Advertisement
E-Paper

৩০ দিন হেফাজতে থাকলেই খোয়াতে হবে মন্ত্রিত্ব! বিতর্কিত বিল পেশ করলেন অমিত শাহ, যৌথ সংসদীয় কমিটিতে পাঠাল লোকসভা

এই বিলের মাধ্যমে বিরোধীদের কণ্ঠস্বরকে দমিয়ে দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে বলে অভিযোগ তুলেছে অবিজেপি রাজনৈতিক দলগুলি। কংগ্রেস, তৃণমূল, সিপিএম-সহ সব বিরোধী দল এককাট্টা হয়ে কেন্দ্রের এই বিলের বিরুদ্ধে সরব হয়েছে।

আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক

শেষ আপডেট: ২০ অগস্ট ২০২৫ ১৪:১২
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ।

কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। — ফাইল চিত্র।

প্রধানমন্ত্রী, মুখ্যমন্ত্রী বা অন্য কোনও মন্ত্রী যদি টানা ৩০ দিন হেফাজতে থাকেন, তাঁকে পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হবে! বুধবার লোকসভায় বিল পেশ করল কেন্দ্রীয় সরকার। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ লোকসভায় ১৩০তম সংবিধান সংশোধনী বিল পেশ করেন। বিল পেশ হওয়ার আগে থেকেই এর বিরোধিতায় সরব হন বিরোধী দলগুলির নেতারা। লোকসভায় বিল পেশ হতেই অধিবেশন কক্ষের অন্দরেও বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন বিরোধী সাংসদেরা। হট্টগোলের আবহে বিলটি যৌথ সংসদীয় কমিটিতে পাঠানো হয়।

এই বিলের মাধ্যমে বিরোধীদের কণ্ঠস্বর দমিয়ে রাখার চেষ্টা হচ্ছে বলে অভিযোগ তুলেছে অবিজেপি রাজনৈতিক দলগুলি। কংগ্রেস, তৃণমূল, সিপিএম-সহ সব বিরোধী দল এককাট্টা হয়ে কেন্দ্রের এই বিলের বিরুদ্ধে সরব হয়েছে। সম্প্রতি বিজেপি বিরোধী বিভিন্ন দলের নেতাদের গ্রেফতারির ঘটনা ঘটেছে। দিল্লির প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরীওয়াল, ঝাড়খণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত সোরেনকে অতীতে গ্রেফতার হতে দেখা গিয়েছে। এই বিল আইনে পরিণত হলে তা বিরোধী দলের নেতাদের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসাবে ব্যবহার করা হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন অনেকে।

বুধবার লোকসভায় মোট তিনটি বিল পেশ করেন শাহ। ১৩০তম সংবিধান সংশোধনী বিল, কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের সরকার (সংশোধনী) বিল, জম্মু ও কাশ্মীর পুনর্গঠন (সংশোধনী) বিল পেশ করেন তিনি। তিনটি বিল পেশ হতেই বিরোধীরা তুমুল হট্টগোল শুরু করেন লোকসভায়। ওয়েলে নেমে স্লোগান তুলে বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন তাঁরা। বিলের প্রতিলিপি (কপি) ছিঁড়ে প্রতিবাদ জানান বিরোধী সাংসদেরা। কংগ্রেসের মনীশ তিওয়ারি, কেসি বেণুগোপাল, মিম প্রধান আসাদউদ্দিন ওয়েইসি-সহ অন্য সাংসদেরা এই বিলের বিরোধিতায় সরব হন লোকসভায়। তাঁদের দাবি, এই বিল সংবিধান এবং যুক্তরাষ্ট্রীয় পরিকাঠামোর পরিপন্থী।

যদিও বিরোধীদের অভিযোগ অস্বীকার করেন শাহ। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, এই বিলটি যৌথ সংসদীয় কমিটিতে পাঠানো হবে। সেখানে সংসদের উভয় কক্ষের শাসক-বিরোধী সাংসদেরা থাকবেন। তবে এর পরেও বিরোধীদের হট্টগোল বন্ধ হয়নি। শেষে বিরোধীদের হট্টগোলের জেরে দুপুর তিনটে পর্যন্ত মুলতুবি হয়ে যায় লোকসভার অধিবেশন। পরে বিলটি যৌথ সংসদীয় কমিটিতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।

কংগ্রেস সাংসদ প্রিয়ঙ্কা গান্ধীর বক্তব্য, দুর্নীতির বিরুদ্ধে পদক্ষেপের কথা বলে স্রেফ সাধারণ মানুষের চোখে পট্টি পরানো হচ্ছে। তাঁর কথায়, “ভবিষ্যতে যে কোনও মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে যে কোনও মামলা করা যেতে পারে। তিনি দোষী সাব্যস্ত না হলেও তাঁকে ৩০ দিন হেফাজতে রেখে দেওয়া হতে পারে। তার পরে তিনি আর মুখ্যমন্ত্রী থাকতে পারবেন না। এটি সম্পূর্ণ সংবিধানবিরোধী, অগণতান্ত্রিক এবং অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক।”

তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক তথা ডায়মন্ড হারবারের সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ও এই বিলের বিরোধিতা করছেন। তাঁর অভিযোগ, কেন্দ্রীয় সরকার সাংবিধানিক দায়িত্ব পালন করছে না। কোনও জবাবদিহি না করেই ক্ষমতা এবং সম্পত্তির উপর নিয়ন্ত্রণ পাওয়ার চেষ্টা করছে কেন্দ্র। সমাজমাধ্যমে অভিষেক লিখেছেন, “বিরোধী শিবির এবং গোটা দেশের সমর্থন থাকা সত্ত্বেও কেন্দ্র এখনও পাক অধিকৃত কাশ্মীরকে উদ্ধার করার সাহস দেখাতে পারে না। তারা বুক চাপড়ে ফাঁপা আওয়াজ দেয়। কিন্তু যখন দেশের সার্বভৌমত্ব এবং সীমান্তকে রক্ষা করা বা শত্রুদের বিরুদ্ধে দৃঢ় পদক্ষেপ করার সময় আসে, তখন তাদের সেই দৃঢ়প্রতিজ্ঞা দেখা যায় না।” বিলের নিন্দা জানিয়ে তৃণমূল সাংসদ লিখেছেন, এটি একটি কর্তৃত্ববাদী মনোভাব।

অভিষেকের বক্তব্য, দেশের কৃষক, শ্রমিক এবং দরিদ্র শ্রেণির প্রকৃত অর্থে উন্নয়ন করতে ব্যর্থ হয়েছে কেন্দ্র। দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষার দায়িত্ব পালনেও ব্যর্থ হয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। তিনি লিখেছেন, “এসআইআর বাস্তবায়িত করতে ‘ইসি’ (নির্বাচন কমিশন)-র অপব্যবহারের চেষ্টায় ব্যর্থ হয়ে সরকার এখন আরেকটি ‘ই’— ‘ইডি’ (এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট)-কে সক্রিয় করেছে। বিরোধী নেতাদের নিশানা করে, গণতন্ত্রকে ধ্বংস করে, রাজ্য সরকারগুলিকে ভেঙে দিতে নতুন আইন নিয়ে আসছে।”

সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক এমএ বেবি সমাজমাধ্যমে লিখেছেন, “৩০ দিন হেফাজতে থাকার পরে প্রধানমন্ত্রী, মুখ্যমন্ত্রী এবং মন্ত্রীদের ক্ষমতাচ্যুত করার জন্য মোদী সরকারের বিলগুলি তাদের নয়া-ফ্যাসিবাদী আচরণকেই প্রকাশ করে।” সিপিএমের রাজ্যসভার সাংসদ জন ব্রিটাসের বক্তব্য, দেশের যুক্তরাষ্ট্রীয় পরিকাঠামোকে ভেঙে দিয়ে অবিজেপি দল শাসিত রাজ্য সরকারগুলির স্থিতিশীলতা নষ্ট করার জন্যই এই বিল তৈরি করা হয়েছে।

Amit Shah Lok Sabha parliament BJP Opposition
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy