Advertisement
E-Paper

ভুগিয়ে দিল ট্রেন, দেরিতে জোটের ব্যাট ধরলেন সূর্য

ট্রেনে হল দেরি! বিমান ছেড়ে রাজধানী এক্সপ্রেসে চেপে দিল্লিতে দলীয় বৈঠকে আসার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন সূর্যকান্ত মিশ্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৮ জুন ২০১৬ ০৯:১২
রাজধানীর সওয়ারি সূর্যকান্ত মিশ্র। বৃহস্পতিবার।—নিজস্ব চিত্র

রাজধানীর সওয়ারি সূর্যকান্ত মিশ্র। বৃহস্পতিবার।—নিজস্ব চিত্র

ট্রেনে হল দেরি!

বিমান ছেড়ে রাজধানী এক্সপ্রেসে চেপে দিল্লিতে দলীয় বৈঠকে আসার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন সূর্যকান্ত মিশ্র। কিন্তু ট্রেন দিল্লি পৌঁছতে দেরি করায় শুক্রবার পলিটব্যুরোর প্রথমার্ধের বৈঠকে পশ্চিমবঙ্গের রাজ্য সম্পাদক হাজিরই থাকতে পারলেন না। অগত্যা বৈঠকের দ্বিতীয়ার্ধেই রাজ্য কমিটির হয়ে রিপোর্ট পেশ করলেন সূর্যবাবু।

দেরি হলেও নিজের অবস্থান থেকে অবশ্য সরেননি সূর্যবাবু। পলিটব্যুরোয় আজ সিপিএমের রাজ্য নেতৃত্বের তরফে বলা হয়েছে, উপর থেকে নিচু তলা পর্যন্ত কংগ্রেসের সঙ্গে সিপিএমের জোট এক সুরে বাজেনি। কিন্তু হাতে আরও সময় মিললে গোটা সংগঠন ও বামফ্রন্টকে জোটের প্রশ্নে আরও মসৃণ ভাবে বেঁধে ফেলা যেত। সে ক্ষেত্রে ভোটের ফলাফল আরও ভাল হত।

দিল্লিতে আজ থেকে সিপিএমের পলিটব্যুরো ও কেন্দ্রীয় কমিটির ম্যারাথন বৈঠক শুরু হয়েছে। পলিটব্যুরোর বৈঠকের পরে শনি থেকে সোমবার তিন দিন কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠক চলবে। পশ্চিমবঙ্গে ভোটের ফল বিশ্লেষণই যে বৈঠকের মূল বিষয়বস্তু। আরও নির্দিষ্ট করে বললে, পার্টি কংগ্রেস ও কেন্দ্রীয় কমিটির সিদ্ধান্তের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ না হওয়া সত্ত্বেও আলিমুদ্দিনের নেতারা কংগ্রেসের সঙ্গে জোটের যে পথ নিয়েছিলেন, সেই রণকৌশলের কাটাছেঁড়া। যে জোটের পক্ষেই রাজ্য কমিটি এখনও সায় দিচ্ছে। সূর্যবাবু রাজ্য কমিটির মতামত পলিটব্যুরোকে জানিয়েই যুক্তি দিয়েছেন, কেন্দ্রীয় কমিটির সিদ্ধান্তের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ না হলেও জোটের রণকৌশল ঠিকই ছিল। জোট না হলে ফল আরও খারাপ হত।

রাজ্য কমিটির রিপোর্ট অনুযায়ী, সিপিএমের সংগঠনের সর্বস্তরে কংগ্রেসের সঙ্গে জোট একই ভাবে গ্রহণযোগ্য হয়ে ওঠার আগেই ভোট এসে পড়েছিল। বামফ্রন্টের ক্ষেত্রেও একই সমস্যা দেখা গিয়েছিল। কংগ্রেসের সঙ্গে জোট নিয়ে অনেকের মনেই প্রশ্ন ছিল। সবাইকে বোঝানোর সময় পাওয়া যায়নি। ভোটের দিনক্ষণ অনুযায়ী, হাতে মাত্র এক মাস সময় মিলেছিল। কোন আসনে কোন দল লড়বে, তা ঠিক করতেই সেই সময় চলে যায়। জোট নিয়ে দল বা বামফ্রন্টের অন্দরমহলে সংশয় দূর করার যথেষ্ট সময় পাওয়া যায়নি।

তবে সূর্যবাবু জোটের পক্ষে যুক্তি দেওয়ার আগেই প্রথমার্ধে তাঁর অনুপস্থিতি নিয়ে প্রশ্ন উঠে যায়। কেউ কটাক্ষ করে এমন মন্তব্যও করেন যে, হারের পরে কি আলিমুদ্দিনের আয়ও কমে গিয়েছে, যার জন্য রাজ্য সম্পাদক বিমান ছেড়ে ট্রেনের টিকিট কাটছেন! পশ্চিমবঙ্গ থেকে পলিটব্যুরোর অন্য দুই সদস্য হাজির ছিলেন। বিমান বসু বিমানেই দিল্লি এসেছেন। মহম্মদ সেলিমেরও একই বিমানের টিকিট কাটা ছিল। তাঁকে উত্তরপ্রদেশ যেতে হয়েছিল বলে তিনি সেখান থেকে দিল্লি আসেন। বিমানবাবুরা ফিরবেনও বিমানে। সূর্যবাবু তা হলে রাজধানীর সওয়ার হলেন কেন, তা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। সূর্যবাবুর সঙ্গী নেতাদের যুক্তি, বিমানবাবুর ট্রেনে রাত যাত্রায় শারীরিক অসুবিধা হয়। তাই তাঁর জন্য বিমানের টিকিট কাটা হয়েছিল। রাজধানী এক্সপ্রেস গয়ার পরে যান্ত্রিক কারণে দেরি করতেই দিল্লি পৌঁছতে দেরি হয়ে যায়। অনেকে অবশ্য আরও প্রশ্ন তুলেছেন, রাজধানী এক্সপ্রেস নির্ধারিত সময়ে দিল্লি পৌঁছলেও সূর্যবাবু সকাল ১০টা থেকে শুরু বৈঠকে সময়ে হাজির হতে পারতেন না। তা জেনেও তিনি কেন ট্রেনে আসার সিদ্ধান্ত নিলেন? বিশেষ করে, এ বারের বৈঠকে যেখানে পশ্চিমবঙ্গই মূল আলোচ্য বিষয়। যদিও বঙ্গ সিপিএম জানে, রাজ্য সম্পাদকের ট্রেন-সফরের নেপথ্যে ছিল দলের একাংশকে বার্তা দেওয়া।

পৌনে তিনটে নাগাদ সূর্যবাবু এ কে গোপালন ভবনে এসে পৌঁছন। তত ক্ষণে সীতারাম ইয়েচুরির মধ্যাহ্নভোজন শেষ। দফতরে ঢুকেই কাগজপত্রের খোঁজ করে পলিটব্যুরোর লড়াইয়ের প্রস্তুতি শুরু করে দেন সূর্য। দলীয় সূত্রের খবর, কেন্দ্রীয় কমিটির লাইন ভাঙার দায়ে সূর্যবাবুদের কড়া তিরস্কারের পক্ষে আজও জোর সওয়াল করেছে প্রকাশ কারাট শিবির। দেরিতে পৌঁছে সূর্যবাবু আবার পাল্টা লড়াই দিয়েছেন জোটের পক্ষে। এ বার চূড়ান্ত ফয়সালা কেন্দ্রীয় কমিটিতে।

suryakanta mishra Train late
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy