ঋষি সুনক। ফাইল চিত্র।
বরিস জনসনের দেওয়া দীপাবলির সময়-রেখা পার হয়ে গিয়েছে। ব্রিটেনের রাজনীতিতে পালাবদলের পর এ বার কূটনৈতিক মহলের প্রশ্ন, ভারত-ব্রিটেন মুক্ত বাণিজ্যচুক্তি কি ২০২২-এর মধ্যে আদৌ হবে?
কূটনৈতিক সূত্র জানাচ্ছে, ভারতীয় বংশোদ্ভূত ব্রিটেনের নতুন প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনকের অভিষেক এই চুক্তির জন্য সুখবর। বরিস জনসনের মতো তিনিও ভারত-ব্রিটেন মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির সমর্থক। কনজা়রভেটিভ পার্টি সূত্রে খবর, দুই দেশের মধ্যে পারস্পরিক বিনিময়ের সম্পর্ক তৈরি করতে চান সুনক। সম্প্রতি উত্তর লন্ডনের অনুষ্ঠানে সুনককে প্রশ্ন করা হয়েছিল, ব্রিটেন এবং ভারতের মধ্যে সম্পর্ক নিয়ে তিনি কী ভাবছেন? জবাবে তিনি বলেছিলেন, ‘‘আমরা সকলেই জানি, ভারত-ব্রিটেন সম্পর্ক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। দু’দেশের মধ্যে আমরা সেতু।’’
কিন্তু সুনক এসেছেন বলেই যে দ্রুত এই চুক্তি সই হয়ে যাবে, এতটা আশা করছে না বিশেষজ্ঞ মহল। তিনিও ব্রিটেনের জাতীয় স্বার্থের বাইরে গিয়ে ভারতকে ছাড় দেবেন, এমনটা কূটনৈতিক ভাবে বাস্তব নয় বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। এই বাণিজ্য চুক্তি রূপায়ণের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় সমস্যা ‘ডেটা লোকালাইজেশন’ সংক্রান্ত জটিলতা নিয়ে। অর্থাৎ ভারত চায়, এ দেশে বাণিজ্য করতে আসা ব্রিটিশ সংস্থাগুলি এখানকার পরিষেবাজাত তথ্য নিজেদের ঘরে যেন না নিয়ে নেয়। বিষয়টির নিরাপত্তাগত দিক রয়েছে। তা ছাড়া, ভারতীয় বাজার এবং উপভোক্তা সংক্রান্ত বিপুল তথ্য বিদেশে চলে যাক, এটা চায় না ভারত। সে ক্ষেত্রে ভারতের দাবি, ব্রিটিশ সংস্থাগুলিকে ভারতের জন্য নির্দিষ্ট স্থানীয় সার্ভার তৈরি করতে হবে, যা কি না ব্যয়বহুল।
সুনক প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর এই বিষয়টি নিয়ে কী ভাবে দরকষাকষি হয়, এখন সে দিকেই তাকিয়ে রয়েছে সংশ্লিষ্ট মহল। পাশাপাশি ব্রিটেন চাইছে ভারতের সরকারি বরাতের ক্ষেত্রেও তাদের সংস্থাগুলি যেন দরপত্র দিতে পারে। এটাও চুক্তি রূপায়ণের ক্ষেত্রে একটি জট। আবার ভারতও ব্রিটেনের বাজারের আরও বেশি নাগাল পেতে চাইছে। নয়াদিল্লি এ কথা স্পষ্ট করে দিয়েছে, ব্রিটেন স্বাস্থ্য পরিষেবা এবং তথ্যপ্রযুক্তি ক্ষেত্রে ভারতীয় পরিষেবার প্রবেশের পথ আরও প্রশস্ত করলে তবেই তারা ব্রিটেনের হুইস্কি আমদানির ক্ষেত্রে শুল্ক ছাড় দেবে।
সন্ধেবেলা তাঁর নতুন ক্যাবিনেট ঘোষণার সময়ে সুয়েলা ব্রেভারম্যানকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর পদে পুনর্নিয়োগ করে সবাইকে চমকে দেন ব্রিটেনের নতুন প্রধানমন্ত্রী। ভারতীয়েরা ভিসা নীতির অপব্যবহার করে, এই মন্তব্য করে কিছু দিন আগে বিতর্কে জড়িয়েছিলেন সুয়েলা। তার পরে নিজে পদত্যাগ করার ঠিক এক দিন আগে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর পদ থেকে সুয়েলাকে বরখাস্ত করেন লিজ় ট্রাস। সেই সুয়েলাকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পদে সুনক পুনর্বহাল করায় বিস্মিত অনেকেই।
সুয়েলার এই পুনর্বহাল ভারতের বিদেশ মন্ত্রকের কর্তাদের চিন্তা বাড়াবে। কারণ সুয়েলার বিতর্কিত মন্তব্যের পরেই ভারত-ব্রিটেন মুক্ত বাণিজ্যচুক্তি সম্বন্ধে আলাপ-আলোচনা বন্ধ করে দেয় দু’টি দেশ। বরিস জনসনের আমলে এই বাণিজ্যচুক্তি নিয়ে কথাবার্তা অনেকটাই এগিয়েছিল। যা থমকে যায় ট্রাসের আমলে। সাউথ ব্লকের কর্তারা আশা করছিলেন, সুনক আসার পরে আলোচনা ফের গতি পাবে। এখন ব্রেভারম্যান স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকে ফিরে আসার পরে এফটিএ-আলোচনার কী হবে, তাই নিয়ে স্বভাবতই চিন্তায় পড়ে গিয়েছেন মন্ত্রকের কর্তারা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy