E-Paper

অনাস্থা প্রস্তাবে কি যোগ রাহুলের

রাহুল যাতে সাংসদ হিসেবে সোমবারই লোকসভায় পা রাখতে পারেন, তার জন্য আজ স্পিকারকে চিঠি দিয়ে চাপ বাড়িয়েছেন লোকসভায় কংগ্রেসের নেতা অধীর চৌধুরী।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৬ অগস্ট ২০২৩ ০৬:০৭
Rahul Gandhi.

রাহুল গান্ধী। —ফাইল চিত্র।

সব নজর এখন স্পিকার ওম বিড়লার দিকে।

মোদী পদবি নিয়ে মানহানির মামলায় সুপ্রিম কোর্ট সুরাতের আদালতের রায়ে স্থগিতাদেশ দেওয়ায় রাহুল গান্ধী রাজনৈতিক জয় পেয়েছেন ঠিকই। তবে আগামী সপ্তাহে লোকসভায় অনাস্থা প্রস্তাবের আলোচনায় সাংসদ হিসেবে রাহুল যোগ দিতে পারেন কি না, তা নিয়ে সংশয় রয়েই গিয়েছে। রাহুল যাতে সাংসদ হিসেবে সোমবারই লোকসভায় পা রাখতে পারেন, তার জন্য আজ স্পিকারকে চিঠি দিয়ে চাপ বাড়িয়েছেন লোকসভায় কংগ্রেসের নেতা অধীর চৌধুরী। তবে রাহুলের সাংসদ পদ ফিরে পাওয়া স্পিকারের সিদ্ধান্তের উপর নির্ভর করায়, বিষয়টি থেকে দায় ঝেড়ে ফেলেছে শাসক দল বিজেপি। তাদের বক্তব্য, আদালতের রায়ে সাংসদ পদ হারিয়েছিলেন রাহুল। শীর্ষ আদালত সেই রায়ে স্থগিতাদেশ দিয়েছে। গোটা পর্বে শাসক দলের কোনও ভূমিকা নেই। কারণ, এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার একমাত্র স্পিকারের। কংগ্রেস নেতা জয়রাম রমেশের কটাক্ষ, ‘‘আদালতের রায়ের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সাংসদ পদ হারিয়েছিলেন রাহুল। কিন্তু স্থগিতাদেশের নির্দেশ আসার পর ২৬ ঘণ্টা কেটে গেলেও তাঁর সাংসদ পদ ফিরিয়ে দেওয়া হয়নি। অনাস্থা প্রস্তাবে রাহুল গান্ধী যোগদান করবেন বলেই কি ভয় পাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী?’’ তবে লোকসভা সচিবালয় সূত্রের দাবি, সবকিছু খতিয়ে দেখে রাহুলের ব্যাপারে সোমবার ইতিবাচক সিদ্ধান্ত নিতেপারেন স্পিকার।

গতকাল দুপুরে সুপ্রিম কোর্টের রায় আসার পরেই তৎপর হয় কংগ্রেস নেতৃত্ব। সুরাতের আদালতের রায়ের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে যে গতিতে রাহুলের সাংসদ পদ খারিজ হয়েছিল, সেই দ্রুততায় তা ফিরিয়ে দেওয়ার দাবিতে স্পিকারের কাছে আর্জি জানান অধীর-মল্লিকার্জুন খড়্গেরা। কিন্তু কংগ্রেসের নেতাদের ক্ষোভ, বিষয়টি নিয়ে স্পিকার ও তাঁর দফতর গা-ছাড়া মনোভাব দেখাচ্ছে। ফলে মঙ্গলবার লোকসভায় অনাস্থা প্রস্তাব নিয়ে আলোচনার আগে রাহুল সাংসদ হিসেবে ফিরতে পারবেন কি না, তা নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছে কং‌গ্রেসের অন্দরমহলে। অধীর চৌধুরীর কথায়, ‘‘রাহুল গান্ধীর সাংসদ পদ দ্রুত ফিরিয়ে দেওয়ার প্রস্তাব নিয়ে গতকাল রাতে স্পিকারের সঙ্গে কথা বলেছিলাম। তিনি আজ আমাকে তাঁর সঙ্গে বৈঠক করার পারমর্শ দেন। স্পিকারের পরামর্শ মতো আমি আজ সকালে তাঁকে (স্পিকারকে) ফোন করি। তিনি লোকসভার সেক্রেটারি জেনারেলের সঙ্গে কথা বলার নির্দেশ দেন এবং সেক্রেটারি জেনারেলের কাছেই এই সংক্রান্ত আবেদন জমা দেওয়ার পরামর্শ দেন।’’ অধীর জানিয়েছেন, এরপরে তিনি সেক্রেটারি জেনারেলকে ফোন করেন। কিন্তু সেক্রেটারি জেনারেল তাঁকে জানান, শনিবার হওয়ায় তাঁর দফতর আজ বন্ধ। সেই কারণে চিঠিটি স্পিকারের কাছে জমা দেওয়ার পরামর্শ দেন সেক্রেটারি জেনারেল। অধীর বলেন, ‘‘এরপরে ডাকযোগে চিঠিটি পাঠানো হয়। কিন্তু চিঠিটির প্রাপ্তি স্বীকার করা হলেও, তাতে কোনও সিলমোহর বসানো হয়নি।’’ আজ রাত পর্যন্ত লোকসভা ওয়েবসাইটে দেখা যাচ্ছে, খালি হওয়া পাঁচটি লোকসভা কেন্দ্রের মধ্যে রাহুলের কেন্দ্র ওয়েনাডের নামও রয়েছে।

এই টালবাহানায় অশনি সঙ্কেত দেখছে কংগ্রেস নেতৃত্ব। দলের একাংশের মতে, মোদী সরকারের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাবের আলোচনায় রাহুল যোগ দিক, সরকার তা চায় না। কারণ, সেক্ষেত্রে প্রচারের আলো শুষে নেবেন রাহুল। ফলে তাঁকে আটকাতে মরিয়া শাসক দল। আর সুপ্রিম কোর্টের রায় আসার পর থেকেই রীতিমতো ব্যাকফুটে বিজেপি নেতৃত্ব। দল বুঝতে পারছে, অনাস্থার আগে রাহুলের সাংসদ পদ ফিরে পাওয়ার অর্থ, গোটা অনাস্থা-আলোচনায় প্রচারের কেন্দ্রবিন্দুতে থাকতে চলেছেন রাহুল। তাতে মোদীর উপস্থিতি ফিকে হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। কর্নাটকের ভোটে পরাজয়‌ের পর এবং লোকসভার ভোটের আগে তা আদৌও কাম্য নয় শাসক দলের কাছে। বিজেপির এক নেতার কথায়, ‘‘অনাস্থা প্রস্তাবে বক্তব্য রাখতে গিয়ে বিরোধী ইন্ডিয়া জোটকে আক্রমণ শানানোর পরিকল্পনা নিয়ে রেখেছিল দল। কিন্তু আদালতের এক রায়ে পরিস্থিতি পাল্টে গিয়েছে।’’

বিজেপির নেতাটির কথায়, ‘‘আমাদের শাঁখের করাতের মতো অবস্থা।’’ সাংসদ হিসাবে রাহুলকে ফেরানোর দায় স্পিকারের উপর ঠেলে দিলেও বিজেপি নেতৃত্ব বুঝতে পারছেন, অনাস্থার আগে রাহুলকে ফিরিয়ে না আনলে আমজনতার সহানুভূতি কুড়িয়ে নেবেন তিনি। কংগ্রেস নেতৃত্বও বলতে শুরু করবেন— নরেন্দ্র মোদী ভয় পাচ্ছেন রাহুল গান্ধীকে। শুধু তাই নয়, চলতি ঘটনাপ্রবাহ রাহুলকে ‘ইন্ডিয়া’ জোটের নেতা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে পারে বলেও আশঙ্কা রয়েছে বিজেপি নেতৃত্বের।

রাহুলের সাংসদ পদ দ্রুত ফেরানো নিয়ে যখন আলোচনা শুরু হয়েছে, ঠিক তখনই ইটাওয়ার বিজেপি সাংসদ রামশঙ্কর কাঠেরিয়ার সাংসদ পদ খারিজের সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। ২০১১ সালে একটি সংস্থায় ভাঙচুরের দায়ে তাঁকে দু’বছর জেলবন্দি রাখার সাজা ঘোষণা করেছে উত্তরপ্রদেশের এমপি-এমএলএ আদালত। তাঁকে৫০ হাজার টাকা জরিমানাওকরা হয়েছে।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Rahul Gandhi Congress parliament

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy