Advertisement
E-Paper

কল্যাণীতেই এইমস, চূড়ান্ত সায় কেন্দ্রের

সিদ্ধান্ত আগেই নেওয়া হয়েছিল। পশ্চিমবঙ্গের কল্যাণীতে এইমস-এর ধাঁচে হাসপাতাল গ়ড়ার প্রকল্পে বুধবার শেষ পর্যন্ত চূড়ান্ত অনুমোদন দিল প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৮ অক্টোবর ২০১৫ ০৩:২২

সিদ্ধান্ত আগেই নেওয়া হয়েছিল। পশ্চিমবঙ্গের কল্যাণীতে এইমস-এর ধাঁচে হাসপাতাল গ়ড়ার প্রকল্পে বুধবার শেষ পর্যন্ত চূড়ান্ত অনুমোদন দিল প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা।

কেন্দ্রীয় মন্ত্রী পীযূষ গয়াল এ দিন মন্ত্রিসভার বৈঠকের পর ঘোষণা করেন, প্রধানমন্ত্রী স্বাস্থ্য সুরক্ষা যোজনা-র আওতায় এই প্রতিষ্ঠানটি গড়া হবে। পশ্চিমবঙ্গের পাশাপাশি মহারাষ্ট্রের নাগপুর ও অন্ধ্রপ্রদেশের মঙ্গলাগিরিতেও এই ধরনের হাসপাতাল গড়া হবে। মন্ত্রী জানান, কল্যাণীর হাসপাতালটির জন্য খরচ হবে ১৭৫৪ কোটি টাকা। এ জন্য রাজ্য সরকারের কাছ থেকে জমি পাওয়া গিয়েছে। পাঁচ বছরের মধ্যে ৯৬০ শয্যার এই হাসপাতালটি গড়ে তোলার লক্ষ্য নেওয়া হয়েছে।

কল্যাণীতে হাসপাতালের সঙ্গে একটি মেডিক্যাল কলেজও গড়া হবে। সেখানে মেডিক্যাল শিক্ষা, নার্সিং প্রশিক্ষণেরও ব্যবস্থা থাকবে। পাশাপাশি মেডিক্যাল কলেজ
গড়ার শর্ত মেনে একই চত্বরে অ্যাকাডেমিক ভবন, প্রশাসনিক ভবন, পড়ুয়াদের হস্টেল, অডিটোরিয়াম, নার্সিং কলেজও থাকবে। গয়ালের মতে, ভাল চিকিৎসার জন্য সাধারণ মানুষকে দিল্লিতে ছুটে আসতে
হতো। কিন্তু এখন এইমসের মতো প্রতিষ্ঠান দেশের নানা প্রান্তে ছড়িয়ে দিতে চাইছে মোদী সরকার। সাধ্যের মধ্যে এ সব জায়গায় ভাল চিকিৎসার সুযোগ পাবে সাধারণ মানুষ। পাশাপাশি মেডিক্যাল কলেজ
হওয়ায় স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে পেশাদারদের ঘাটতিও মিটবে।

গত বাজেট বক্তৃতাতেই এই ঘোষণা করেছিলেন অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি। গয়াল জানিয়েছেন, পরিকাঠামো তৈরির আগে এক
বছর সময় লাগবে। তার পর গোটা প্রতিষ্ঠান গড়তে আরও চার বছর। কিন্তু ইতিমধ্যেই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে, অতীতে এইমসের ধাঁচে যে সব হাসপাতাল ঘোষণা হয়েছিল, ছ’বছর কেটে গেলেও তা সম্পূর্ণ হয়নি। সনিয়া গাঁধীর নির্বাচনী কেন্দ্র রায়বরেলীতে এইমসের কাজ অসমাপ্ত। গয়ালের সাফাই, সেটি ইউপিএ জমানায় শুরু হয়েছিল। কিন্তু এখন মোদীর আমলে নির্দিষ্ট সময়েই কাজ শেষ হবে।

এইমস যে কল্যাণীতেই হবে— ২০১৪-র মাঝামাঝি নবান্নকে চিঠি দিয়ে জানিয়ে দিয়েছিল কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক। কিন্তু শহর-লাগোয়া কোন জমিতে তৈরি হবে ওই হাসপাতাল, তা নিয়ে সংশয় ছিল। শেষ পর্যন্ত গত মার্চে প্রধানমন্ত্রী স্বাস্থ্য সুরক্ষা যোজনার অধিকর্তা সঞ্জীব চাড্ডা স্বাস্থ্য দফতরকে জানিয়ে দেন— দু’টি জমি পরিদর্শনের পরে তাঁরা কল্যাণীর বসন্তপুরের গোড়াগাছা মৌজার ১৮০ একর জমিকেই হাসপাতালের জন্য বেছেছেন। রাজ্যের স্বাস্থ্য-শিক্ষা অধিকর্তা সুশান্ত বন্দ্যোপাধ্যায় এ দিন বলেন, ‘‘প্রাথমিক ভাবে আমাদের তরফে যা করার ছিল, আমরা করেছি। ১৮০ একর জমির ব্যবস্থা করেছি। এ বার মূল দায়িত্বটা কেন্দ্রের। ওরা কত দ্রুত কাজ শুরু করতে পারে সেটাই দেখার। পরবর্তী সময়ে পরিকাঠামোগত সহায়তা যা লাগবে, আমরা সেগুলি দেব।’’

এ রাজ্যে এইমস কোথায় হবে, সেই টালবাহানার শুরু ১৯৯৪ থেকে। কেন্দ্রের সঙ্গে কথা বলে তত্‌কালীন বাম সরকারের স্বাস্থ্যমন্ত্রী প্রশান্ত শূর কল্যাণীতে এইমস-এর ধাঁচে হাসপাতাল তৈরির প্রাথমিক সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেন। যোজনা কমিশনের তত্‌কালীন চেয়ারম্যান প্রণব মুখোপাধ্যায় ওই খাতে ১০ কোটি টাকা অনুমোদনও করেছিলেন। ওই বছর ২৬ সেপ্টেম্বর তদানীন্তন রাষ্ট্রপতি শঙ্করদয়াল শর্মা ওই
জমিতে ‘পোস্টগ্র্যাজুয়েট
মেডিক্যাল সায়েন্স অ্যান্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউট’-এর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। তখন বলা হয়, এটিই এইমসের ধাঁচে হাসপাতাল হিসাবে গড়ে উঠবে। আবার রায়গঞ্জে এইমস-এর ধাঁচে প্রতিষ্ঠান তৈরির ব্যাপারে উদ্যোগী হয়েছিলেন প্রিয়রঞ্জন দাসমুন্সিও। তিনি
অসুস্থ হওয়ার পরে সেই প্রকল্প নিয়ে কেন্দ্রের সঙ্গে যোগাযোগ চালিয়ে যান দীপা দাসমুন্সি। তবে এ রাজ্যে রাজনৈতিক পালাবদলের পর ২০১২ সালে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার কল্যাণীর পুরনো প্রকল্পের খসড়া দেখিয়েই দিল্লিতে ‘অল ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট অফ মেডিক্যাল সায়েন্সেস’ বা এইমস তৈরির প্রস্তাব পাঠায়। দীপা দাসমুন্সিকে ঠেকাতে মমতা আগাগোড়া রায়গঞ্জের বদলে রাজ্যের অন্যত্র এই হাসপাতাল করার পক্ষে ছিলেন। এমনকী এক বার শিলিগুড়ির নামও করেছিলেন তিনি। অবশেষে বাম আমলে প্রস্তাবিত কল্যাণীর নামেই সিলমোহর দেয় নরেন্দ্র মোদীর সরকার। কেন্দ্র ও রাজ্য সরকার মিলে উত্তরবঙ্গকে বঞ্চিত করল— এই অভিযোগ তুলে সে সময়ে রায়গঞ্জে সরব হয়েছিল কংগ্রেস। এ দিন দার্জিলিংয়ের
বিজেপি সাংসদ সুরেন্দ্র সিংহ অহলুওয়ালিয়াও এই আঞ্চলিক সংবেদনশীলতার বিষয়টি খুঁচিয়ে তুলে মুখ্যমন্ত্রীকে দোষারোপ করেছেন। তিনি বলেন, ‘‘বুধবারই পাকাপাকি ভাবে এইমস উত্তরবঙ্গের হাতছাড়া হল। স্বাস্থ্যমন্ত্রী হিসেবে এর সব দায় মুখ্যমন্ত্রীর। তৃণমূল সরকার যে উত্তরবঙ্গকে বঞ্চনা করে চলেছে, এটা তার আরও একটা বড় প্রমাণ।’’

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy