নজরদারি: চাকুলিয়ার জঙ্গলে পাহারা বন সংরক্ষণ সমিতির সদস্যদের। ছবি: পার্থ চক্রবর্তী।
নিঃসন্তান গৃহবধূর কাছে শাল-পলাশের জঙ্গল যেন ছেলেমেয়ে। তাদের বাঁচাতে তা-ই দেড় দশক ধরে লড়ছেন ঝাড়খণ্ডের পূর্ব সিংভূমের চাকুলিয়ায় যমুনা টুডু। রুখছেন কাঠ মাফিয়াদের।
দুরন্ত সাহসের জন্য বেরাডি গ্রামের যমুনাদেবীর ডাকনাম ‘লেডি টারজান’! ২০১৬ সালে পেয়েছেন সাহসিকতার রাষ্ট্রপতি পুরস্কারও।
বাপের বাড়ি ওড়িশার ময়ূরভঞ্জের রাঙামাটিয়ায়। রুক্ষ, পাথুরে জমি চারপাশে। যমুনাদেবীর বাবা সেখানেই গাছ পুঁততেন। যত্নে বড় হতো তারা। সেই থেকেই গাছের প্রতি মমতা যমুনাদেবীর। তিনি জানান, বিয়ের পর চাকুলিয়ায় এসে দেখেন শালের জঙ্গল কেটে সাফ করছে পাচারকারীরা। সবুজ বাঁচাতে তাঁর লড়াই শুরু তখনই।
যমুনাদেবীর স্বামী মানসিংহ টুডু বলেন, ‘‘৬ জন মহিলাকে সঙ্গে নিয়ে একটা দল গড়েছিল আমার স্ত্রী। এখন ওঁর উদ্যোগে চাকুলিয়ার প্রতিটি গ্রামে তৈরি হয়েছে বন সংরক্ষণ সমিতি।’’ জঙ্গলে জঙ্গলে ঘুরে নজরদারি চালান সমিতির সদস্যরা। যমুনাদেবী জানান, গাছ কাটতে দেখলেই প্রতিবাদ করেন তাঁর সমিতির মহিলারা। মোবাইল ক্যামেরায় পাচারকারীদের ছবি তুলে পুলিশকে দেওয়া হয়। তাতে কাঠ মাফিয়াদের গ্রেফতার করতে পুলিশেরও সুবিধা হয়।
গাছ বাঁচাতে গিয়ে রক্তাক্তও হয়েছেন যমুনাদেবী। ২০০৯ সালে কোকপাড়া স্টেশনের কাছে গাছ কাটছিল জঙ্গল মাফিয়ারা। যমুনাদেবীদের দেখে তারা রেল লাইন থেকে পাথর তুলে ছুড়তে থাকে। মাথা ফেটে যায় যমুনাদেবীর। কিন্তু ভয়ে পালাননি তিনি। পুলিশকে খবর দেন। ধরা পড়ে কাঠ পাচারকারীরা।
সম্প্রতি চাকুলিয়ার একটি অনুষ্ঠানে ঝাড়খণ্ডের মুখ্যসচিব রাজবালা ভার্মা বলেন, ‘‘যমুনা আমাদের গর্ব। ওঁর মতো আরও অনেকে এগিয়ে এলে বাঁচবে জঙ্গল।’’
নিঃসন্তান যমুনাদেবী বলেন, ‘‘শালগাছের জঙ্গল আমার সন্তানের মতো। সন্তানের হাত-পা কেটে নিতে দেখলে কি চুপ করে থাকতে পারি?’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy