নয়াদিল্লিতে দলীয় বৈঠকে অমিত শাহ।
সোহরাবুদ্দিন শেখ ভুয়ো সংঘর্ষ মামলায় রেহাই পেলেন অমিত শাহ। সিবিআই তাঁর বিরুদ্ধে যথেষ্ট প্রমাণ পেশ করতে পারেনি বলে মুম্বইয়ের এক আদালত আজ রায় দিয়েছে। প্রথ্যাশিত ভাবেই এতে সিবিআইয়ের অপব্যবহারের প্রশ্নে ফের তেড়েফুঁড়ে উঠেছে তৃণমূল-সহ বিরোধীরা।
যদিও বিজেপির দাবি, সিবিআই যে নিরপেক্ষ ভাবে কাজ করছে, এটা তারই প্রমাণ। প্রমাণ নেই বলেই অমিত শাহ ছাড়া পেয়েছেন। আর প্রমাণ আছে বলেই পশ্চিমবঙ্গের নেতা-মন্ত্রীরা গ্রেফতার হচ্ছেন।
নরেন্দ্র মোদী সরকার সিবিআইকে দলীয় স্বার্থে ব্যবহার করছে এই অভিযোগ এনে বিক্ষোভের নামে সংসদের গোটা শীতকালীন অধিবেশনে নানা ভাবে ব্যাঘাত ঘটিয়েছে তৃণমূল। অন্যান্য প্রসঙ্গে বাকি বিরোধীদের পাশে পেলেও সারদা প্রসঙ্গে তারা কাউকেই পাশে পায়নি। সে সময় সারদা প্রসঙ্গকে অস্ত্র করেই তৃণমূলকে বাকি বিরোধীদের থেকে একঘরে করে দেওয়ার চেষ্টা চালিয়েছিল বিজেপি। এখন আবার অমিত শাহের রেহাইয়ের প্রশ্নে বিরোধীরা একসুরে আক্রমণ শানাতে শুরু করতেই সারদা-খোঁচায় তৃণমূলের আক্রমণ ভোঁতা করে দিয়ে বিরোধীদের মধ্যে বিভাজন সৃষ্টির চেষ্টা চালাল বিজেপি।
অতীতে বিভিন্ন জমানায় বারবারই সিবিআইকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহারের অভিযোগ উঠেছে। শাসক ও বিরোধী আসনে থাকা দলগুলি পর্যায়ক্রমে একে অপরকে তোপ দেগেছে এ নিয়ে। ইউপিএ জমানায় সিবিআই ‘কংগ্রেস ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন’ হিসেবে কাজ করছে বলে দাবি করেছিল বিজেপি। কয়লা কেলেঙ্কারির রিপোর্ট সুপ্রিম কোর্টে জমা দেওয়ার আগে তৎকালীন আইনমন্ত্রীকে দেখিয়েছিল সিবিআই। এর পরে সিবিআইকে ‘খাঁচায় বন্দি তোতা’ আখ্যা দেয় শীর্ষ আদালত।
মুম্বইয়ে সাংবাদিকদের মুখোমুখি সোহরাবুদ্দিনের ভাই রুবাবুদ্দিন শেখ।
জমানা বদলেছে। এখন সারদা-সহ নানা মামলায় সিবিআইয়ের অপব্যবহার নিয়ে মোদী সরকারের বিরুদ্ধে সরব বিরোধীরা। অমিত শাহের রেহাই বিরোধীদের আরও কিছুটা উস্কে দিল আজ। কয়লা কেলেঙ্কারি মামলায় শীর্ষ আদালতের মন্তব্যের জের টেনে কংগ্রেস বলেছে সিবিআই এখন “খাঁচায় বন্দি, শিকলে বাঁধা।’ সরকারের চাপেই সোহরাবুদ্দিন মামলায় শাহকে রেহাই দেওয়া হয়েছে। আর সারদা মামলার ধাক্কায় বেসামাল তৃণমূলের সাংসদ ডেরেক ও’ব্রায়েন বলেন, “সিবিআইয়ের যে আর বিশ্বাসযোগ্যতা নেই তা আমরা আগেই বলেছিলাম। আজ সে কথাই ফের প্রমাণ হয়েছে।” সিপিএমের সীতারাম ইয়েচুরির কটাক্ষ, “যথেষ্ট জোরালো প্রমাণ থাকা সত্ত্বেও এই ধরনের মুক্তিই আসলে ভুয়ো সংঘর্ষের নামে খুন।”
২০০৫ সালে কয়েকটি মামলায় অভিযুক্ত সোহরাবুদ্দিন শেখকে গুজরাত পুলিশ ভুয়ো সংঘর্ষে খুন করে বলে অভিযোগ। পরের বছর পুলিশের গুলিতে মারা যায় সোহরাবুদ্দিনের সহযোগী তুলসীরাম প্রজাপতি। তাকেও ভুয়ো সংঘর্ষে খুন করা হয় বলে অভিযোগ। সিবিআই অভিযোগ করে, গুজরাতের তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ এই খুনে মদত দিয়েছিলেন। প্রমাণ হিসেবে ফেনে অমিতের সঙ্গে পুলিশের কয়েক জন অফিসারের কথাবার্তা তুলে ধরে তারা। মোদীর রাজ্যে বিচারপ্রক্রিয়া ব্যাহত হতে পারে ভেবে এর পরে ওই মামলা মহারাষ্ট্রে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। মুম্বইয়ের আদালত আজ জানিয়ে দিয়েছে, শাহের বিরুদ্ধে প্রমাণ যথেষ্ট নয়। ফলে, প্রত্যাশিত ভাবেই উৎফুল্ল বিজেপি শিবির। দিল্লির বিজেপি সদর দফতরে গেলে শাহকে আজ পুষ্পবৃষ্টিতে অভ্যর্থনা জানানো হয়। তাঁর সঙ্গেই দলের সদর দফতরে আসেন দলীয় মুখপাত্র মীনাক্ষি লেখি। তিনি সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবীও বটে। অমিত শাহের আইনি পরামর্শদাতাদের দলে তিনিও ছিলেন। মীনাক্ষির কথায়, “নরেন্দ্র মোদী যে তদন্তে হস্তক্ষেপ করেন না তা ফের বোঝা গেল। অমিত শাহের বিরুদ্ধে প্রমাণ না থাকায় তিনি রেহাই পেয়েছেন। প্রমাণ আছে বলেই পশ্চিমবঙ্গের নেতা-মন্ত্রীদের গ্রেফতার করছে সিবিআই।”
অমিত শাহের রেহাইয়ের খবরে উৎসব লখনউয়ের বিজেপি কার্যালয়ে। মঙ্গলবার।
অমিতের রেহাই নিয়ে বিরোধীরা যে তোপ দাগবেন তা জানাই ছিল বিজেপির। তাই এই রায়কে ব্যবহার করে তৃণমূল-সহ বিরোধীদের পাল্টা বার্তা দিল তারা। মীনাক্ষির বক্তব্যে এই বার্তাটি স্পষ্ট, সিবিআই নিরপেক্ষ ভাবে কাজ করছে। তাই সারদা কেলেঙ্কারিতে জড়িত তৃণমূলের নেতাদের তারা রেয়াত করবে না।
সিবিআই জানিয়েছে, তারা আদালতের নির্দেশের কপি পায়নি। তা খতিয়ে দেখে আপিলের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
ছবি: পিটিআই
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy