Advertisement
০২ মে ২০২৪

কুকুরে ঢিল খেলেও কি দোষ সরকারের, মন্ত্রীর কথায় ঝড়

বিজয়াদশমীর শুভেচ্ছা বিনিময় শিকেয় তুলে জাতীয় রাজনীতিতে আজ দিনভরই চলল আক্রমণ ও পাল্টা আক্রমণ। বিরোধী শিবির মুখর কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ভি কে সিংহ ও আরএসএস-প্রধান মোহন ভাগবতের মন্তব্য নিয়ে। এরই পাল্টা, বিজেপি সরব গাঁধী পরিবারের বিরুদ্ধে কালো টাকার লেনদেন ও দুর্নীতির অভিযোগ তুলে।

ভি কে সিংহ

ভি কে সিংহ

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২৩ অক্টোবর ২০১৫ ০১:৪১
Share: Save:

বিজয়াদশমীর শুভেচ্ছা বিনিময় শিকেয় তুলে জাতীয় রাজনীতিতে আজ দিনভরই চলল আক্রমণ ও পাল্টা আক্রমণ। বিরোধী শিবির মুখর কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ভি কে সিংহ ও আরএসএস-প্রধান মোহন ভাগবতের মন্তব্য নিয়ে। এরই পাল্টা, বিজেপি সরব গাঁধী পরিবারের বিরুদ্ধে কালো টাকার লেনদেন ও দুর্নীতির অভিযোগ তুলে।

হরিয়ানার শোনপেড় গ্রামে এক দলিত পরিবারের বাড়িতে আগুন লাগিয়ে দুই শিশুকে খুনের ঘটনায় এমনিতেই উত্তপ্ত ছিল দিল্লির রাজনীতি। বিতর্কে আজ ঘি ঢালেন মন্ত্রী ভি কে সিংহ। কেন্দ্রের মোদী সরকার তথা হরিয়ানার বিজেপি সরকারের পক্ষে দাঁড়িয়ে তিনি প্রশ্ন তোলেন, ‘‘কেউ কুকুরকে ঢিল ছুড়লে, সেটাও কি সরকারের দায়?’’ সাংবাদিকদেরও নিশানা করতেও ছাড়েননি প্রাক্তন সেনাপ্রধান সিংহ। তাঁর পরামর্শ, অকারণে যাঁরা সংবাদমাধ্যমে বিতর্ক তৈরি করছেন, তাঁরা সাংবাদিকতা ছেড়ে আগরায় (মানসিক রোগীদের হাসপাতালে) গিয়ে ভর্তি হলেই ভাল।

দুই দলিত শিশুর মৃত্যুর ঘটনা নিয়ে প্রশ্নের মুখে কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর এমন প্রতিক্রিয়ায় প্রায় একজোটে ফুঁসে ওঠেন বিরোধী শিবিরের নেতারা। লালুপ্রসাদ, নীতীশ কুমাররা তো বটেই, কংগ্রেস ও আপ নেতারাও এই মন্তব্যকে ‘দলিত-বিরোধী’ আখ্যা দিয়ে মাঠে নেমে পড়েন। তফসিলি জাতির উপর অত্যাচার আইনে ভি কে-র বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার ও তাঁর পদত্যাগের দাবি ওঠে। কংগ্রেস অভিযোগ তোলে, ভি কে এর আগেও সাংবাদিকদের সম্পর্কে কটূক্তি করেছেন। তাঁর আজকের মন্তব্যে বিজেপির দলিত ও সংখ্যালঘু বিরোধী মনোভাবই প্রকাশ্যে চলে এসেছে। তাদের মতে, যে মনোভাব থেকে আরএসএস-প্রধান জাতিভিত্তিক সংরক্ষণ তুলে দেওয়ার কথা বলছেন, সেই একই মনোভাব থেকে ভি কে-ও দলিত ও কুকুরের তুলনা টানছেন।

একই দিনে বিতর্ক বাড়িয়েছে সঙ্ঘ-প্রধান মোহন ভাগবতের মন্তব্যও। দাদরি থেকে শোনপেড় কাণ্ডকে এ দিন তিনি ‘ছোটখাটো ব্যাপার’ আখ্যা দেন। দাদরি থেকে শোনপেড় হত্যাকাণ্ড, দিল্লি বা মুম্বইয়ে মুখে কালি লেপার ঘটনা, সাহিত্যিকদের পদত্যাগ, গুলাম আলির অনুষ্ঠান পণ্ড করার মতো একের পর এক ঘটনায় এমনিতেই মোদী জমানায় অসহিষ্ণুতার পরিবেশ তৈরি হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। পরিস্থিতি সামলাতে এক দিকে অমিত শাহ বিজেপির বিতর্কিত নেতাদের মুখ বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছেন। অন্য দিকে অরুণ জেটলি নিন্দা করেছেন শিবসেনার আগ্রাসী মনোভাবের। যার জন্য তাঁকে আজ শিবসেনার আক্রমণের মুখে পড়তে হয়। শিবসেনার মুখপত্র সামনা-র সম্পাদকীয়র বক্তব্য, তাদের কারও জ্ঞান শোনার প্রয়োজন নেই।

এই পরিস্থিতিতে আজ নাগপুরে ভাগবত বলেন, ‘‘এ রকম ছোটখাট ব্যাপার ঘটেই থাকে। এগুলোকে ফুলিয়ে-ফাঁপিয়ে বড় করে দেখানো হয়। কিন্তু এ সব করে ভারতীয় সংস্কৃতি, হিন্দু সংস্কৃতিকে বিকৃত করা যায় না। হিন্দুত্ব বৈচিত্র্যর মধ্যে ঐক্যকে সম্মান করে।’’

ভি কে এবং ভাগবতের মন্তব্যে সমালোচনার ঝড় উঠছে বুঝেই দু’জনের তোলা প্রসঙ্গ ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা শুরু করে বিজেপি। ভি কে-র মন্তব্যে কার্যত খানিকটা ‘ব্যাক ফুটে’ই চলে যায় বিজেপি। বিতর্কের মোড় ঘোরাতে বিকেলে পাল্টা আক্রমণে নামে বিজেপি। সরাসরি নিশানা করা হয় গাঁধী পরিবারকে। সাংবাদিক বৈঠক করে বিজেপির মুখপাত্র সম্বিৎ পাত্র অভিযোগ তোলেন, ন্যাশনাল হেরাল্ড-কাণ্ডে কোটি কোটি টাকার বেআইনি লেনদেন হয়েছে।

কী ভাবে? বিজেপির অভিযোগ, সনিয়া-রাহুলের মালিকানাধীন সংস্থা ইয়ং ইন্ডিয়ান ১ কোটি টাকার ঋণ নিয়েছিল ডোটেক্স মার্চেন্ডাইস নামে কলকাতার একটি সংস্থার কাছে থেকে। ডোটেক্সের কর্ণধার উদয়শঙ্কর মহাওয়ার-এর এমন ২০০টি সংস্থা আছে। উদয় নিজেই কলকাতার আয়কর দফতরের তদন্তে জানিয়েছেন, কালো টাকা সাদা করার জন্যই এই সংস্থাগুলি তৈরি হয়েছিল। বিজেপি মুখপাত্রের প্রশ্ন, ‘‘সনিয়ার চরণে ১ কোটি টাকা ছড়িয়ে দেওয়ার মতো কোটি কোটি দুর্নীতিগ্রস্ত নেতা রয়েছেন কংগ্রেসে। তাঁদের কেন ১ কোটি টাকা ঋণ নেওয়ার প্রয়োজন পড়ল?’’

বিজেপির এই অভিযোগের জবাবে কংগ্রেসের দাবি, আরপিজি গোষ্ঠীর অধীন ওই সংস্থা থেকে কংগ্রেস চেক-এর মাধ্যমে ১ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছিল। ১৪ শতাংশ সুদ সমেত সেই ঋণ শোধও হয়ে গিয়েছে। আরপিজি গোষ্ঠীর সঙ্গে ডোটেক্সের লেনদেনের বিষয়ে কংগ্রেস বা ইয়ং ইন্ডিয়ান সংস্থার কোনও সম্পর্ক নেই।

সম্বিতের পাল্টা দাবি, সনিয়া-রাহুল ইয়ং ইন্ডিয়ান তৈরি করে ঋণগ্রস্ত ন্যাশনাল হেরাল্ড সংস্থা অধিগ্রহণ করেন। ন্যাশনাল হেরাল্ডের ৫ হাজার কোটি টাকার সম্পত্তি রয়েছে গোটা দেশে। কালো টাকা সাদা করে সেই সম্পত্তির মালিক হয়েছেন সনিয়া-রাহুল। সম্বিতের প্রশ্ন, ‘‘এই কালো টাকা কার? কয়লা, টুজি না কমনওয়েল্থ কেলেঙ্কারির? নাকি রাহুলের ভগ্নিপতির?’’ কংগ্রেস মুখপাত্র রণদীপ সুরজেওয়ালার পাল্টা মন্তব্য, ‘‘আসলে বিহার ভোটে হার নিশ্চিত দেখে হতাশ হয়ে বিজেপি শবির এই সব কথা বলছে।’’

বিরোধী শিবিরের এই অভিযোগ উড়িয়ে সঙ্ঘ-নেতা এ দিন দাবি করেন, আরএসএস ভোটের কথা ভেবে কিছু করে না। বিজেপি নেতৃত্ব গাঁধী পরিবারের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ তুলে পাল্টা আক্রমণে গেলেও নিজেদের শিবির সামলাতেও তাঁদের দিনভর ব্যস্ত থাকতে হয়েছে। নিজের মন্তব্য নিয়ে বিতর্ক ধামাচাপা দিতে ভি কে ব্যাখ্যা দিয়েছেন, তিনি মোটেই দলিতদের সঙ্গে কুকুরের তুলনা টানেননি। বিজেপি-ও দাবি করেছে, এই মন্তব্য নিয়ে অনাবশ্যক বিতর্ক হচ্ছে। কিন্তু বিজেপি যে দলিত-বিরোধী, এমন কোনও বার্তা যাতে না যায়, তার জন্য আজই হরিয়ানার ওই দলিত পরিবারের সঙ্গে দেখা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মনোহরলাল খাট্টার। সরকারের বিরুদ্ধে বিক্ষোভের জেরে মুখ্যমন্ত্রী কাল ঘটনাস্থলে যেতে পারেননি। আর আজ তিনি যাওয়ার পরেও প্রশ্ন উঠেছে, ঘটনাস্থলে যেতে মুখ্যমন্ত্রীর তিন দিন লেগে গেল কেন?

খাট্টার জবাব দিয়েছেন, ওই ঘটনার উপর তিনি নিরন্তর নজর রাখছেন। সিবিআইকে তদন্তের ভার দেওয়া হয়েছে। সাত জনকে গ্রেফতারও করা হয়েছে। এতে ক্ষোভ মেটানো যায়নি। খাট্টার ঘুরে যাওয়ার পরেই ফের বিক্ষোভ শুরু হয় সরকারের বিরুদ্ধে।

মোহন ভাগবতের ‘ছোটখাটো ঘটনা’ মন্তব্য নিয়ে সমালোচনা হচ্ছে দেখে মুখ খুলেছেন সঙ্ঘের নেতারাও। তাঁদের ব্যাখ্যা, তিনি সহিষ্ণুতার বার্তাই দিতে চেয়েছেন। তাঁদের যুক্তি, বিজয়াদশমীর বার্ষিক বক্তৃতায় বি আর অম্বেডকরের কথাও উল্লেখ করেছেন সঙ্ঘ-প্রধান। এ থেকেই স্পষ্ট সঙ্ঘ-পরিবার মোটেই দলিত বিরোধী নয়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

abpnewsletters
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE