Advertisement
০৫ মে ২০২৪

আমি তোমার কাছে ফিরে যাব

সরকারি বাস আমাদের পৌঁছে দিল ওয়াগা সীমান্তে। বিদায় লাহৌর। বিদায় পাকিস্তান। এই ভ্রমণ, আতিথেয়তা ভুলব না। সুযোগ পেলে আবার যাব পাকিস্তান। একবার নয়, বার বার। বলছেন রাজা দত্ত।প্রায় কুড়ি হেক্টর জায়গা নিয়ে বিস্তৃত এই লাহৌর ফোর্ট, যার নাম স্থানীয় বাসিন্দাদের কাছে ‘শাহী কিল্লা’। সম্রাট আকবর তৈরি করেছিলেন এই দুর্গ ১৫৫৬ থেকে ১৬০৫ সালের মধ্যে।

শেষ আপডেট: ১৩ এপ্রিল ২০১৪ ০০:০০
Share: Save:

পাথর-পাষান কি শুধুই ক্ষুধিত, কথা বলে না? মরমী কান পেতে শুনেছি উজ্জ্বল অতীতের অনেক অনুচ্চারিত বাণী, লাহৌর ফোর্টে, পশুশালায়, শালিমার গার্ডেন্স-এ। এবং অবশ্যই বাদশাহি মসজিদে, ফুড স্ট্রিটে। সে কথাই এ বার বলব এবং তা মোটেই ধান ভানতে শিবের গীত হবে না। সহজ কথাটা প্রথমেই সহজ ভাবে বলে নিই, প্রথমবার পাকিস্তান গিয়েই এই অধম কলমচি পাক-প্রেমে পড়ে গিয়েছে।

ইসলামাবাদ পর্ব শেষ। এ বার যাত্রা লাহৌর। ইসলামাবাদ থেকে লাহৌর সড়কপথে দূরত্ব প্রায় ৩৭৫ কিলোমিটার। সময় লাগে চার ঘণ্টা। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ যখন প্রথমবার পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হন তখন তাঁরই পরিকল্পনায় তৈরি হয় পাকিস্তানের এই রাস্তা, যার নাম M2 মোটরওয়ে। সিক্স লেনের এই রাস্তা ইউরোপের যে কোনও মোটরওয়ের সমতুল। রাস্তার দুধারে লাইটপোস্ট। ঘণ্টাখানেক চললেই পর পর আছে শৌচালয় এবং চা-কফি বা স্ন্যাক্স খাওয়ার জন্য ছোটবড় রেস্তরাঁ। আমাদের শীতাতপনিয়ন্ত্রিত বাস এগিয়ে চলেছে লাহৌরের পথে। বাসের চালক খুবই সঙ্গীতরসিক। মাঝে মাঝে চলছে গজল, সুফি গান এবং জনপ্রিয় হিন্দি গানের সিডি। পাকিস্তানে হিন্দি গান এবং সিনেমা খুবই জনপ্রিয়। প্রায় প্রতিটি মানুষের মুখে হিন্দি গানের কলি। অমিতাভ বচ্চন, শাহরুখ খান, আমির খান অত্যন্ত জনপ্রিয় নায়ক। পাকিস্তানে কোনও সিনেমা তৈরি হয় না। তাই ভারতীয় হিন্দি চলচ্চিত্র অত্যন্ত জনপ্রিয়। বাস এগিয়ে চলেছে তার নিজস্ব গতিতে। পুরো পথটা মকুর-মসৃণ। রাস্তার রক্ষণাবেক্ষণ অত্যন্ত চমত্‌কার। এত দিন শুধু শহর দেখেছি। এ বার দীর্ঘ যাত্রাপথে গ্রাম দেখার পালা। ইসলামাবাদ থেকে লাহৌর যেতে হলে তিনটি নদী দেখা যায়। রাস্তার ওপর থেকেই দেখা যায়। প্রথম আসে রভি নদী। তারপর ঝিলম এবং একদম শেষে চেনাব। কোথাও ব্রিজ পার হতে হয়নি। আপন গতিতে নদী বয়ে চলেছে। রাস্তা থেকে দেখা যায় গ্রামগুলো। সুন্দর সবুজ গ্রাম। M2 মোটরওয়ের পাশের গ্রামগুলিতে দেখছি বৈদ্যুতিক আলো। ইসলামাবাদ থেকে লাহৌরের পথে প্রায় পঁয়তাল্লিশ মিনিট যাওয়ার পর পথে পড়ে পাকিস্তানের বিখ্যাত সল্ট রিজিয়ন। ROCK SALT-এই পাহাড়। ভ্রমণার্থীদের কাছে অত্যন্ত আকর্ষণীয়। যদিও মূল সড়ক থেকে রাস্তা বদল করে যেতে হয়। আমাদের সুযোগ হয়নি মূল স্পটে যাওয়ার। রাস্তা থেকেই দেখেছি। দুধের স্বাদ ঘোলে মেটানোর মতো।

বাসে আমরা প্রায় সকলেই ধূমপায়ী। নানা অছিলায় ড্রাইভারকে অনুরোধ করে বাস থামিয়ে সিগারেট খাওয়া। একবারও বিরক্ত হতে দেখিনি বাস চালক এবং আমাদের সঙ্গী সরকারি প্রটোকল অফিসারকে। মাঝে মাঝেই ফোন আসছে প্রটোকল অফিসার সাহেবের মুঠোফোনে। আমাদের অবস্থান জানতে। লাহৌর থেকে ঠিক এক ঘণ্টা দূরে আমরা শেষবারের মতো চা-সিগারেট খাব বলে ঠিক হল। ড্রাইভার গাড়ি থামাল সুন্দর একটা রোডসাইড রেস্তরাঁয়।

লাহৌর শহরে পৌঁছলাম রাত ৯টায়। শহরের প্রধান প্রবেশ পথে লেখা ওয়েলকাম টু লাহৌর। আর আমাদের অভ্যর্থনা জানাল বিশেষ নিরাপত্তা রক্ষীদল এবং পুলিশ জিপ।

বহু প্রাচীন শহর এই লাহৌর। পাকিস্তানের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর লাহৌর আড়ে-বহড়ে বেড়েই চলেছে। এখন লোকসংখ্যা প্রায় ৮০ লক্ষ! তক্ষশীলার পর বিদেশি পর্যটকদের কাছে সবথেকে আকর্ষণীয় এই শহর। লাহৌর চিড়িয়াখানা বেশ পুরনো, বিশ্বের চতুর্থতম প্রাচীন পশুশালা। লাহৌর নানা ইতিহাস ও ঐতিহ্যের ধারকবাহক এবং সাক্ষী। দুধারে রাস্তা এবং মধ্যিখান দিয়ে বয়ে চলেছে খাল। রাস্তার ধারে ধারে বড় বড় গাছ। লাহৌরের রাস্তার ট্রাফিক অনেকটা কলকাতার মতো। প্রচুর অটো রিকশা এবং সাইকেল আরোহী। পনেরো মিনিটের মধ্যে আমরা হোটেলে পৌঁছলাম। অভ্যর্থনা জানালেন সরকারি আধিকারিকরা, হোটেল কর্তৃপক্ষ এবং লাহৌর প্রেস ক্লাবের প্রতিনিধিরা। পরিচয় পর্ব হোটেলের লবিতে শেষ হল। দীর্ঘ যাত্রায় সকলেই পরিশ্রান্ত। অতএব সিদ্ধান্ত, আজ বিশ্রাম। ডিনার হোটেলেরই রেস্তরাঁয়। প্রত্যেকে যে যার রুমে চেক ইন করলাম। ডিনার শেষে জানিয়ে দেওয়া হল সকাল ৯টায় প্রাতরাশ।

হোটেলে প্রাতরাশ করে আমাদের যেতে হবে পঞ্জাব সরকারের ইনফরমেশন ও টেকনোলজি দফতরে মিটিং-এ। সুন্দর ভাবে কম্প্যুটারে ও জায়ান্ট স্ক্রিনে দেখানো হল নানা কর্মকাণ্ড। এর পর আমরা চড়ব লাহৌর মেট্রোবাস। ২০১৩ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে চালু হয় এই মেট্রোবাস পরিষেবা। প্রায় ২৭ কিলোমিটার দীর্ঘ এবং ২৯টা ট্রেন স্টেশন। পঞ্জাব মেট্রোবাস অথরিটি সমগ্র সিস্টেমটা পরিচালনা করে পঞ্জাব আই টি বোর্ড-এর এর এর সহায়তায়। দুটো বাসকে জুড়ে দিয়ে এই মেট্রো পরিষেবা। টিকিটিং ব্যবস্থা পুরোপুরি কম্প্যুটারাইজড। আমরা সিভিল সেক্রেটারিয়েট থেকে ট্রেনে চাপলাম লাহৌর মিউজিয়াম পর্যন্ত।

লাহৌরকে বলা হয় ‘মুঘল সিটি অফ গার্ডেন্স’। লাহৌর পাকিস্তানের অন্যতম প্রাণকেন্দ্র। আজকের এই একবিংশ শতকে নয়, মোগল আমল, শিখ রাজত্ব এবং ব্রিটিশরাজের সময় থেকে লাহৌর সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্যের ধারকবাহক। ১৮৯৪ সালে এই লাহৌর মিউজিয়াম তৈরি হয় মল রোডে। ২৩টি গ্যালারি নিয়ে তৈরি এই মিউজিয়াম দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম সংগ্রহশালা। ইন্দাস ভ্যালি, গান্ধার সভ্যতা, মোগল সাম্রাজ্য এবং হরপ্পা-মহেঞ্জোদাড়ো সভ্যতা তুলে ধরা হয়েছে ছবি, মাটির তৈরি মূর্তির মাধ্যমে। বিভিন্ন গ্যালারিতে রয়েছে তত্‌কালীন স্বর্ণালঙ্কার, পরিধেয় বস্ত্র, বাদ্যযন্ত্র, মাটির তৈরি বিভিন্ন সামগ্রী, অস্ত্রশস্ত্র, পেন্টিং এবং কোরান-সহ বিভিন্ন ম্যানাস্ক্রিপ্ট। এছাড়া রয়েছে বিভিন্ন সময়ের পাকিস্তানি শিল্পকলার নিদর্শন। এক কথায় লাহৌর মিউজিয়াম সুবিন্যস্ত-সুন্দর।

আদতে লাহৌর শহরটা কিছুটা লখনউ, অনেকটা পুরনো দিল্লি এবং অল্প আধুনিকতার এক অত্যাশ্চর্য উজ্জ্বল উদাহরণ। শের-শায়রি-সুরা-সঙ্গীত এবং পুরনো প্রেমিকার এক কর্ন্দপ-ককটেল!

মধ্যাহ্নভোজের পর আমাদের আছে চায়ের নিমন্ত্রণ। পঞ্জাব প্রদেশের রাজ্যপাল চৌধুরী মহম্মদ সারওয়ার সাহেবের আমন্ত্রিত সবাই। বিলাসবহুল রাজভবনের উদ্দেশে যাত্রা। শহরের মধ্যে অভিজাত অঞ্চলে রাজভবন। চৌধুরী সাহেব সম্বন্ধে কিছু না বললে লেখাটা অসম্পূর্ণ থাকবে। সুদর্শন, অমায়িক, রুচিশীল ভদ্রলোক তিনি। ইংল্যান্ডের প্রথম মুসলিম সাংসদ। তাঁর নির্বাচনী কেন্দ্র ছিল স্কটল্যান্ডের গ্লাসগো। বিভিন্ন ধরনের সামাজিক, রাজনৈতিক এবং সেবামূলক কর্মকাণ্ড করেছেন তিনি স্কটল্যান্ডে থাকাকালীন। এখন তাঁরই পুত্র গ্লাসগোর সাংসদ। দেশের জন্য বাকি জীবন কাজ করবেন এই প্রত্যাশায় এখন পুরোপুরি পাকিস্তানবাসী। পরিচয় পর্ব শেষে আমাদের মধ্যে চলল আলাপচারিতা। সকলেই দু’দেশের সম্পর্ক উন্নয়নে আরও জোর দিলেন। চা, শিঙাড়া, স্যান্ডউইচ, স্প্রিং রোল, কেক ও প্যাস্ট্রির অফুরন্ত জোগান। রাজ্যপাল সাহেবের আতিথেয়তায় মুগ্ধ আমরা, কলকাতার প্রেস ক্লাব-এর প্রতিনিধিরা। তিনি নিজেই সব কিছুর তদারকি করলেন। দীর্ঘদিন বিদেশবাসী তিনি। আনখশির ভদ্র।

লাহৌরে সাড়ে তিন দিন থাকলাম আমরা। তৃতীয় দিনে কর্মব্যস্ততা মারাত্মক। বিভিন্ন সময়ে আছে তিনটি মিটিং। প্রথম মিটিং সকাল ১১টায়। গন্তব্যস্থল ল্যান্ড রেকর্ডস ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড ইনফর্মেশন সিস্টেম, সংক্ষেপে LRMJS অফিস। বিশ্বব্যাঙ্কের টাকায় তথ্যপ্রযুক্তির সাহায্যে সমস্ত জমি এবং সম্পত্তির নথি কী ভাবে রাখা হয় জায়ান্ট স্ক্রিনের পর্দায় স্লাইড শো করে দেখানো হল। পঞ্জাব প্রদেশে কোনও বাড়ি বা জমির মিউটেশন করতে লাগে মাত্র দেড় ঘণ্টা। সব কিছুই কম্প্যুটারাইজড। দালাল ধরা বা দীর্ঘকালীন অপেক্ষা আর নেই। উপযুক্ত কাগজপত্র দাখিল করলে মাত্র ৯০ মিনিটে হাতে পেয়ে যাবেন মিউটেশন সার্টিফিকেট। প্রতিটি বৈঠকের পরপর থেকেছে একটা করে সাইট সিয়িং পর্ব। এবার গন্তব্যস্থল ঐতিহাসিক লাহৌর ফোর্ট। মোগল সম্রাট আকবর তৈরি করেন এই ফোর্ট। লাহৌর ফোর্টের পাশে ফুড স্ট্রিটের কথায় পরে আসব। ফোর্ট সম্বন্ধে প্রথমে দু’চার কথা বলা প্রয়োজন।

“আদতে লাহৌর শহরটা কিছুটা লখনউ, অনেকটা পুরনো দিল্লি এবং অল্প আধুনিকতার এক অত্যাশ্চর্য উজ্জ্বল উদাহরণ। শের-শায়রি-সুরা-সঙ্গীত এবং পুরনো প্রেমিকার এক কর্ন্দপ-ককটেল!”

প্রায় কুড়ি হেক্টর জায়গা নিয়ে বিস্তৃত এই লাহৌর ফোর্ট, যার নাম স্থানীয় বাসিন্দাদের কাছে ‘শাহী কিল্লা’। সম্রাট আকবর তৈরি করেছিলেন এই দুর্গ ১৫৫৬ থেকে ১৬০৫ সালের মধ্যে। এই ফোর্ট পরবর্তী নবাব ঔরঙ্গজেব, শিখ সম্রাট রণজিত্‌ সিংহ এবং ব্রিটিশ রাজের সময় নানা ভাবে সৌন্দর্যবর্ধন এবং নতুন নির্মাণকার্য হয়। ফোর্টে আছে দুটো প্রধান গেট। আলমগির গেট এবং মসজিদ গেট। আলমগির গেট তৈরি করেন ঔরঙ্গজেব এবং মসজিদ গেট আকবর। মসজিদ গেটটি এখন সম্পূর্ণ বন্ধ। দুই ভাগে বিভক্ত এই ফোটর্, যার প্রথম ভাগে আছে সুন্দর বাগান এবং দেওয়ান-ই-খাস। দ্বিতীয় ভাগে আছে শীষমহল, মোতি মসজিদ। দৈর্ঘ্যে ও প্রস্থে এই ফোর্ট প্রায় ১৪০০ ফুট এবং ১১৭৫ ফুট। বলে রাখা দরকার এই লাহৌর ফোর্ট ইউনেস্কোর ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট। অপূর্ব সুন্দর এবং অত্যন্ত যত্ন সহকারে রক্ষণাবেক্ষণ করা হয়। দেশি এবং বিদেশি সকল ভ্রমণার্থীর কাছে আকর্ষণীয়।

আমাদের গাইডেড ট্যুরের ব্যবস্থা ছিল। ফোর্ট থেকে বেরিয়ে গাড়ি থেকেই দেখলাম ‘মিনার ই পাকিস্তান’। এটি একটি প্রায় ৭২ মিটার লম্বা সৌধ, ১৯৬০ সালে তৈরি এক ঐতিহাসিক ঘটনার নিদর্শন বা সাক্ষী স্বরূপ। ১৯৪০ সালে এই স্থান থেকেই মুসলিম লিগ ঘোষণা করে লাহৌর প্রস্তাব। এই সভায় গৃহীত হয় মুসলমানদের জন্য আলাদা রাষ্ট্র। এই নীতির সম্মানে তৈরি হয় এই সৌধ, যেখানে আজকাল বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের জমায়েত এবং আন্দোলনের স্থান। লাঞ্চের পর আবার মিটিং পর্ব। পাকিস্তান এডুকেশনাল এনডাওমেন্ট ফান্ড সংক্ষেপে পি ই ই এফ-এর সদর দফতরে আমাদের মিটিং। পঞ্জাব সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় চলে এই সংগঠন যেটা মুখ্যমন্ত্রী পঞ্জাব শাহবাজ শরিফের মস্তিষ্কপ্রসূত। ২০০৪ সালে দুই বিলিয়ন টাকা দিয়ে এই সংগঠন তৈরি হয়, যার উদ্দেশ্য গরিব, মেধা-সম্মান এবং অনুন্নত ছাত্র-ছাত্রীদের শিক্ষায় আর্থিক সাহায্য। বিভিন্ন ধরনের বৃত্তি এবং আর্থিক অনুদান দেওয়া হয় অনাথ, প্রতিবন্ধী, বিধবা এবং সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ছাত্রছাত্রীদের। অদ্যাবধি সাহায্যপ্রাপকের সংখ্যা ৪১ হাজারের কাছাকাছি। সংগঠনের কর্তাব্যক্তিদের সঙ্গে আলাপাচরিতায় জানলাম সব তথা। অত্যন্ত বলিষ্ঠ এবং স্বচ্ছ এই সংস্থার জন্য রইল বিশেষ অভিনন্দন।

পাকিস্তান আসার আগে শালিমার গার্ডেন্স, আনারকলি বাজার এবং ফুড স্ট্রিটের কথা জেনেছিলাম। আমরা আনারকলি বাজারে আজ কেনাকাটা করব। প্রায় ৪০০ বছরের পুরোনো এই বাজার, ইতিহাসখ্যাত আনারকলি যাকে জীবন্ত কবর দেওয়া হয়, তার নামে নামাঙ্কিত। আনারকলি অত্যন্ত সুন্দরী ছিলেন আর সম্রাট আকবরের পুুত্র সেলিমের প্রণয়ী। এই অবৈধ সম্পর্ক আকবর মেনে নিতে পারেননি। ফল হল জীবন্ত কবর। দুই ভাগে বিভক্ত এই বাজারের এক ভাগে আছে কাবাবের দোকান, গিফট শপ। দ্বিতীয় ভাগে আছে পোশাক-পরিচ্ছদ, পাকিস্তানী সূচিশিল্প ও কারিগরি শিল্পে সমৃদ্ধ দোকান। বেশ কয়েক কিলোমিটার বিস্তৃত। ভ্রমণার্থীদের কাছে অতীব আকর্ষণীয়। প্রত্যেকে নিজের মতো কেনাকাটা করে হোটেলে পৌঁছলাম। ডিনার হবে ফুড স্ট্রিটের এক রেস্তরাঁয়।

ফুড স্ট্রিটের খাবার না খেলে লাহৌর ভ্রমণ অসম্পূর্ণ থাকে। কথিত আছে লাহৌর কখনও ঘুমায় না, ফুড স্ট্রিটও নিদ্রা যায় না। রাস্তার দু’ধারে সারি সারি দোকান, ফুটপাথে টেবিল পেতে খানা খাওয়া অনেকটা প্যারিসের রাস্তাকে মনে করিয়ে দেয়। পুরোনো বাড়িগুলিকে রেস্টুরেন্টে রূপান্তর করা হয়েছে অত্যন্ত চমত্‌কার ভাবে। সারা রাস্তায় আলোকসজ্জা। রাস্তা থেকেই দেখা যাচ্ছে আলোকিত লাহৌর ফোর্ট এবং বাদশাহি মসজিদ। অপূর্ব সুন্দর পরিবেশ। কোনও কোনও রেস্টুরেন্টের সামনে বার-বি-কিউ-এর ব্যবস্থা। তৈরি হচ্ছে বিভিন্ন ধরনের কাবাব। খাদ্যরসিকদের কাছে সত্যিকারের স্বর্গ। বিরিয়ানি, কাবাব, হালিম, রুটি, সবজি, মিষ্টি নানা প্রকার খাবার দিয়ে আমাদের নৈশভোজ হল এক রুফ টপ রেস্তোরাঁয়।

২৩ মার্চ আমরা দেশে ফিরব। সকালে আমরা মিটিং করলাম পঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রীর বাসগৃহে সরকারের শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে। সোখানেই প্রাতরাশ। এর পর সরকারি বাস আমাদের পৌঁছে দিল ওয়াগা সীমান্তে। বিদায় লাহৌর। বিদায় পাকিস্তান। এই ভ্রমণ, আতিথেয়তা কোনও দিন ভুলব না। জীবনে সুযোগ পেলে অবশ্যই যাব পাকিস্তান। এক বার নয়। অনেক বার।

ছবি: প্রতিবেদক।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

lahore raja dutta
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE