(বাঁ দিকে) লোকসভায় ঢুকে হলুদ রঙের গ্যাস ছোড়েন হামলাকারীরা। খগেন মুর্মু (ডান দিকে)। ছবি: সংগৃহীত।
সকালে ঠিক সময়েই সংসদে গিয়েছিলাম। জিরো আওয়ারে আমার প্রশ্ন করার কথা ছিল। মালদহে যে বিমানবন্দর হওয়ার কথা, সেটা নিয়েই বলার ছিল। বক্তৃতা করতে উঠে আমি তো সামনের দিকে তাকিয়ে বলছিলাম। কিছুটা বলেছি, তার পরেই কানে এল চিৎকার। কারা যেন বলে চলেছে, ‘তানাশাহি নেহি চলেগা’। তখন পিছন ফিরে দেখি দু’জন গ্যালারি থেকে লাফিয়ে পড়ে সামনের দিকে আসছে। মুখে স্লোগান চলছে। ওদের চেহারা কেমন দেখতে পাইনি। আসলে তত ক্ষণে চারদিকে ধোঁয়া আর ধোঁয়া।
এই দিনটাতেই যে ২২ বছর আগে সংসদে হামলা হয়েছিল সেটা আমার জানাই ছিল না। পরে জেনেছি। তবে সেই সময়টায় কিছু ভাবার অবস্থায় ছিলাম না আমি। ভয়ে তো আমার হাত-পা ঠান্ডা হয়ে গিয়েছে। বক্তৃতা তো আগেই বন্ধ করে দিয়েছিলাম। তখন ভাবছি বসে পড়ব, না বেরিয়ে যাব। তত ক্ষণে দেখি হুড়োহুড়ি লেগে গিয়েছে। যাঁরা দরজার কাছাকাছি ছিলেন তাঁরা বেরিয়ে গিয়েছেন অনেকেই। আমি মাঝামাঝি জায়গায়। ওদের হাতে বোমার মতো কিছু ছিল। আমি তো বোমাই ভেবেছি। পরে শুনলাম ওগুলো ‘রং বোমা’। কিন্তু আমি তো প্রথমে সত্যি বোমাই ভেবেছি। আর তাতেই ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। ইষ্টনাম জপ করতে শুরু করে দিয়েছিলাম।
এ সব ভাবার মধ্যেই দেখি ধোঁয়া ছড়িয়ে পড়ছে। অন্য দিকে, সাংসদেরাই ওই দু’জনকে ঘিরে ফেলেন। ধরেও ফেলেন। তার পরে নিরাপত্তারক্ষীদের হাতে তুলে দেন। আমি অবশ্য সেখানে যাইনি। তবে কিছু ক্ষণের মধ্যেই বুঝতে পারি, বিপদ ততটা বড় কিছু নয়। আমি এখন ঠিক করেছি বাসভবনে চলে যাব। লোকসভা শুরু হলে আবার আসব।
কিন্তু একটা বিষয় এখনও আমার মাথায় আসছে না, ওই দু’জন সংসদে ঢুকে পড়ল কী করে? এত আঁটসাঁট নিরাপত্তা থাকা সত্ত্বেও দু’জনে ঢুকে পড়েছে কী ভাবে, সেই প্রশ্নটা আমার মন থেকে যাচ্ছে না। শুধু তো ঢুকে পড়া নয়, তাদের হাতে বোমা ছিল। সেটা সত্যিকারের বোমা হোক বা ‘রং বোমা’ নিরাপত্তাকর্মীরা তা জানতে পারলেন না কেন? বড় রকমের কোনও বিপদ হয়ে যেতে পারত। সেটা যে হয়নি, তা ঈশ্বরের অশেষ কৃপা। তবে একটা বিষয় জেনে নিশ্চিন্ত লাগছে যে, কোনও সাংসদের কিছু হয়নি। সকলেই নিরাপদ এবং অক্ষত রয়েছেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy