Advertisement
১৯ মে ২০২৪
হুমকি চিঠি বিচারপতিকে

ভাইয়ের ফাঁসির বদলা নেব, মা-কে ফোন টাইগারের

ইয়াকুব মেমনের ফাঁসির পর থেকেই আশঙ্কার মেঘটা জমছিল। আজ তা আরও ঘন হয়ে উঠল যখন একই দিনে প্রকাশ্যে এল দু’টি ঘটনা। একটিতে বাইশ বছর পরে ফের শোনা গেল ’৯৩ মুম্বইয়ে ধারাবাহিক বিস্ফোরণে অন্যতম অভিযুক্ত টাইগার মেমনের গলা।

সংবাদ সংস্থা
মুম্বই ও নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৮ অগস্ট ২০১৫ ০০:০৮
Share: Save:

ইয়াকুব মেমনের ফাঁসির পর থেকেই আশঙ্কার মেঘটা জমছিল। আজ তা আরও ঘন হয়ে উঠল যখন একই দিনে প্রকাশ্যে এল দু’টি ঘটনা।

একটিতে বাইশ বছর পরে ফের শোনা গেল ’৯৩ মুম্বইয়ে ধারাবাহিক বিস্ফোরণে অন্যতম অভিযুক্ত টাইগার মেমনের গলা। ভাই ইয়াকুবের মৃত্যুর শোধ নেওয়ার হুমকি দিয়েছে টাইগার।

অন্যটিতে এ দিনই সুপ্রিম কোর্টে ইয়াকুবের প্রাণভিক্ষার শেষ আর্জি নস্যাৎ করেছিলেন যে তিন বিচারপতি, তাঁদের অন্যতম দীপক মিশ্র পেলেন প্রাণনাশের হুমকি দেওয়া চিঠি।

একটি দৈনিক আজ দাবি করেছে, গত ৩০ জুলাই ইয়াকুবের ফাঁসির দিন সকালেই টাইগার ফোন করেছিল মাহিমে, নিজেদের বাড়িতে। মাকে টাইগার জানিয়েছে, ইয়াকুবের ফাঁসির শোধ সে তুলবেই।

দৈনিকটির দাবি, ইয়াকুবের ফাঁসির বেশ কয়েক দিন আগে থেকেই তাদের বাড়ির ফোনে নজর রাখছিল মুম্বই পুলিশ। ৩০ জুলাই, ঘড়িতে তখন সাড়ে পাঁচটা। কিছু পরেই ফাঁসি। এ সময় হঠাৎই বেজে ওঠে ইয়াকুবের বাড়ির ফোন। ও পারে টাইগারের গলা। কথাবার্তার গোটা পর্বটাই রেকর্ড করে রেখেছে পুলিশ।

সে দিন ফোন করে মা হানিফার সঙ্গে কথা বলতে চায় টাইগার। প্রথমে রাজি হননি তিনি। কিন্তু যে লোকটি ফোন ধরেছিলেন, তিনি বারবার অনুরোধ করেন হানিফাকে। জানান, এক বার অন্তত ‘ভাইজান’-এর সঙ্গে তাঁর কথা বলা উচিত। কাঁদতে কাঁদতে ফোন ধরে হানিফা ছেলেকে বলেন, ‘‘অনেক হয়েছে। ওই ঘটনায় আমার ইয়াকুবকে হারিয়েছি। আর সহ্য করতে পারব না।’’ যদিও হানিফার আর্তির কোনও প্রভাব পড়েনি ও পারের লোকটির গলায়। সে বলতে থাকে, ‘‘এর দাম ওদের দিতেই হবে।’’ এর পরই ফোন ছেড়ে দেন হানিফা।

তিন মিনিটের ফোন। পুলিশের একটি সূত্রের মতে, ইচ্ছে করেই তাড়াতাড়ি ফোন রেখে দিয়েছিল টাইগার। যাতে কোথা থেকে টেলিফোন করা হয়েছে, তা ধরা না পড়ে। ‘ভয়েস ওভার ইন্টারনেট প্রোটোকল’-এ (ইন্টারনেট মারফত) ফোন করেছিল টাইগার। পুলিশ জানিয়েছে, কথাবার্তার গোটা সময়টা ক্রমাগত বদলে যাচ্ছিল আইপি অ্যাড্রেস। তাই টাইগারের ফোনের আইপি অ্যাড্রেস চিহ্নিত করতে পারেনি তারা। তবে ফোনটা যে টাইগারই করেছিল, তা নিয়ে নিশ্চিত দিল্লি ও মুম্বই পুলিশের গোয়েন্দারা। যদিও অতিরিক্ত মুখ্যসচিব (স্বরাষ্ট্র) কেপি বক্সী জানিয়েছেন, এমন কোনও ফোনের কথা তাঁর জানা নেই। মুম্বই পুলিশ কমিশনার রাকেশ মারিয়াও এ নিয়ে কোনও কথা বলতে রাজি হননি।

কর্তারা যতই মুখে কুলুপ আঁটুন না কেন, পুলিশ যে জঙ্গি-হানার আশঙ্কায় রয়েছে, তা জানান দেয় দেশ জুড়ে কড়া নিরাপত্তা। তার মধ্যেই আজ দিল্লির তুঘলক রোডে বিচারপতি দীপক মিশ্রের বাড়ির পিছনের দিকে মেলে হুমকি-চিঠি। তাতে লেখা ছিল, ‘‘যতই সুরক্ষা দেওয়া হোক না কেন, আপনাকে আমরা মারবই।’’

হুমকি চিঠিটির পরিপ্রেক্ষিতে মামলা দায়ের করেছে দিল্লি পুলিশ। বিচারপতি মিশ্র-র নিরাপত্তাও বাড়ানো হয়েছে। দিল্লি পুলিশ ছাড়াও তাঁর বাড়িতে নিয়োগ করা হয়েছে কেন্দ্রীয় আধাসামরিক বাহিনী। চিঠিটি যে ভুয়ো নয়, তা মেনে পুলিশই জানাচ্ছে, যে বা যারা ওই চিঠিটি ফেলে দিয়ে গিয়েছে, তারা আগে থেকে বাড়িটি পরীক্ষা করে গিয়েছিল। বাড়িটির পিছনের দিকে প্রচুর গাছপালা। সিসিটিভি কার্যত ঢেকে গিয়েছে ডালপালায়। ফলে কারা চিঠি ফেলে গিয়েছে, ক্যামেরায় তা ধরা পড়া অসম্ভব।

এ প্রসঙ্গে প্রধান বিচারপতি এইচএল দাত্তু বলেন, ‘‘ভয় না পেয়ে মামলার বিচার করাটাই আমাদের কাজ। আমরা আমাদের কাজ করব, বাকিটা ভাবার কোনও প্রয়োজন নেই।’’ বিচারপতি মিশ্র এ বিষয়ে মন্তব্য করেননি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE