তীব্র বিদ্যুৎ সঙ্কটের কবলে বরাক উপত্যকা-সহ গোটা রাজ্য। প্রচণ্ড গরমের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে লোডশেডিং। এক ঘণ্টা বিদ্যুৎ মিলছে তো পরের ঘণ্টাতেই উধাও। কখনও দেড়-দু’ঘণ্টাও বিদ্যুৎ থাকছে না। নাজেহাল সাধারণ মানুষ। বিভিন্ন এলাকায় জল সরবরাহও ব্যাহত হচ্ছে। যে সব বাড়িতে ছাদে জলের ট্যাঙ্ক রয়েছে, পাম্প না-চলায় তাঁদের দুর্ভোগ বেড়েছে কয়েক গুণ। সমস্যায় ছোট-বড় কারখানাগুলিও।
আজ গুয়াহাটির সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। নাগাড়ে লোডশেডিংয়ের প্রতিবাদে ধুবুরির মানুষ ভোট বয়কটের হুমকি দিয়েছেন। ব্যবসায়ী সমিতি ও সাধারণ মানুষ আজ ধুবুরি শহরে বন্ধ ডাকেন।
এই পরিস্থিতির জন্য অনাবৃষ্টিকেই দায়ী করছেন রাজ্যের বিদ্যুৎকর্তারা। তাঁরা জানিয়েছেন, রাজ্যে সর্বোচ্চ চাহিদার সময় ১ হাজার ২৬৮ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ প্রয়োজন। সেখানে মিলছে মাত্র ১ হাজার মেগাওয়াট।
মধ্য-অসম বিদ্যুৎ বিতরণ সংস্থার সহকারী জেনারেল ম্যানেজার বিশ্বজিৎ কর জানান, রাজ্যের ভরসা কার্বি-লাংপি জলবিদ্যুৎ এবং নামরূপ-লাকোয়া তাপবিদ্যুৎ প্রকল্প। তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রটি গ্যাস-সঙ্কটে ভুগছে। নামরূপ-লাকোয়া প্রকল্পে ১২০ মেগাওয়াটের মধ্যে উৎপাদন হচ্ছে মাত্র ৪০-৫০ মেগাওয়াট। অন্য দিকে, জলের অভাবে কার্বি-লাংপি বিদ্যুৎ প্রকল্পে ৩ ঘণ্টার বেশি উৎপাদন করা যাচ্ছে না। সারা দিন ধরে জল জমার পর, বিকেল পাঁচটায় টারবাইন চালু করা হয়। তা চলে রাত আটটা পর্যন্ত। সে জন্য ১০০ মেগাওয়াটের মধ্যে সেখানে উৎপাদন হচ্ছে ৪০ মেগাওয়াট। বাকিটা মিলছে গ্রিড থেকে। কিন্তু সেখানেও বিদ্যুৎ সরবরাহ কম। জলের অভাবে নিপকোর ছ’টি প্রকল্পে উৎপাদন প্রায় বন্ধ। মেরামতির জন্য কপিলি প্রকল্পে দু’মাস ধরে উৎপাদন বন্ধ রয়েছে। মে মাসের আগে তা চালু হওয়ার সম্ভাবনা নেই। অন্য প্রকল্পগুলিতে কোনও কোনও দিন সন্ধ্যার পর সামান্য উৎপাদন করা হয়।
সমস্যার সুরাহা কবে হবে, তার জবাব মেলেনি বিদ্যুৎকর্তাদের কাছে। এই পরিস্থিতিতে আজ সমস্যা আরও জটিল হয়েছে উৎপাদন কেন্দ্রে যান্ত্রিক গোলযোগে। ‘পাওয়ার গ্রিড কর্পোরেশন অফ ইন্ডিয়া লিমিটেড’-এর পূর্বাঞ্চলীয় যে গ্রিড থেকে বিদ্যুৎ মেলে, সেই ২২০ কিলোভোল্টের সরবরাহ লাইনে গুয়াহাটির সরুসজাই এলাকায় সমস্যা দেখা দিয়েছে। ওই গ্রিডে কোনও বিদ্যুৎ সংগ্রহ করা যাচ্ছে না। ত্রিপুরার পালাটানা প্রকল্প থেকে ২৭২ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ মিলছে।
বিশ্বজিৎবাবু জানিয়েছেন, সারা রাজ্যে পরিস্থিতি একই রকম। বৃষ্টি হলে কিছুটা স্বস্তি মিলতে পারে।
এলাকার বাসিন্দাদের অভিযোগ, বিদ্যুৎ নিয়েও বরাকের সঙ্গে বঞ্চনা চলছে। ত্রিপুরার পালাটানা বিদ্যুৎ প্রকল্প থেকে অসমের প্রাপ্য অংশ প্রথমে যায় কাছাড় জেলার শ্রাকোনায়। আগে কথা ছিল, বরাক উপত্যকার চাহিদা মিটিয়ে বাকিটা গ্রিডে পাঠানো হবে। কিন্তু বাস্তবে তা করা হচ্ছে না।
বিদ্যুৎ বিতরণ সংস্থার ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার দীপঙ্কর দাস বলেন, “বিদ্যুতের পুরোটাই প্রথমে গ্রিডে যায়। সেখান থেকে চাহিদা অনুযায়ী বিভিন্ন জায়গায় তা সরবরাহ করা হয়।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy