রাষ্ট্রপতির কাছে স্মারকলিপি জমা দেওয়ার পর রাহুল-সহ কংগ্রেসের প্রতিনিধি দল। বৃহস্পতিবার নয়াদিল্লিতে পিটিআইয়ের ছবি।
জেএনইউ-এর আঁচ দেশের বাকি শহরগুলোতেও ছড়াচ্ছে দেখে আরএসএসের বিরুদ্ধে আক্রমণ আরও এক ধাপ চড়িয়ে দিলেন রাহুল গাঁধী। দলের প্রতিনিধিদের নিয়ে আজ রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে দেখা করেন রাহুল। বর্তমান পরিস্থিতিতে রাষ্ট্রপতির হস্তক্ষেপ দাবি করে তিনি বলেন, ‘‘আরএসএস দেশের গণতান্ত্রিক কাঠামোর গলা টিপে ধরতে চাইছে। ওদের মৃত মতাদর্শ ছাত্রদের ওপর চাপিয়ে দিয়ে মুক্ত চিন্তার পথ রুদ্ধ করতে চাইছে। এই সর্বনাশ হতে দেবে না কংগ্রেস!’’
জেএনইউ-তে পুলিশি ধরপাকড় এবং সঙ্ঘ পরিবারের ‘উৎপাতের’ বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে গত শনিবারই বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়ে ছাত্রদের সঙ্গে দেখা করেছিলেন রাহুল। জেএনইউ বিতর্কে তাঁর এতটা মাথা গলানো ঠিক হচ্ছে কি না, তা নিয়ে অবশ্য কংগ্রেসের মধ্যে মতান্তর ছিল। কোনও কোনও শীর্ষ নেতা আশঙ্কা করছিলেন, বিষয়টি ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে। এর পর বিজেপি এর অপব্যাখ্যা করে প্রচার করবে যে আফজল গুরুকে সমর্থন জানাচ্ছেন রাহুল! কংগ্রেসের গায়ে রাষ্ট্রবিরোধী তকমা জুটবে! বিজেপি-র প্রকাশ জাভড়েকর তো এ দিনও বলেছেন, ‘‘রাহুল গাঁধীর থেকে দেশভক্তি শেখার মতো দুর্দিন এখনও আসেনি। এতই যদি জাতীয়তাবাদী তিনি, তা হলে জেএনইউ-তে কেন গিয়েছিলেন?’’
কিন্তু এই প্রচারে ভয় পেয়ে পিছিয়ে যাওয়ার পক্ষপাতী নন রাহুল নিজে। তাঁর ঘনিষ্ঠদের বক্তব্য, অপব্যাখ্যা হওয়ার আশঙ্কা থাকলেও ঝুঁকিটা নিতেই হবে। রাজনীতিতে সাহসী পদক্ষেপ না করলে মানুষের মন পাওয়া যাবে না। পথ দুর্গম হলেও জেএনইউ বিতর্কে দৃঢ় অবস্থানই নেওয়া উচিত কংগ্রেসের। এবং এটা ঠিক হয়ে যাওয়ার পরে দলের মধ্যেও আর কোনও দোটানা নেই বলেই দলীয় সূত্রে খবর।
সেই দৃঢ়তার রাজনীতিই আজ অব্যাহত রাখেন রাহুল গাঁধী। একই সঙ্গে বিজেপি-র মোকাবিলায় এ-ও বলেন, ‘‘জাতীয়তাবাদ আমার রক্তে। দেশের জন্য আমার পরিবার একটার পর একটা বলিদান দিয়েছে।’’ সত্যিই যদি কেউ রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করে, তা হলে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থাই নেওয়ার পক্ষে কংগ্রেস। রাহুল দাবি করেন, ‘‘কিন্তু সেই ছুতোয় গোটা জেএনইউ-র ওপর রাষ্ট্রদ্রোহের কালি লেপে দেওয়াটা জঘন্য রাজনীতি। এটা স্রেফ এবং স্রেফ আরএসএসের চক্রান্ত।’’ রাষ্ট্রপতির কাছে দেওয়ার স্মারকলিপিতেও তাঁরা বলেছেন, সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ সত্ত্বেও আদালতে ছাত্র ও সাংবাদিকদের মারা হচ্ছে। এটা কোনও বিক্ষিপ্ত ঘটনা নয়। চেন্নাই আইআইটি, হায়দরাবাদ বিশ্ববিদ্যালয়, পুণে ফিল্ম ইনস্টিটিউট— সর্বত্র যে ঘটনা ঘটছে তাতে বিজেপি ও সঙ্ঘ পরিবারের নকশা দেখা যাচ্ছে। রাষ্ট্রপতির উচিত এ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করা।
আরএসএসের বিরুদ্ধে এই সব মন্তব্য করার জন্য রাহুলের বিরুদ্ধে ইতিমধ্যেই সর্বোচ্চ আদালতে মানহানির মামলা করেছেন সঙ্ঘের নেতারা। আবার ইলাহাবাদ হাইকোর্টে আজ তাঁর বিরুদ্ধে দেশদ্রোহের মামলা করেছে বিজেপি। কিন্তু রাহুল মনে করছেন, মুখোমুখি লড়াই না করলে কংগ্রেস ঘুরে দাঁড়াতে পারবে না। আর তাই সঙ্ঘ পরিবারের রাজনীতির বিরুদ্ধে ঝাঁঝালো আক্রমণ অব্যাহত রাখতে চাইছেন তিনি।
দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরীবালও আজ রাষ্ট্রপতির সঙ্গে দেখা করেন। পরে কেজরী বলেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রী এই দেশকে স্বৈরতন্ত্রের পথে চালিত করছেন।’’ সুপ্রিম কোর্ট বলার পরেও আদালত চত্বরে মারামারি হয়েছে। কেজরীবালের কথায়, ‘‘কেন্দ্র তো সুপ্রিম কোর্টকে চ্যালেঞ্জ করে দেখিয়েই দিচ্ছে যে, আদালত যাই বলুক, সেটা শোনা হবে না।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy