Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

সাইবার হানা মনে করাচ্ছে ঠান্ডা যুদ্ধকে

বিশ্বের সঙ্গে যেন যুদ্ধে নেমেছে সাইবার দস্যুরা! নাকি দেশে দেশে ছায়াযুদ্ধের এটাই নয়া কেতা?‘ওয়ানাক্রাই’ ভাইরাসের হামলার চার দিন পরেও নাকাল দশা থেকে বেরোতে পারছে না বিশ্বের শ’দেড়েক দেশ। বরং পরিস্থিতি আরও ঘোরালো হয়ে উঠছে।

কুন্তক চট্টোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৬ মে ২০১৭ ০৩:২০
Share: Save:

বিশ্বের সঙ্গে যেন যুদ্ধে নেমেছে সাইবার দস্যুরা! নাকি দেশে দেশে ছায়াযুদ্ধের এটাই নয়া কেতা?

‘ওয়ানাক্রাই’ ভাইরাসের হামলার চার দিন পরেও নাকাল দশা থেকে বেরোতে পারছে না বিশ্বের শ’দেড়েক দেশ। বরং পরিস্থিতি আরও ঘোরালো হয়ে উঠছে। কম্পিউটারকে পণবন্দি করে ফেলার ওই ভাইরাস (র‌্যানসমঅয়্যার) শুক্রবার হামলা চালিয়েছিল ব্রিটেন, ভারত, আমেরিকা, রাশিয়া-সহ শ’খানেক দেশে। সোমবার সংখ্যাটা পৌঁছে গিয়েছে দেড়শোর কাছাকাছি।

ভাইরাসের এই হানা উস্কে দিচ্ছে সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন ও আমেরিকার ‘ঠান্ডা যুদ্ধ’-এর স্মৃতি। সোমবার বিবৃতি দিয়ে সাইবার হামলার পিছনে আমেরিকাকে দায়ী করেছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। তাঁর দাবি, ‘‘এই হানার সঙ্গে রাশিয়া জড়িত নয়।’’

পুতিন মনে করেন, সাইবার নিরাপত্তা নীতি নিয়ে বিশ্বের রাষ্ট্রপ্রধানদের বৈঠকে বসা প্রয়োজন। সাইবার বিশেষজ্ঞেরাও বলছেন, সাইবার দুনিয়ায় এখন যাবতীয় গুরুত্বপূর্ণ তথ্য মজুত করা হচ্ছে। ফলে কোনও দেশকে বিপদে ফেলতে এই ধরনের হামলাই বেছে নেবে শত্রুপক্ষ। বিশ্বের প্রথম সারির তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থা মাইক্রোসফটের প্রেসিডেন্ট এবং চিফ লিগ্যাল অফিসার ব্র্যাড স্মিথের তাই বক্তব্য, ‘‘এই সাইবার হানার পরে বিশ্ব রাজনীতির নিয়ন্ত্রক দেশগুলির ঘুম ভাঙা উচিত।’’ মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা ন্যাশনাল সিকিউরিটি এজেন্সি (এনএসএ)-র রিপোর্ট বলছে, আমেরিকারই ‘ইটারনাল ব্লু’ নামের ‘ম্যালওয়্যার’ দিয়ে কম্পিউটার পণবন্দি করার এই অভিযান চালানো হয়েছে। এর পিছনে ‘শ্যাডো ব্রোকার্স’ নামে একটি হ্যাকার গোষ্ঠীর কথাও উঠে আসে তাদের তদন্তে।

মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থার ওই ম্যালওয়ার চুরির কথা জানাজানি হতেই তাজ্জব বনে যান অনেকে। এমন মারাত্মক অস্ত্র তৈরি করা ও অরক্ষিত রাখার জন্য আমেরিকাকে দুষছেন প্রাক্তন এনএসএ কর্তা এডওয়ার্ড স্নোডেন। পুতিনও আমেরিকাকে কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে বলেছেন, ‘‘গোয়েন্দা সংস্থার তৈরি করা ম্যালওয়্যার তার স্রষ্টাদের উপরেই হামলে পড়ছে।’’ মাইক্রোসফট কর্তার মতে, এনএসএ-র ভাঁড়ার থেকে সফটওয়্যার চুরি করা কার্যত মার্কিন সেনার কাছ থেকে টোম্যাহক ক্ষেপণাস্ত্র চুরি করার সামিল।

সাইবার নিরাপত্তা নিয়ে রাশিয়া-আমেরিকার ‘ঠান্ডা যুদ্ধ’ এই প্রথম নয়। ২০১৩ সালে স্নোডেনকে মস্কোয় আশ্রয় দেওয়ার সময় থেকেই তা চলছে। গত মার্চ মাসে সাইবার হানা ও হ্যাকিং নিয়ে রাশিয়াকে দুষেছিল আমেরিকা। দু’দিন আগেও রাশিয়ায় তৈরি ও ভারত-সহ গোটা বিশ্বে ব্যবহৃত সাইবার নিরাপত্তার একটি সফটওয়্যার সম্পর্কে তাদের সন্দেহের কথা জানিয়েছেন মার্কিন গোয়েন্দারা।

গত শনিবারই এক গবেষক দাবি করেছিলেন, ‘ওয়ানাক্রাই’কে বাগে আনার দাওয়াই বার করেছেন তিনি। বসে নেই হ্যাকাররাও। এর পরপরই তারা ওই ভাইরাসকে আরও উন্নত করেছে। সহজে আর নিষ্ক্রিয় করা যাচ্ছে না সেটিকে। যদিও ব্রিটেনের স্বাস্থ্য সংস্থার কম্পিউটারে ঢুকে পড়া ভাইরাসকে এ দিন অনেকটাই বাগে আনা গিয়েছে। একটি চিনা সংস্থার সূত্রে দাবি করা হয়েছে, সে দেশে আক্রান্ত কয়েক হাজার কম্পিউটার। জাপানে পণবন্দি হয়েছে প্রথম সারির বেশ কয়েকটি সংস্থার কম্পিউটার।

প্রথম দিকে তা-ও আক্রান্ত কম্পিউটারকে মুক্ত করার জন্য ৩০০ ডলার চাওয়া হচ্ছিল ‘বিট কয়েন’-এর মাধ্যমে। সাঙ্কেতিক নিরাপত্তার মো়ড়া এই অনলাইন পেমেন্ট পরিষেবা ভারতে নিষিদ্ধ। এ বার অঙ্কটা আরও বাড়ানো হবে বলে হুমকি দিয়েছে হ্যাকাররা। সাইবার নিরাপত্তা সংস্থাগুলি বলেছে, মুক্তিপণ দিলেই ছাড় মিলবে, এমন ভাবার কারণ নেই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Cyber crime Wanna Cry Ransomware Cold War
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE