গত ১ ফেব্রুয়ারি সংসদে তাঁর পেশ করা বাজেটকে ‘বাংলাবিরোধী’ বলে চিহ্নিত করেছে তৃণমূল। মঙ্গলবার বাজেট প্রস্তাব নিয়ে আলোচনায় সেই অভিযোগের জবাব দিতে গিয়ে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন নিশানা করলেন, ‘তৃণমূলের দুর্নীতিকে’। বললেন, ‘‘তৃণমূলের জমানায় পশ্চিমবঙ্গে দুর্নীতি প্রাতিষ্ঠানিক রূপ নিয়েছে।’’
নির্মলার অভিযোগের প্রতিক্রিয়ায় লোকসভায় তৃণমূলের দলনেতা সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘আমি পশ্চিমবঙ্গের বিষয় নিয়ে সরাসরি নির্মলা সীতারামনের সঙ্গে কথা বলেছি। সংসদে দাঁড়িয়েই আমার সঙ্গে তাঁর কথা হয়েছে। আমি তাঁকে সরাসরি জিজ্ঞাসা করেছিলাম যে, আপনি এ ভাবে পশ্চিমবঙ্গের প্রাপ্য পুরো টাকাটা আটকাচ্ছেন কেন? কোথাও কোনও দুর্নীতি হয়েছে বলে মনে হলে, আপনি ব্যবস্থা নিন। যেখানে দুর্নীতি হয়েছে, সেখানকার টাকা আটকান। কিন্তু দু’একটা জায়গা থেকে দুর্নীতির অভিযোগ ওঠায় আপনি গোটা রাজ্যের সম্পূর্ণ তহবিলটা আটকে দিচ্ছেন কেন? উনি আমার প্রশ্নের উত্তরও দিয়েছিলেন। কিন্তু সে উত্তর আদৌ সন্তোষজনক ছিল না। মঙ্গলবারও সংসদে তিনি নতুন কিছু বলেননি। ওই একই অভিযোগ বার বার তুলছেন। কিন্তু আমাদের তোলা প্রশ্নগুলোর উত্তর এখনও দিলেন না। এটা স্পষ্ট যে, ওঁরা পশ্চিমবঙ্গকে ইচ্ছাকৃত অর্থনৈতিক অবরোধের মুখে ফেলতে চাইছেন।’’
আরও পড়ুন:
কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী মঙ্গলবার লোকসভায় দাবি করেন, বাংলায় তৃণমূল এখন তৃণমূল স্তরের (সমাজের প্রান্তিক শ্রেণির) মানুষকে শোষণের প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়েছে। বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের বিরুদ্ধে ২৫ লক্ষ ভুয়ো জব কার্ডের মাধ্যমে ১০০ দিনের কাজের (মনরেগা) প্রকল্পের টাকা নয়ছয়ের অভিযোগ তুলে তিনি বলেন, ‘‘তৃণমূলের কর্মীরা ওই টাকা লুট করেছে।’’ পাশাপাশি এনেছেন মিড-ডে মিল কর্মসূচিতে ১০০ কোটি টাকা চুরি এবং ‘রেশন মাফিয়াদের দাপটের’ অভিযোগও। কেন্দ্রীয় সরকারের ‘আয়ুষ্মান ভারত’ কর্মসূচি কেন পশ্চিমবঙ্গ সরকার কার্যকর করেনি, লোকসভার বক্তৃতায় সে প্রশ্ন তুলে বলেন, ‘‘গরিবদের সরকারি স্বাস্থ্য পরিষেবা থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে।’’
আরও পড়ুন:
প্রধানমন্ত্রী গ্রামীণ আবাস যোজনার কেন্দ্রীয় অর্থসাহায্যও বাংলার তৃণমূল সরকার নয়ছয় করেছে বলে অভিযোগ নির্মলার। তিনি বলেন, ‘‘অন্যান্য রাজ্যের মতো পশ্চিমবঙ্গেও ২০১৬-১৭ সাল থেকে প্রধানমন্ত্রী গ্রামীণ আবাস যোজনা প্রকল্প চালু হয়েছিল। সরকার কেন্দ্রীয় অংশীদারির অংশ হিসেবে ২৫ হাজার ৭৯৮ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছে ২০১৬-১৭ সাল পর্যন্ত। কিন্তু অভিযোগ এসেছে ভুরিভুরি দুর্নীতির। সরকারি নিয়ম-নীতি মানা হয়নি। অযোগ্যদের প্রকল্পের টাকা দেওয়া হয়েছে।’’ কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রক বার বার এ বিষয়ে জবাব চাইলেও পশ্চিমবঙ্গ সরকার তা দেয়নি বলে অভিযোগ করেন নির্মলা।
তৃণমূলের তোলা ‘বাংলাবিরোধী বাজেটে’র অভিযোগ প্রসঙ্গে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রীর খোঁচা, ‘‘বাংলায় কাজ নেই, শিল্প নেই, দূরদৃষ্টি নেই। ১৯৪৭ সালে গোটা দেশের শিল্পোৎপাদনের মধ্যে পশ্চিমবঙ্গের অবদান ছিল ২৪ শতাংশ। যা এখন যা এখন সাড়ে তিন শতাংশে নেমে এসেছে। বাংলায় মাথাপিছু রোজগারের হারে গত ২০ বছর পশ্চিমবঙ্গ ২৩তম স্থানে রয়েছে। নলবাহিত পানীয় জল সরবরাহের ক্ষেত্রে জাতীয় বায় ৭৪ শতাংশ। বাংলার মাত্র ৪৩ শতাংশ।” বাংলার প্রতি বঞ্চনার অভিযোগ উড়িয়ে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রীর দাবি, এ বারেও বাংলাকে অনেকগুলি নতুন ট্রেন দেওয়া হয়েছে। নির্মলার বক্তৃতার সময় একাধিক বার তৃণমূল বেঞ্চ থেকে প্রতিবাদ ওঠে। কিন্তু তাতে না থেমেই বক্তৃতা করেন তিনি।