Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

কাগজ সরিয়ে বিধানসভায় ই-বিধান, ডাকছে হিমাচল

বিধানসভায় কেমন ভূমিকা পালন করছেন বিধায়কেরা? কী প্রশ্ন হচ্ছে, তার উত্তরেই বা কী বলা হচ্ছে? অধিবেশনের মধ্যে কার যুক্তি কেমন জোরালো? এ সবের হদিস চাইলে আর দিস্তে দিস্তে নথি ঘাঁটার দরকার হবে না! অনলাইনেই মিলবে বিধানসভার যাবতীয় খবর। যদি মানা হয় হিমাচল মডেল! দেশের মধ্যে প্রথম বিধানসভা হিসাবে ই-বিধান ব্যবস্থা চালু করে ফেলেছে হিমাচল প্রদেশ বিধানসভা। বিধায়কদের প্রশ্ন জমা দেওয়া, নানা দলের নানা প্রস্তাব দাখিল করা থেকে বিধানসভার বিভিন্ন দফতরের মধ্যে তথ্য আদানপ্রদান সব কাজ তারা করছে অনলাইনে।

সন্দীপন চক্রবর্তী
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৩ নভেম্বর ২০১৪ ০২:৪২
Share: Save:

বিধানসভায় কেমন ভূমিকা পালন করছেন বিধায়কেরা? কী প্রশ্ন হচ্ছে, তার উত্তরেই বা কী বলা হচ্ছে? অধিবেশনের মধ্যে কার যুক্তি কেমন জোরালো? এ সবের হদিস চাইলে আর দিস্তে দিস্তে নথি ঘাঁটার দরকার হবে না! অনলাইনেই মিলবে বিধানসভার যাবতীয় খবর। যদি মানা হয় হিমাচল মডেল!

দেশের মধ্যে প্রথম বিধানসভা হিসাবে ই-বিধান ব্যবস্থা চালু করে ফেলেছে হিমাচল প্রদেশ বিধানসভা। বিধায়কদের প্রশ্ন জমা দেওয়া, নানা দলের নানা প্রস্তাব দাখিল করা থেকে বিধানসভার বিভিন্ন দফতরের মধ্যে তথ্য আদানপ্রদান সব কাজ তারা করছে অনলাইনে। একটুও কাগজ ব্যবহার না করে সদ্য সে রাজ্যে হয়ে গিয়েছে প্রথম ‘পেপারলেস’ অধিবেশন। এবং সেই খবর পাওয়ার পর থেকেই হিমাচলের বিধানসভায় এসে পৌঁছতে শুরু করেছে একের পর এক কৌতূহলী প্রশ্ন। সে সবের উত্তর দেওয়ার জন্যই এ বার সব রাজ্যের স্পিকারদের নিয়ে কর্মশালা করতে চাইছে হিমাচল বিধানসভা। অনলাইন ব্যবস্থা চালু করতে উদ্যোগী পশ্চিমবঙ্গ বিধাসভার স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়ও চাইছেন হিমাচলের অভিজ্ঞতা প্রত্যক্ষ করতে।

ই-বিধান চালু হলে শুধু যে কাজের সুবিধা হয়, তা-ই নয়। এখনকার প্রচলিত ব্যবস্থায় বিধানসভার ভিতরে জনপ্রতিনিধিরা কী কাজ করছেন, তার রেকর্ড চাইলে নথি ঘাঁটতে হয়। যে নথি রাখা থাকে বিধানসভার আর্কাইভে এবং আম জনতার পক্ষে সেখানে পৌঁছনোও তুলনায় কঠিন। ই-বিধান হলে সব রেকর্ডই যে কোনও জায়গায় শুধু সাইট খুলে দেখে নেওয়া সম্ভব। যার ফলে জনপ্রতিনিধিদের ভূমিকায় মানুষের নজরদারিও তুলনামূলক ভাবে সহজ হবে ই-বিধানে।

ই-বিধান চালু করার জন্য হিমাচল প্রদেশের বিধানসভাকে গত বছর ৮ কোটি ৫৮ লক্ষ টাকা দিয়েছিল কেন্দ্রের বিগত ইউপিএ সরকার। কেরলের একটি সংস্থাকে দিয়ে সেই প্রকল্পের কাজ সম্পূর্ণ হয়েছে এ বছর। তার পরে বিধায়কদের কাগজহীন ব্যবস্থায় সড়গড় করার জন্য প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। সে সব মিটিয়ে অগস্ট-সেপ্টেম্বরে হয়েছে প্রথম ‘পেপারলেস’ অধিবেশন। হিমাচল বিধানসভা কর্তৃপক্ষের বক্তব্য, এই ব্যবস্থায় অধিবেশন এবং আনুষঙ্গিক কাজকর্ম চালাতে সাশ্রয় হচ্ছে বছরে প্রায় ১৫ কোটি টাকা। আবার অন্য দিক থেকে দেখলে এই পরিমাণ কাগজের ব্যবহার বন্ধ করতে পারলে বছরে ৮ প্রায় হাজার গাছের প্রাণ বাঁচানো সম্ভব বলে তাঁরা মনে করছেন। বিধানসভার আগাগোড়া সব কাজ অনলাইন তথা কম্পিউটারে সেরে ফেলা নিঃসন্দেহে অভিনব পদক্ষেপ। আর তার পর থেকেই অন্যান্য রাজ্য যোগাযোগ করতে শুরু করেছে কংগ্রেস-শাসিত হিমাচলের সঙ্গে। বিশেষত, উত্তর-পূর্বের রাজ্যগুলি জানিয়েছে, তাদের বিধানসভার আয়তন ছোট। সেখানে ই-বিধান চালু করা তুলনায় সহজ। হিমাচল প্রদেশ বিধানসভার স্পিকার ব্রিজ বিহারী লাল বুটেল রবিবার আনন্দবাজারকে বলেছেন, “আমাদের প্রথম পেপারলেস অধিবেশন হওয়ার পরেই এখনও পর্যন্ত ১৪টা রাজ্য যোগাযোগ করেছে নানা তথ্য চেয়ে। আমাদের অভিজ্ঞতা সত্যিই অনবদ্য। কেন্দ্রীয় তথ্য ও টেলি-প্রযুক্তি মন্ত্রককে লিখিত ভাবে আর্জি জানিয়েছি, সব রাজ্যের স্পিকারদের আমন্ত্রণ জানিয়ে শিমলায় এই ব্যাপারে একটি কর্মশালার আয়োজন করা হোক। কারণ, এক একটা রাজ্যকে আলাদা আলাদা করে নানা প্রশ্নের জবাব দেওয়া মুশকিল।” ব্রিজ বিহারীর যুক্তি, একটা প্রদেশের বিধানসভার স্পিকার হিসাবে তিনি কর্মশালা ডাকলে অন্য রাজ্য সাড়া না-ও দিতে পারে। কেন্দ্রীয় সরকার ডাকলে সেই সমস্যা নেই।

পঞ্জাব বিধানসভায় গিয়ে ইতিমধ্যেই তাঁর অভিজ্ঞতার কথা এক প্রস্ত জানিয়ে এসেছেন হিমাচলের স্পিকার। ব্রিজ বিহারীর কথায়, “বিভিন্ন বিধানসভার কাজ নানা ভাষায় হয়। তাই সেই দিকে খেয়াল রেখে ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে। আমাদের এখানে বিধায়কদের প্রশ্ন জমা এবং অন্যান্য কাজে প্রাথমিক ভাবে সহায়তা করছেন কর্মীরা।” তাঁদের ই-বিধানের উপরে একটি ভিডিও ক্যাপসুল তৈরি করা হচ্ছে বলেও জানাচ্ছেন ব্রিজ বিহারী।

ই-বিধানের খবরে যথেষ্টই উৎসাহিত পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভার স্পিকার বিমানবাবু। তাঁর কাছে এখনও শিমলা থেকে বার্তা আসেনি। তবে বিমানবাবুর বক্তব্য, “এই নিয়ে আলোচনা হলে খুবই ভাল এবং উপযোগী হবে।” বিমানবাবুর উৎসাহেই এখন রাজ্য বিধানসভার ওয়েবসাইটে প্রশ্নোত্তরের নথি আপলোড করা হচ্ছে। স্পিকারের বক্তব্য, “প্রশ্নকর্তা অনুপস্থিত থাকায় বা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী আরও সময় চাওয়ায় যে প্রশ্নের উত্তর সভায় হচ্ছে না, সেগুলো আর সাইটে দেওয়া হচ্ছে না। কিন্তু বাকি সব তুলে দেওয়া হচ্ছে। আমরা চাইছি এই ব্যবস্থাকে আরও উন্নত করতে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE