Advertisement
E-Paper

অঙ্ক কষেই তৃণমূল নেত্রীর বিহার-টুইট

বিহারে ভোটপর্বের মাঝপথে হঠাৎই জেডিইউ নেতা তথা বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমারের সমর্থনে বিবৃতি দিলেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। যা নিয়ে জেডিইউ তো বটেই, ধন্দে পড়ে গিয়েছেন অনেকেই।

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ২৬ অক্টোবর ২০১৫ ০৩:১৫

বিহারে ভোটপর্বের মাঝপথে হঠাৎই জেডিইউ নেতা তথা বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমারের সমর্থনে বিবৃতি দিলেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। যা নিয়ে জেডিইউ তো বটেই, ধন্দে পড়ে গিয়েছেন অনেকেই। কেন মমতা এমন করলেন— এর জবাব খুঁজতে গিয়ে উঠে এসেছে তাঁর জাতীয় রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে চাওয়ার প্রসঙ্গও।

টুইটারে আজ মমতা বার্তা দিয়েছেন—‘বিহারবাসীকে অনুরোধ, তাঁরা যেন দেশ ও রাজ্যের উন্নয়নের জন্য নীতীশ কুমারজি’কে পুনর্নির্বাচিত করেন।’ সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটে ওই বার্তা দেখে ঘণ্টাদেড়েক পরে নীতীশও টুইট করে মমতাকে
ধন্যবাদ জানিয়েছেন।

আর এখানেই ধন্দে পড়েছেন জেডিইউ নেতারা। তাঁদের দাবি, প্রথমে কথা ছিল নীতীশের সমর্থনে নির্বাচনী প্রচারে আসবেন মমতা। ওই বিষয়ে ২২ সেপ্টেম্বরের পরে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে জানানোও হয়। কিন্তু তার পরে থেকে দু’পক্ষে কোনও যোগাযোগ হয়নি। চলতি বিধানসভা নির্বাচনের প্রথম দিকে তৃণমূল বা মমতার তরফে কোনও বার্তাও আসেনি। তা হলে প্রথম দু’দফার নির্বাচন হয়ে যাওয়ার পরে এখন আচমকা কেন নীতীশের সমর্থনে মমতা বার্তা দিলেন? ভাগলপুর এবং গয়ার মতো বাঙালি-প্রধান এলাকায় ভোট শেষ হওয়ার পরে মমতার বার্তায় কোনও কাজ হবে কি না, তা নিয়েও জেডিইউ নেতারা ধন্দে পড়েছেন।

তৃণমূল সূত্রে বলা হচ্ছে, মমতার মূল উদ্দেশ্য এক দিকে যেমন জাতীয় রাজনীতিতে নিজেকে ফের প্রাসঙ্গিক করে তোলা, তেমনই অন্য দিকে বিজেপি নেতৃত্বকে পাল্টা চাপে রাখা। দাদরি বা তার পরবর্তী ঘটনাবলী নিয়ে দেশ জুড়ে সম্প্রতি বিজেপি-বিরোধিতার হাওয়া জোরালো হচ্ছে। এই অবস্থায় দুর্গাপুজো মিটতেই
সক্রিয় হয়েছেন মমতা। বিজেপি-বিরোধিতার এমন সুযোগ হাতছাড়া করতে চাননি তিনি।

কিন্তু শুধুই কি তাই? তৃণমূলের অন্দরের খবর, অ-কংগ্রেসি, অ-বিজেপি দলগুলিকে নিয়ে একটি ফ্রন্ট গড়তে আগেও সক্রিয় হয়েছেন মমতা। জাতীয় রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ কুশীলব হয়ে ওঠার আকাঙ্খা থেকেই তৃণমূল নেত্রী দিল্লির বিধানসভা নির্বাচনের আগে কেজরীবালকে সমর্থনের ডাক দিয়েছিলেন। গত ফেব্রুয়ারিতে নীতীশের পটনার তখ্‌তে প্রত্যাবর্তনের অনুষ্ঠানেও হাজির ছিলেন। একই ভাবে এ বার বিহারের নির্বাচনে নীতীশকে সমর্থন জানালেন।

বস্তুত, তৃণমূলের অন্দরমহল থেকেই বলা হচ্ছে, এ দিন বিবৃতি দিয়ে মমতা আসলে এক ঢিলে অনেক পাখি মারতে চেয়েছেন। প্রথমত, মমতার আজকের বিবৃতির মধ্যে তাঁর বিজেপি-বিরোধী অবস্থানই বেশি করে চোখে পড়ছে। বিহারে বিধানসভা ভোটে জিতেই তাঁরা পশ্চিমবঙ্গের দিকে নজর দেবেন বলে কিছু দিন আগেই মন্তব্য করেছেন বিজেপি-র সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহ। এই সময়ে নীতীশকে সমর্থনের বার্তা দিয়ে মমতা বিজেপি-কে পাল্টা চাপে রাখার চেষ্টা করলেন বলে মনে করছেন তৃণমূলের অনেক নেতাই।

দ্বিতীয়ত, সংখ্যালঘু ভোটব্যাঙ্ক ধরে রাখার চেষ্টা। রাজ্যের বিরোধী সিপিএম এবং কংগ্রেস নেতৃত্ব বেশ কিছু দিন ধরেই অভিযোগ করছেন, সারদা-ফাঁস থেকে বাঁচতে এ বছরের প্রথম দিকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী তথা বিজেপির বিরুদ্ধে সুর নরম করতে শুরু করেছেন মমতা। তার পর থেকেই সিবিআই তদন্তেও ভাটার টান এসেছে বলে অভিযোগ তাঁদের। মমতার বিজেপি-বিরোধিতার সুরও গত কয়েক মাসে তত চড়া নয় বলেই দাবি তাঁদের। যার ফলে সংখ্যালঘু ভোট হারানোর আশঙ্কা রয়েছে তৃণমূলের। আর তাই এখন দেশের অন্যমত মোদী-বিরোধী মুখ নীতীশের হয়ে মুখ খুলেছেন মমতা। তৃণমূলের এক নেতাও পরোক্ষে সে কথা মেনেছেন। তাঁর ব্যাখ্যা, ‘‘গত কয়েক মাস ধরে বিজেপি-র সঙ্গে আমাদের দলের নৈকট্য নিয়ে কংগ্রেস-সিপিএম যে প্রচার চালাচ্ছিল, এ রাজ্যে বিধানসভা ভোটের আগে তাতে সংখ্যালঘুদের মধ্যে কিছুটা হলেও নেতিবাচক প্রভাব পড়ার আশঙ্কা ছিল। নীতীশকে সমর্থন জানিয়ে দলনেত্রী এ রাজ্যেও ভোটের কয়েক মাস আগে এক ঢিলে কয়েকটি পাখি মেরে রাখলেন!’’

তৃণমূল সূত্রে আরও বলা হচ্ছে, বিহারে নির্বাচনের শুরুতে বিজেপি জোট এগিয়ে রয়েছে বলে মনে করেছিলেন মমতা। দু’দফার ভোটের পরে তাঁর ঘনিষ্ঠেরা তৃণমূল নেত্রীকে জানিয়েছেন, এখন কিছুটা হলেও এগিয়ে নীতীশ। তার পরেই নীতীশের সমর্থনে এগিয়ে এসেছেন মমতা। সেই সঙ্গেই মমতার নিজের কেন্দ্র ভবানীপুর-সহ পশ্চিমবঙ্গের নানা বিধানসভা আসনে বিহারি ভোটারও ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছেন। মমতার বিহার-বার্তায় সেই অঙ্কও ধরা আছে বলে তৃণমূল সূত্রের ব্যাখ্যা।

তৃণমূল নেত্রীর এই অঙ্ক আঁচ করেই পশ্চিমবঙ্গে বিজেপি-র রাজ্য সভাপতি রাহুল সিংহ পাল্টা বলেছেন, ‘‘না চাইতেই নীতীশ কুমারকে সোশ্যাল মিডিয়ায় সমর্থন জানিয়েছেন মমতা। আসলে তিনি ভয় পাচ্ছেন যে, বিহারে বিজেপি জিতবে আর তার সরাসরি প্রভাব পড়বে ২০১৬-য় বাংলার নির্বাচনে।’’ বাংলায় বিজেপি-র একমাত্র বিধায়ক শমীক ভট্টাচার্য মন্তব্য করেছেন, ‘‘নীতীশ-লালু-সনিয়ার পাশে মমতা! শেষ পর্যন্ত তিনিও হ য ব র ল জোটে ঢুকে পড়লেন!’’

মোদী-নীতীশ যুদ্ধ যে কতটা তুঙ্গে উঠেছে, সেটা এ দিন ভাল ভাবেই বোঝা গিয়েছে প্রধানমন্ত্রীর প্রচার-বক্তৃতায়। আজই ছপরা, হাজিপুর, নালন্দা এবং পটনা গ্রামীণ এলাকায় পরপর জনসভা করেছেন প্রধানমন্ত্রী মোদী। লালু-নীতীশকে উন্নয়ন বিরোধী বলে আক্রমণ করেছেন তিনি। তান্ত্রিক-কাণ্ডের জেরে নীতীশকে কটাক্ষ করে মোদী বলেন,
‘‘নীতীশ কুমার এখন লোকতান্ত্রিক হয়েছেন!’’ লালুপ্রসাদকে সব চেয়ে বড় তান্ত্রিক হিসেবে চিহ্নিত করে তাঁর দলকে ‘রাষ্ট্রীয় জাদুটোনা দল’ বলেও কটাক্ষ করেন প্রধানমন্ত্রী। বিহারে বিজেপি সরকার তৈরি হলে উন্নয়নের ৬টি সূত্র মেনে এগোনো হবে বলে জানান তিনি। মোদীর বক্তব্যের পাল্টা জবাব টুইটারে দিয়েছেন নীতীশ। তিনি লিখেছেন— বিশেষ ক্ষেত্রে নিজের সুবিধার কথা ভেবে চুপ করে থাকার পথ নিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। কালো টাকা দেশে ফেরানো, যুবসমাজের জন্য চাকরির ব্যবস্থার মতো কয়েকটি বিষয়ে কোনও মন্তব্য তাই তিনি করছেন না। আর লালুপ্রসাদের মন্তব্য— ‘‘উনি (মোদী) ভয় পেয়ে এখন এ সব কথা বলছেন!’’

রাজনীতি ঘিরে বিহারে আলোড়ন ছড়িয়েছে আরও একটি কাণ্ডে। অভিযোগ উঠেছে, টাকা নিতে গিয়ে ক্যামেরার সামনে ধরা পড়েছেন বিধায়ক তথা কুর্থা কেন্দ্রের জেডিইউ প্রার্থী সত্যদেব কুশওয়াহা। ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়— রাজ্যে মহাজোট সরকার তৈরি হলে তাতে ব্যবসায়ীদের সুবিধা পাইয়ে দেওয়া হবে বলে টাকা নিচ্ছেন তিনি। নির্বাচন কমিশনের তরফে গোটা বিষয়টির তদন্ত করা হচ্ছে। এর আগেও ‘ভিডিও ফুটেজে’ রাজ্যের মন্ত্রী অবধেশ কুশওয়াহা-সহ কয়েক জন প্রার্থী ও তাঁদের আত্মীয়দের ভোটের জন্য টাকা নিতে দেখা গিয়েছিল।

abpnewsletters
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy