Advertisement
০৫ মে ২০২৪

ছুটি কীসের, কাজ করুন, মন্ত্রীদের মন্ত্র মোদীর

মন্ত্রিসভায় নিজের দখল আরও বাড়িয়ে রবিবার গভীর রাতে দফতর বণ্টন সেরে প্রধানমন্ত্রী স্পষ্ট করে দিয়েছেন, সরকার পরিচালনার ক্ষেত্রে যোগ্যতার মাপকাঠিই তাঁর কাছে শেষ কথা। কাজ করলে পুরস্কার, না করলে তিরস্কার এই মন্ত্রেই মন্ত্রিসভার সম্প্রসারণ করতে গিয়ে অনেকের ডানা ছেঁটেছেন নরেন্দ্র মোদী। আবার অনেকের গুরুত্ব বাড়িয়েছেন। আর তার পরে সোমবার সকলকে এক সঙ্গে নিয়ে বসে দিয়েছেন নতুন নির্দেশ। কী সেই নির্দেশ? সোমবার মন্ত্রিসভার সব সদস্যের সঙ্গে বৈঠকে বসে প্রধানমন্ত্রী জানিয়ে দেন, মন্ত্রিত্ব কোনও আংশিক সময়ের কাজ নয়।

পিটিআই ফাইল চিত্র

পিটিআই ফাইল চিত্র

দিগন্ত বন্দ্যোপাধ্যায়
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১১ নভেম্বর ২০১৪ ০৩:০৭
Share: Save:

মন্ত্রিসভায় নিজের দখল আরও বাড়িয়ে রবিবার গভীর রাতে দফতর বণ্টন সেরে প্রধানমন্ত্রী স্পষ্ট করে দিয়েছেন, সরকার পরিচালনার ক্ষেত্রে যোগ্যতার মাপকাঠিই তাঁর কাছে শেষ কথা। কাজ করলে পুরস্কার, না করলে তিরস্কার এই মন্ত্রেই মন্ত্রিসভার সম্প্রসারণ করতে গিয়ে অনেকের ডানা ছেঁটেছেন নরেন্দ্র মোদী। আবার অনেকের গুরুত্ব বাড়িয়েছেন। আর তার পরে সোমবার সকলকে এক সঙ্গে নিয়ে বসে দিয়েছেন নতুন নির্দেশ।

কী সেই নির্দেশ? সোমবার মন্ত্রিসভার সব সদস্যের সঙ্গে বৈঠকে বসে প্রধানমন্ত্রী জানিয়ে দেন, মন্ত্রিত্ব কোনও আংশিক সময়ের কাজ নয়। তাই এখন থেকে তাঁর মন্ত্রিসভার সদস্যদের কোনও ছুটি নেই! শুধু তা-ই নয়, নতুনরা-সহ সব মন্ত্রীকেই তাঁর নির্দেশ, দফতরের কাজকর্ম দ্রুত বুঝে নিতে হবে। সামনেই সংসদের শীতকালীন অধিবেশন। তার পরে বাজেট অধিবেশন। সে কথা মাথায় রেখেই দ্রুত তৈরি হতে হবে। একই সঙ্গে অধিবেশন চলাকালীন মন্ত্রীদের বিদেশ সফর এড়ানোর পরামর্শও দিয়েছেন মোদী।

সব মিলিয়ে প্রধানমন্ত্রীর বার্তা স্পষ্ট। মন্ত্রীদের কাজে কোনও ঢিলেমি তিনি মেনে নেবেন না। তাই মন্ত্রিসভার ‘বিগ-ফোরে’ও বড় বদল এনেছেন তিনি। তার মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হল প্রতিরক্ষায় মনোহর পর্রীকরকে আনা। এই মন্ত্রকে এক জন পূর্ণ সময়ের মন্ত্রীকে আনতে চাইছিলেন মোদী। তাই অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলির হাতে অতিরিক্ত হিসেবে থাকা প্রতিরক্ষাকে তুলে দিয়েছেন পর্রীকরের হাতে। যাঁর ভাবমূর্তিও স্বচ্ছ। জেটলির অবশ্য ভার বিশেষ কমেনি! তাঁকে বাড়তি হিসেবে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রক দেওয়া হয়েছে। কারণ গত পাঁচ মাসে মোদী বুঝেছেন, সরকারের কাজকর্ম তুলে ধরা ও বিরোধীদের জবাব দেওয়ার জন্য জেটলির মতো একটি মুখ চাই তাঁর।

এবং সুরেশ প্রভু। পরিকাঠামো ক্ষেত্রে প্রভুর অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগাতে চান মোদী। আজ রেল মন্ত্রকের দায়িত্ব নিয়েই প্রভু পরিকাঠামো ক্ষেত্রের অন্য মন্ত্রী নিতিন গডকড়ীর সঙ্গে বৈঠক করেছেন। বিজেপির এক নেতার কথায়, “লক্ষ্য করুন, ‘বিগ-ফোর’এ জেটলির গুরুত্ব বেড়েছে। নতুনদের মধ্যে সবথেকে বেশি গুরুত্ব পেয়েছেন পর্রীকর ও প্রভু। বাকি রইল সুষমা স্বরাজের হাতে থাকা বিদেশ মন্ত্রক। সেটি বকলমে মোদী নিজেই চালান। আর রাজনাথ সিংহ মোদী সরকারের ঘোষিত ‘নম্বর টু’ হলেও তাঁর সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর সম্পর্কে টানাপোড়েন রয়েছে। হয়তো তাই গুজরাতের এক সাংসদকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকে প্রতিমন্ত্রী করে আনা হয়েছে রাজনাথকে চাপে রাখতে।” গত পাঁচ মাসে যাঁদের কাজকর্ম সন্তোষজনক নয়, তাঁদের গুরুত্ব কমিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। তার সবথেকে বড় প্রমাণ সদানন্দ গৌড়া। রেল মন্ত্রকে তিনি যে মোদীর প্রত্যাশা পূরণ করতে পারছেন না, তা প্রধানমন্ত্রী নিজেই বারবার বুঝিয়ে দিয়েছেন। এখন গৌড়াকে যে আইন মন্ত্রকে পাঠানো হল, সেটি বকলমে দেখেন জেটলি। একই কারণে রবিশঙ্করকেও সরানো হয়েছে। গত কয়েক মাসে সুপ্রিম কোর্ট যে ভাবে নানা বিষয়ে সরকারের সমালোচনা করছে আর বিরোধীরা সেটিকে হাতিয়ার করেছে, তাতে অখুশি ছিলেন প্রধানমন্ত্রী। রবিশঙ্করের হাতে যোগাযোগ ও টেলিকম থাকলেও তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী হিসেবে ‘ডিজিটাল ইন্ডিয়া’র মতো মোদীর সাধের প্রকল্পের উপর নজরদারি করবেন কিন্তু সেই জেটলি-ই।

স্বাস্থ্য মন্ত্রক থেকে সরানো হয়েছে হর্ষ বর্ধনকে। বিজেপি নেতাদের দাবি, দিল্লিতে বিধানসভা ভোটের পরে হর্ষ বর্ধনই রাজ্যের মুখ। তাই তাঁকে আপাতত বিজ্ঞান-প্রযুক্তির মতো তুলনামূলক লঘু মন্ত্রকে পাঠানো হল। কিন্তু বিজেপিরই অনেকে বলেছেন, নিজে চিকিৎসক হলেও হর্ষ বর্ধন যে ভাবে স্বাস্থ্য মন্ত্রকে নিজের এজেন্ডা চালাতে ব্যস্ত ছিলেন, তা ভাল ভাবে নেননি মোদী। এখন হাল ফেরাতে জগৎ প্রকাশ নড্ডাকে দায়িত্ব দিয়ে মোদী চাইছেন, তিনি যেন দেশের স্বাস্থ্য ভাল করতে পারেন।

পার্রীকর যখন মন্ত্রিসভার ‘বিগ ফোর’-এ ঢুকে পড়লেন, তখন তাঁরই রাজ্যের সাংসদ শ্রীপদ নাইকের কাছ থেকে সংস্কৃতি, পর্যটন মন্ত্রক কেড়ে নিলেন মোদী। নতুন মুখ নয়ডার সাংসদ মহেশ শর্মা। রাজনাথ ঘনিষ্ঠ রাজীব প্রতাপ রুডি গতকাল সকালে মোদীর চা-চক্রের আগেই টুইট করে ঘোষণা করেছিলেন, তিনি স্বাধীন দায়িত্বের প্রতিমন্ত্রী হচ্ছেন। মোদীর বিষয়টি ভাল লাগেনি। রুডিকে শুধু কারিগরি উন্নয়ন মন্ত্রকেই সন্তুষ্ট থাকতে হয়েছে। দীর্ঘদিন বিজেপির মুখপাত্র থাকলেও সরকারের মুখ হতে না পারায় তথ্য-সম্প্রচার মন্ত্রক হারাতে হয়েছে প্রকাশ জাভড়েকরকে। উত্তর-পূর্বে ভাল কাজ না করায় সরানো হয়েছে প্রাক্তন সেনাপ্রধান ভি কে সিংহকে। জেটলির সঙ্গে কিছু বিষয়ে বিবাদ হওয়ায় অর্থ, কর্পোরেট বিষয়ক প্রতিমন্ত্রীর পদ খুইয়েছেন নির্মলা সীতারামণ। পরিবর্তে এসেছেন জয়ন্ত সিন্হা। শ্রম মন্ত্রক থেকে নরেন্দ্র সিংহ তোমরকেও সরিয়েছেন মোদী।

কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার এক শীর্ষ সদস্যের কথায়, “প্রথম মন্ত্রিসভা গঠনের পরেই মন্ত্রীদের ডেকে প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন, যে জনতা এত ভোট দিয়ে বিজেপিকে ক্ষমতায় বসিয়েছে, তাদের প্রত্যাশা পূরণ করতেই হবে। রবিবার যে ভাবে অনেকের ডানা ছেঁটেছেন মোদী, তাতে বার্তা রয়েছে ভবিষ্যতেরও। কাজ না করলে আগামী দিনে আরও অনেককেই সরিয়ে দেবেন তিনি।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE