Advertisement
০৮ মে ২০২৪

৯৩ নট আউট! এজলাসে অনড় জেঠমলানী

নব্বই পেরিয়েও টানটান! একটুও নার্ভাস নন। সহকর্মীরা বলেন, এখনও তিনি এজলাসে দাঁড়িয়ে মুখ খুললে অনেক কিছু শেখা যায়। আর নিন্দুকেরা বলেন, মুখে যেন খই ফুটছে! কিছুতেই থামানো যায় না।

সংবাদ সংস্থা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২৪ অগস্ট ২০১৬ ০৩:০১
Share: Save:

নব্বই পেরিয়েও টানটান! একটুও নার্ভাস নন। সহকর্মীরা বলেন, এখনও তিনি এজলাসে দাঁড়িয়ে মুখ খুললে অনেক কিছু শেখা যায়। আর নিন্দুকেরা বলেন, মুখে যেন খই ফুটছে! কিছুতেই থামানো যায় না।

কতকটা যেন সে রকমই। থামতে চাইছেন না রাম জেঠমলানী। এই মুহূর্তে দেশের অন্যতম প্রবীণ আইনজীবী। বিতর্কিতও। সম্প্রতি সুপ্রিম কোর্টে দাঁড়িয়ে খোদ প্রধান বিচারপতিকেই তিনি ঠারে-ঠোরে বুঝিয়ে দিলেন, যত দিন বাঁচবেন, চালিয়ে যাবেন আইনি লড়াই। তারিখ পে তারিখ!

দিন কয়েক আগের ঘটনা। ভরা কোর্টরুমে তাঁর আইনজীবী-মক্কেল এম এম কাশ্যপের হয়ে সওয়াল করছিলেন রাম জেঠমলানী। কাশ্যপের বিরুদ্ধে ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ এনে বছর দুয়েক আগে তাঁকে তাঁর বরাদ্দ চেম্বার থেকে উঠে যাওয়ার নির্দেশ দেয় আদালত। জেঠমলানীর অবশ্য দাবি, তাঁর মক্কেল নির্দোষ। সে দিন তারই যুক্তি দিচ্ছিলেন প্রধান বিচারপতি টি এস ঠাকুরের বেঞ্চকে। হঠাৎই কাটল ছন্দ। ‘আপনি অবসর নিচ্ছেন কবে?’ প্রশ্নকর্তা টি এস ঠাকুর। নেহাতই রসিকতা। জেঠমলানীও যেন আগে থেকে তৈরি হয়ে এসেছিলেন। তাই পলক ফেলার আগেই তিনি এর উত্তরে পাল্টা প্রশ্ন ছুড়লেন— ‘‘আমি কবে মরব, সেটাই জানতে চাইছেন কি?’’ আকারে-ইঙ্গিতে বুঝিয়ে দিলেন —তিনি নাছোড়বান্দা।

ঠিক যেমনটা ছিলেন মাত্র আঠারো বছর বয়সে বার কাউন্সিলে নাম লেখানোর সময়। একাধিক প্রমোশন পেয়ে ১৩-তেই ম্যাট্রিক পেরোন জেঠমলানী। ১৭-য় এলএলবি ডিগ্রি হাসিল। ২১ না হলে সে সময় আইনজীবী হওয়া যেত না। জেঠমলানী অবশ্য তখন থেকেই ‘স্পেশ্যাল কেস’।

বছর খানেক আগে আবার এই জেঠমলানীই বলেছিলেন, ‘‘কাজ না করাটাও আমার সাংবিধানিক অধিকারের মধ্যে পড়ে।’’ সে বার বিষয়টা ছিল গুরুগম্ভীর। আইনজীবীদের ধর্মঘটে যাওয়া উচিত নয় বলে মন্তব্য করেছিল সুপ্রিম কোর্ট। তার প্রতিক্রিয়াতেই কাজ না করার কথা বলেছিলেন জেঠমলানী। এ বার ছবিটা অন্য।

মজার ছলেই জানিয়ে দিলেন এখনই অবসরে মতি নেই তাঁর। তাঁর এজলাস-রাজে আপত্তি থাকার কথা নয় সুপ্রিম কোর্টেরও। কেননা, আইনজীবীদের অবসরের বয়স নিয়ে সম্প্রতি কোনও ঊর্ধ্বসীমা না রাখার নির্দেশ দিয়েছে শীর্ষ আদালতই। জেঠমলানী তাই দিব্যি এজলাসেও আসছেন। আবার লুটিয়েন দিল্লির বাংলোতে নিয়মিত ব্যাডমিন্টনও খেলছেন। এই তিরানব্বইয়েও!

এজলাসের সওয়াল-জবাবে বয়স যে কোনও বাধা নয়, বোঝাচ্ছেন আরও অনেকে। এখনও সুপ্রিম কোর্টে দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন নবতিপর শান্তিভূষণ। শীর্ষ আদালতে নিয়মিত যাতায়াত রয়েছে ফলি নরিম্যান, সোলি সোরাবজি, টি আর অন্ধারুজিনার মতো ডাকসাইটে প্রবীণ আইনজীবীদের। কলকাতা হাইকোর্টের বিশিষ্ট আইনজীবী শক্তিনাথ মুখোপাধ্যায়ও যেমন। বার্ধক্যেও শিরোনামে রয়েছেন কাশীকান্ত মৈত্র, পশ্চিমবঙ্গের বর্তমান অ্যাডভোকেট জেনারেল জয়ন্ত মিত্রেরা।

জেঠমলানী তবু বরাবরের ‘স্পেশ্যাল’। দেশজোড়া আইনজীবী মহলের একটা বড় অংশের তেমনটাই দাবি। অটলবিহারী বাজপেয়ী জমানায় আইনমন্ত্রী ছিলেন তিনি। ২০০২-এ গোধরা-কাণ্ডে গুজরাত সরকারের হয়েই সওয়াল করেছিলেন। এখন তিনি বিজেপি থেকে বহিষ্কৃত। আরজেডি-র টিকিটে রাজ্যসভার সাংসদ। ঘরে-বাইরে ইদানীং অকপট ভাবেই প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে মুখ খুলে চলেছেন জেঠমলানী। বলছেন, ‘মোদী আমাকে ঠকিয়েছেন।’ রাজনীতির ময়দানে তা-ই তিরানব্বইয়ে পৌঁছেও নতুন করে স্বপ্ন দেখছেন। থামতে জানেন না যে!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

ram jethmalani Supreme court
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE