Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

নজরে ত্রিপুরা, মঞ্চে অভিষেক

পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভায় একা লড়ে দু’শো পেরোনোর পর চার মাসও কাটেনি। তৃণমূলের অভ্যন্তরীণ রসায়নে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ক্রমশ উত্থানের রেখচিত্র এখন স্পষ্ট। দলের যুব সভাপতি তিনি। কিন্তু মানস ভুঁইয়ার মতো বর্ষীয়ান কংগ্রেস নেতাও তৃণমূলে সামিল হচ্ছেন তাঁর হাত ধরে।

তৃণমূলের সমাবেশে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়, মানস ভুঁইয়ার সঙ্গে সুদীপ রায়বর্মন। শুক্রবার আগরতলায়। ছবি: বাপি রায়চৌধুরী।

তৃণমূলের সমাবেশে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়, মানস ভুঁইয়ার সঙ্গে সুদীপ রায়বর্মন। শুক্রবার আগরতলায়। ছবি: বাপি রায়চৌধুরী।

দেবারতি সিংহচৌধুরী ও আশিস বসু
আগরতলা শেষ আপডেট: ২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০৩:৫৪
Share: Save:

পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভায় একা লড়ে দু’শো পেরোনোর পর চার মাসও কাটেনি। তৃণমূলের অভ্যন্তরীণ রসায়নে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ক্রমশ উত্থানের রেখচিত্র এখন স্পষ্ট। দলের যুব সভাপতি তিনি। কিন্তু মানস ভুঁইয়ার মতো বর্ষীয়ান কংগ্রেস নেতাও তৃণমূলে সামিল হচ্ছেন তাঁর হাত ধরে। এ বার বাংলার বাইরে তৃণমূলের অশ্বমেধ-দৌড়েও ভাইপোর অভিষেক ঘটালেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়!

ত্রিপুরায় বাম শাসন নিপাতের ডাক দিয়ে গত মাসে আগরতলায় সভা করেছিলেন মমতা। এই রাজ্যের অনগ্রসরতার জন্য মানিক সরকারদের দায়ী করে বলেছিলেন, ‘‘ছিমছাম বাবুরা, ভাঁওতাবাজি অনেক হয়েছে, এ বার জায়গা ছাড়ো।’’ পরিবর্তনের সেই আহ্বানের ধারাবাহিকতা ধরে রাখতেই আজ অভিষেকের হাতে ব্যাটন তুলে দিয়েছেন নেত্রী।

মমতা সভা করেছিলেন আস্তাবলের মাঠে। শাসক দলের অন্দরে ঈষৎ ভয় ঢুকিয়ে দিয়েই

সে দিন মাঠ ছাপিয়ে গিয়েছিল ভিড়। আড়ে-বহরে ছোট হলেও আজ আগরতলার রবীন্দ্রভবনের সামনে চৌমুহানির সভাতেও ভিড়ের

কমতি ছিল না। শহর জুড়ে জোড়াফুলের পতাকা আর অভিষেকের পোস্টার-হোর্ডিংয়ে সমাবেশের আবহও ছিল টানটান। সেই উচ্ছ্বাস দেখে আপ্লুত অভিষেক তাঁর পিসির সুরেই বলেছেন, ‘‘আপনাদের উপস্থিতিই জানান দিচ্ছে, ত্রিপুরায় কাস্তে-হাতুড়িতে জং ধরে গিয়েছে। ভয় দেখিয়ে, চোখ রাঙিয়ে ওরা বাংলায় তৃণমূলকে সরাতে পারেনি। ত্রিপুরাতেও পারবে না।’’ তরুণ নেতা বার্তা দিতে চেয়েছেন, লাল রঙে নয়, ভবিষ্যৎ নিহিত রয়েছে সবুজে! বলেছেন, ‘‘গত পাঁচ বছরে বাংলায় যেমন উন্নয়ন ঘটিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, ত্রিপুরায় ক্ষমতায় এলেও তেমনই হবে। হয়তো উন্নয়নের প্রশ্নে বাংলাকেও তখন প্রতিযোগিতায় ফেলে দিতে পারে ত্রিপুরা।’’

উত্তর-পূর্বের এই রাজ্যে রাজনৈতিক শক্তি বাড়ানো যে এখন মমতার পাখির চোখ, তা নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই। নিজে সভা করার পর অভিষেককে পাঠানোর মধ্যেও সেই কৌশলের ছাপ পরিষ্কার। তবে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, আজকের সামগ্রিক ছবিতে তৃণমূলের অভ্যন্তরীণ ক্ষমতা বিন্যাসের অঙ্কটাও প্রকট হয়ে গিয়েছে। ত্রিপুরায় দলের সাংগঠনিক দায়িত্ব মুকুল রায়কে দিয়েছেন মমতা। অগস্ট মাসে এখানে নেত্রীর সভা আয়োজনের কারিগর ছিলেন মুকুল। আজ অভিষেকের সভার আয়োজনও করতে হয়েছে তাঁকেই। দু’দিন আগে থেকে আগরতলায় এসে সব কিছু তত্ত্বাবধান করেছেন দলের সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি। তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে, মঞ্চে দাঁড়িয়ে মুকুল বলেছেন, অভিষেক তাঁর ‘ছেলের মতো’।

তৃণমূলের শীর্ষ নেতাদের অনেকেই এতে বিস্মিত নন। দলের শীর্ষ সারির এক নেতার কথায়, অভিষেক দলের অবিংসবাদিত নেতা। দলে তাঁর স্থান যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পরেই, তা অলিখিত সত্য। ফলে অন্য নেতাদের রাজনৈতিক সাফল্যের সামগ্রিক কৃতিত্ব যেমন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পান, তেমনই অভিষেকেরও তাতে অধিকার রয়েছে। তাই মুর্শিদাবাদ দখলে শুভেন্দু অধিকারী কিংবা ত্রিপুরায় সংগঠন গড়তে মুকুল রায়ের উদ্যোগ থাকলেও সামগ্রিক নেতৃত্বে অভিষেক রয়েছেন তাঁদের ওপরের ধাপে।

অভিষেক অবশ্য প্রকাশ্যে এই কথা মানতে চাননি। তাঁর মন্তব্য, ‘‘যে হাত দিয়ে অঞ্জলি আসুক না কেন, সবই তো গিয়ে পড়ছে সেই একই মায়ের পায়ে!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Abhishek Banerjee tripura
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE