল গান্ধীর কংগ্রেসের নেতৃত্ব মেনে নিতে ‘অ্যালার্জি’ রয়েছে। তা টের পেয়েই আজ রায়পুরের প্লেনারি অধিবেশনে সনিয়া গান্ধী থেকে মল্লিকার্জুন খড়্গে ভারত জোড়ো যাত্রার জন্য রাহুল গান্ধীর অকুণ্ঠ প্রশংসা করলেও তাঁর নেতৃত্বে বিরোধী জোটের কথা বলেননি।

কিন্তু বিরোধী জোটে কাদের রাখা উচিত, কাদের রাখা উচিত নয়, তা নিয়ে যে কংগ্রেসের মধ্যে রাজ্য স্তরে দ্বন্দ্ব রয়েছে, তা-ও প্রকট হয়ে উঠেছে। প্লেনারি অধিবেশনের রাজনৈতিক প্রস্তাবে বলা হয়েছে, ‘যাদের সঙ্গে মতাদর্শে মেলে, সেই ধর্মনিরপেক্ষ আঞ্চলিক দলগুলিকে জোটে নিতে হবে’। কিন্তু সেই অধিবেশনের মঞ্চে দাঁড়িয়ে পশ্চিমবঙ্গের প্রদেশ কংগ্রেস নেতা শঙ্কর মালাকার, আশুতোষ চট্টোপাধ্যায়েরা বিজেপি ও তৃণমূলকে একই বন্ধনীতে রেখে দুই দলকেই কংগ্রেসের শত্রু বলে আখ্যা দিয়েছেন।

কংগ্রেস সভানেত্রী হিসেবে সনিয়া গান্ধীর ইনিংসের শেষে মল্লিকার্জুন খড়্গে নতুন সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার পরেই দলের নিয়ম অনুযায়ী প্লেনারি অধিবেশন বসেছে। সভানেত্রী হিসেবে সনিয়ার কাজকর্মের উপরে একটি তথ্যচিত্র দেখানো হয় অধিবেশনে। তা দেখে সনিয়া বলেন, “এটা দেখে বোঝা যাচ্ছে, আমি কত বুড়ো হয়ে গিয়েছি। এখন খড়্গেজির নেতৃত্বে তরুণদের এগিয়ে যেতে হবে।” সনিয়া জানান, সভানেত্রী হিসেবে তাঁর ইনিংস ভারত জোড়ো যাত্রার মাধ্যমে শেষ হয়েছে বলে তিনি ‘তৃপ্ত’। রাহুল গান্ধীকে ভারত জোড়ো যাত্রার জন্য রীতিমতো ‘ধন্যবাদ’ জানিয়ে বলেন, এই যাত্রা দেশের রাজনীতির মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছে। সনিয়ার কথায়, ‘‘আমি রাহুলজিকে বিশেষ করে ধন্যবাদ জানাই, কারণ তাঁর দৃঢ়সঙ্কল্প ও নেতৃত্ব যাত্রার সাফল্যের জন্য জরুরি ছিল।” মল্লিকার্জুনও রাহুলের প্রশংসা করেন।

তবে কংগ্রেসের অন্য কোনও নেতাও এ দিন রাহুল গান্ধীকে বিরোধী জোটের প্রধানমন্ত্রীর মুখ হিসেবে তুলে ধরেননি। উল্টে রাজনৈতিক প্রস্তাব পেশ করে হিমাচলের মুখ্যমন্ত্রী সুখবিন্দর সিংহ সুখু বলেছেন, “রাহুল প্রধানমন্ত্রী হওয়ার জন্য ভারত জোড়ো যাত্রা করেননি। তিনি চাইলে ২০০৯ সালে প্রধানমন্ত্রী হতে পারতেন। মনমোহন সিংহ সেই সময় তাঁকে গদি ছেড়ে দিতে চেয়েছিলেন।” কংগ্রেস সূত্রের ব্যাখ্যা, রাহুলকে এই মুহূর্তে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তুলে ধরতে চাইলে বিরোধী জোটে অনেকেই বেঁকে বসতে পারেন।

রাহুলকে প্রধানমন্ত্রীর মুখ হিসেবে তুলে না ধরলেও কংগ্রেস সভাপতি খড়্গে অধিবেশনের মঞ্চ থেকে বলেছেন, কংগ্রেসই এখন নেতৃত্ব দিতে সক্ষম। জোটের বার্তা দিয়ে তিনি বলেছেন, ২০১৪ থেকেই কংগ্রেস সমমনস্ক দলগুলির সঙ্গে কাজ করছে। বিজেপিকে হারাতে কংগ্রেস সমমনস্ক দলগুলির সঙ্গে হাত মেলাবে। চলতি বছরের বিধানসভা ভোট, আগামী বছরের লোকসভা ভোটের লক্ষ্যে, দেশের স্বার্থে কংগ্রেস প্রয়োজনে আত্মত্যাগও করবে।

পশ্চিমবঙ্গের প্রদেশ কংগ্রেস নেতারা অবশ্য সওয়াল করেছেন, জোটের স্বার্থে তৃণমূলকে জমি ছাড়া চলবে না। দার্জিলিঙের কংগ্রেস জেলা সভাপতি শঙ্কর মালাকার অধিবেশনে বলেছেন, ‘‘আমাকে গুলি করুন বা কংগ্রেস থেকে তাড়িয়ে দিন, তবুও বলব, বিজেপির মতো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, অরবিন্দ কেজরীওয়ালও কংগ্রেসের দুশমন।’’ রাজ্যে তৃণমূলের বিরুদ্ধে লড়তে এআইসিসি-র সাহায্য চেয়েছেন তিনি। তাঁর বক্তব্য, সিপিএম কংগ্রেস কর্মীদের মারত। তৃণমূল মিথ্যে মামলায় ফাঁসিয়ে দেয়। সংগঠন মজবুত করতে বুথ, পঞ্চায়েত স্তরে জোর দেওয়ার দাবি তুলেছেন তিনি। প্রদেশ কংগ্রেসের আর এক নেতা আশুতোষ চট্টোপাধ্যায় তৃণমূল, বিজেপিকে ‘একই বৃন্তে দু’টি কুসুম’ বলে বর্ণনা করেছেন। রাজ্যের নিয়োগ দুর্নীতির প্রসঙ্গ তুলে তিনি বলেছেন, দুর্নীতির ফলে চাকরিহারা প্রার্থীরা গত ৭১৪ দিন ধরে রাস্তায় বসে রয়েছেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Congress third front BJP
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE