ফাইল চিত্র
১৮ ঊর্ধ্বদের বিনামূল্যে টিকাকরণের প্রথম দিন সোমবারেই (২১ জুন) রেকর্ড সংখ্যায় টিকাকরণ হয় দেশে। স্বাস্থ্য মন্ত্রকের ওয়েবসাইটে দেওয়া তথ্য থেকে জানা যাচ্ছে, ওই দিন ৮৬ লক্ষের বেশি মানুষকে টিকা দেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে কো-উইন থেকে পাওয়া তথ্য থেকে জানা যাচ্ছে, ওই দিন ৯০ লক্ষ টিকা দেওয়া হয়েছে। তবে পরের দিন মঙ্গলবারই (২২জুন) টিকাকরণের সংখ্যা কমে দাঁড়িয়েছে ৫৪.২৪ লক্ষ। আর এর পরই নানা প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে।
টিকাকরণ কমে যাওয়ার পিছনে যে বড় কারণটি সামনে আসছে তা হল রাজ্যগুলিতে সমসংখ্যায় টিকার জোগান না থাকা। অনেকেই অভিযোগ করছেন যে মধ্যপ্রদেশ-সহ কয়েকটি রাজ্য সোমবার সর্বোচ্চ সংখ্যায় টিকা দেওয়ার জন্য বেশ কয়েকদিন ধরে টিকা মজুত করে রাখছিল। ২১ জুন সব থেকে বেশি টিকা দেওয়া ১০টি রাজ্যের মধ্যে সাতটিই হল বিজেপি শাসিত। স্বাস্থ্যমন্ত্রকের হিসেব থেকে জানা যাচ্ছে, ১৬ জুন থেকে ২০ জুন পর্যন্ত সারা দেশে প্রতিদিন ৪০ লক্ষের কম টিকা দেওয়া হয়েছে। তবে ২১ তারিখ সেই সংখ্যা দ্বিগুণের বেশি ছাড়িয়ে যায়।
১৬ জুন সারা দেশে টিকা দেওয়া হয়েছিল ৩৪ লক্ষ ৬৩ হাজার ৯৬১ জনকে। ১৭ জুন দেওয়া হয় ৩২ লক্ষ ৫৯ হাজার ৩ জনকে, ১৮ জুন ৩৩ লক্ষ ৮৫ জনকে টিকা দেওয়া হয়। ১৯ ও ২০ জুন টিকা দেওয়া হয় যথাক্রমে ৩৮ লক্ষ ১০ হাজার ৫৫৪ জন ও ৩০ লক্ষ ৩৯ হাজার ৯৯৬ জনকে। তবে ২১ জুন এই সংখ্যা বেড়ে হয় ৮৬ লক্ষ ১৬ হাজার ৩৭৩। তবে টিকাকরণ আবারও কমে যায় মঙ্গলবার অর্থাৎ ২২ জুন। মঙ্গলবার সারা দেশে ৫৪ লক্ষ ২৪ হাজার ৩৭৪ জনকে টিকা দেওয়া হয়েছে।
চলতি বছরেই সমস্ত প্রাপ্তবয়স্কদের দুটি টিকা দেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা নিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। কেন্দ্রের লক্ষ্য পূরণের জন্য প্রতিদিন ৯৭ লক্ষ মানুষকে টিকা দিতে হবে। তবে, বর্তমানে টিকার যা জোগান, তাতে সেই লক্ষ্য পূরণ হবে কি না তা নিয়ে প্রশ্ন থাকছেই। সরকারের দাবি, প্রতিদিন প্রয়োজনীয় সংখ্যক টিকা সংরক্ষণ ও দেওয়ার ক্ষমতা তাদের রয়েছে। টিকাকরণ সংক্রান্ত জাতীয় উপদেষ্টা গোষ্ঠীর চেয়ারম্যান এন কে অরোরা বলেন, ‘‘সরকারের লক্ষ্য প্রতিদিন এক কোটি মানুষকে টিকা দেওয়া। আমাদের প্রতিদিন ১ কোটি ২৫ লক্ষ টিকা মজুত করার ক্ষমতা রয়েছে।’’ কেন্দ্রের স্বাস্থ্য সচিব রাজেশ ভূষণ বলেন, কেন্দ্র টিকাকরণের ক্ষেত্রে রাজ্যগুলির সঙ্গে পুরোপুরি সহযোগিতা করছে। আমরা রাজ্যগুলিকে জানিয়ে দিচ্ছি যে তারা আগামী ১৫ দিন কত টিকা পাবে। তাতে রাজ্যগুলি আরও ভাল পরিকল্পনা করতে পারছে।’’
কেন্দ্রীয় সরকার দাবি করলেও টিকার যথেষ্ট জোগান না থাকার ছবিটা প্রকট। সোমবার মধ্যপ্রদেশে ১৭ লক্ষ টিকা দেওয়া হয়। আর সেই রাজ্যেই মঙ্গলবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা পর্যন্ত ৫ হাজারের কম টিকা দেওয়া হয়েছে। বিরোধীদের অভিযোগ, মধ্যপ্রদেশ-সহ কয়েকটি রাজ্য সরকার গত কয়েকদিন ধরেই টিকা মজুত করছিল সোমবার রেকর্ড সংখ্যায় টিকা দেওয়ার জন্য। তবে, একদিন পরই আবারও একই জায়গায় ফিরে গিয়েছে। কংগ্রেস নেতা ও প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী পি চিদম্বরম মঙ্গলবার টিকা দেওয়ার সংখ্যা কমে যাওয়া নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারকে কটাক্ষ করেছেন। টুইটে প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী লেখেন, ‘রবিবারে মজুত, সোমবার টিকা এবং মঙ্গলবার আবার খোঁড়াতে শুরু করল। এটাই একদিনে টিকাকরণে ‘বিশ্ব রেকর্ড’ করার পিছনে গোপন বিষয়।’ কাটা ঘায়ে নুনের ছিটে দিয়ে চিদম্বরম বলেন, ‘‘আমি নিশ্চিত যে এই কীর্তি গিনেস বুকে জায়গা পাবে! কে জানে, মোদী সরকারকে হয়ত মেডিসিনের জন্য নোবেল পুরস্কার দেওয়া হতে পারে। ‘মোদী হ্যায় তো মুমকিন হ্যায়’ না পড়ে এখন অবশ্যই ‘মোদী হ্যায় তো মিরাকল হ্যায়’ পড়তে হবে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy