Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

শিমলায় জল নেই, বিপাকে পর্যটকেরাও

কলকাতা থেকে দশ জনের দল নিয়ে মঙ্গলবার শিমলা পৌঁছেছেন ট্যুর ম্যানেজার প্রবীর চট্টোপাধ্যায়। এ দিন সিমলা থেকে ফোনে বলেন, ‘‘সব হোটেলেরই এক অবস্থা। মঙ্গলবার আমাদের হোটেলে যত পর্যটক ছিলেন, বুধবার সংখ্যাটা কমে গিয়েছে। হোটেলের তরফে জল কেনাও হয়েছে।’’

জল পাওয়ার জন্য দীর্ঘ লাইনে শিমলার বাসিন্দারা।

জল পাওয়ার জন্য দীর্ঘ লাইনে শিমলার বাসিন্দারা।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ৩১ মে ২০১৮ ০৩:১৯
Share: Save:

ভরা পর্যটনের মরসুমে প্রবল জলসঙ্কটে হিমাচলপ্রদেশের রাজধানী শিমলা। গত আট দিন ধরে। রাস্তায় নেমে চিৎকার করে জল চাইছেন বাসিন্দারা। শিমলা-কালকা জাতীয় সড়ক এবং মান্ডিগামী রাস্তাও অবরোধ করা হয়েছে।

মঙ্গলবার শহরে এসেছিল মাত্র ১ কোটি ৮০ লক্ষ লিটার জল। অথচ শিমলায় দৈনিক চাহিদা ৪ কোটি ৫০ লক্ষ লিটার জল। বাধ্য হয়ে চড়া দামে জল কিনছেন কেউ কেউ। বাসিন্দাদের অভিযোগ, বিজেপি শাসিত পুরসভা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে তেমন কিছুই করছে না।

গুলমার্গ হোটেলে চাকরি করেন সোমনাথ মজুমদার। বুধবার সন্ধ্যায় ফোনে বলেন, ‘‘পর্যটকেরা তো তাও জল কিনে খেতে পারছেন। কিন্তু, স্থানীয় মানুষ তো জল কিনে খেতে পারেন না। তাঁদের সমস্যা সবচেয়ে বেশি।’’ তাঁর হোটেলও এ দিন এক ট্যাঙ্কার জল কিনেছে। হোটেলের উল্টোদিকে সেনাবাহিনীর যে ছাউনি রয়েছে, সেখানেও ট্যাঙ্কার ভর্তি জল কেনা হচ্ছে। সোমনাথের কথায়, ‘‘গত ১০ দিন ধরে হাহাকার শুরু হয়েছে। ব্রিটিশ আমলে রিজ ময়দানে যে টালা ট্যাঙ্কের মতো জলের ট্যাঙ্ক তৈরি হয়েছিল, তা দিয়ে এখনও চলছে। কত পর্যটক বেড়ে গিয়েছে। তা-ও তো এ বছর ভিড়টা তুলনায় কম।’’ জানা গিয়েছে, হোটেলের ঘর লাগোয়া শৌচালয়ে জল পাওয়া যাচ্ছে না। হাত-মুখ ধোয়ার জন্য পরিবার প্রতি এক বালতি করে জল দেওয়া হচ্ছে। তা-ও জল কিনে দেওয়ার মতো ক্ষমতা সব হোটেলের নেই।

কলকাতা থেকে দশ জনের দল নিয়ে মঙ্গলবার শিমলা পৌঁছেছেন ট্যুর ম্যানেজার প্রবীর চট্টোপাধ্যায়। এ দিন সিমলা থেকে ফোনে বলেন, ‘‘সব হোটেলেরই এক অবস্থা। মঙ্গলবার আমাদের হোটেলে যত পর্যটক ছিলেন, বুধবার সংখ্যাটা কমে গিয়েছে। হোটেলের তরফে জল কেনাও হয়েছে।’’

বুধবার দুপুরে অনেক ভোগান্তির পরে শিমলা পৌঁছেছেন সল্টলেকের বাসিন্দা মিনা সাহা। বুধবার দুপুরে হোটেলে পৌঁছে দেখেন, জল নেই। তাঁর কথায়, ‘‘মাথা কী রকম গরম হয়ে যায় বলুন! ঢুকতেই বলল, ‘বাথরুমের পাইপে জল নেই। মেরেকেটে এক বালতি জল দিতে পারি।’ তার পরে হোটেলের কর্মীরা বললেন, জলের জন্য তাঁরাও নাকি ধর্মঘট করছেন। ফলে, দুপুরে ঘরে খাবার পাব না। ঘরের বিছানার চাদরও বদলে দেবে না।’’ রেগেমেগে বিকেলেই অন্য হোটেলে এসে উঠেছেন মিনাদেবী। দুপুরে বাইরের রেস্তরাঁয় খাবার সেরেছেন। সেখানেও পাইপে জল নেই। বেসিনের তলায় বালতিতে জল রাখা। হোটেলের কর্মী সোমনাথ জানিয়েছেন, অবিলম্বে সুরাহা না হলে আগামী দু’তিন দিনের মধ্যে পানীয় জল নিয়েও মারামারি শুরু হবে।

শিমলায় পাঁচটি জায়গা থেকে জল সরবরাহের ব্যবস্থা রয়েছে। তার মধ্যে অশ্বিনী খাদ থেকেই সব চেয়ে বেশি জল আসত। তবে ২০১৫ সালে জলে দূষণের পর ওই জল সরবরাহের প্রকল্প বন্ধ। তা ছাড়া, গত শীতে বৃষ্টি এবং তুষারপাত কম হওয়ায় জলের অভাব আরও বেড়ে গিয়েছে।

পরিস্থিতি এতটাই জটিল যে, সোমবার হিমাচলপ্রদেশ হাইকোর্ট স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে নির্দেশ দিয়েছে, শহরে সব রকম নির্মাণ কাজ বন্ধ করে দেওয়া হোক। এক সপ্তাহের জন্য বন্ধ রাখা হোক গাড়ি ধোয়া। ট্যাঙ্কারে ভিআইপিদের জল সরবরাহও বন্ধ করার কথা বলেছে কোর্ট।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Shimla water crisis
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE