কাদা ছোড়ার রাজনীতি নয়। আগামী বাজেটে সামনের দিকে চোখ রেখেই এগোতে চান নরেন্দ্র মোদী, অরুণ জেটলি।
নরেন্দ্র মোদী সরকারের প্রথম পূর্ণাঙ্গ বাজেট তৈরি করতে গিয়ে অরুণ জেটলি আবিষ্কার করেছেন, ইউপিএ সরকারের শেষ বাজেটের হিসেবনিকেশে বিস্তর জল মেশানো রয়েছে। রাজকোষ ঘাটতিতে লাগাম পরাতে গিয়ে রাজস্ব আয়কে ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে দেখানো হয়েছে। আগের বছরের খরচ ঠেলে দেওয়া হয়েছে পরের বছরের খাতায়। প্রস্তাব উঠেছিল, পালানিয়প্পন চিদম্বরমের এই ‘কারসাজি’ বাজেট পেশের সময় বিশদে তুলে ধরা হোক। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী মোদী ও অর্থমন্ত্রী জেটলি সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, চিদম্বরম কী করে গিয়েছেন, সেই গলদ নিয়ে খোঁচাখুঁচি করবেন না তাঁরা। তার বদলে সরকার কী করতে চাইছে, শুধু সেটাই বাজেটে ঘোষণা করা হবে।
ইউপিএ সরকারের শেষ বাজেট পেশ করার সময় চিদম্বরম অর্থনীতিকে চাঙ্গা করার মরিয়া চেষ্টা করেছিলেন। ভারতীয় অর্থনীতি সম্পর্কে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের নেতিবাচক মনোভাব কাটাতে শক্ত হাতে রাজকোষ ঘাটতিতে রাশ টেনেছিলেন। রাজকোষ ঘাটতির লক্ষ্যমাত্রা স্থির করেছিলেন ৪.১ শতাংশ। লোকসভা নির্বাচনের পরে নতুন সরকারের অন্তর্বর্তী বাজেট পেশ করেন জেটলি। রাজকোষ ঘাটতিকে ৪.১ শতাংশে বেঁধে রাখা কঠিন হবে জেনেও তিনি চিদম্বরমের ‘চ্যালেঞ্জ’ গ্রহণ করেন সে সময়। এখন আর্থিক বছরের শেষে দেখা যাচ্ছে, অনেক বেশি রাজস্ব আদায় হবে বলে ধরে নিয়ে ঘাটতির অঙ্ক কষেছেন চিদম্বরম। তাঁর অঙ্ক মেলানো যাচ্ছে না কিছুতেই। তবু নেতিবাচক নয়, ইতিবাচক রাজনীতির পথেই হাঁটতে চাইছে মোদী সরকার। বিশেষ করে যেখানে আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম কমে যাওয়া সত্ত্বেও বাড়তি শুল্ক বসানোর ফলে ও অন্যান্য পথে রাজস্ব ঘাটতির মাত্রা বেঁধে রাখার একটা আশা এখনও রয়েছে।
বাজেট প্রস্তুতির শুরুতেই প্রধানমন্ত্রী, অর্থমন্ত্রী, প্রধানমন্ত্রীর সচিবালয় ও অর্থ মন্ত্রকের শীর্ষকর্তাদের বৈঠক হয়। ওই বৈঠকেই এই বিষয়টি উঠে আসে। এক জন প্রস্তাব দেন, চিদম্বরম যে লোক ঠকিয়েছিলেন, তা বাজেট পেশের সময়ই খোলসা করে দেওয়া হোক। কিন্তু জেটলি জানিয়ে দেন, চিদম্বরম কী ভুল করেছিলেন, তা দেখানো তাঁর কাজ নয়। সরকার আগামী অর্থবর্ষে কী করতে চায়, সে দিকেই জোর দেবেন তিনি। প্রধানমন্ত্রীও তাতেই সম্মতি দেন।
চিদম্বরমের বাজেটে হিসেবের গরমিলটা ঠিক কোথায়?
অর্থ মন্ত্রক সূত্রের বক্তব্য, চিদম্বরমের বাজেটের সব থেকে বড় সমস্যা হল রাজস্ব আদায় সম্পর্কে আকাশকুসুম কল্পনা। আর্থিক বৃদ্ধির হার বেশি থাকলে তবেই আশা করা যায়, রাজস্ব আদায় ভাল হবে, ছাঁটাই করা যাবে সরকারি বিনিয়োগ। ফলে রাজকোষ ঘাটতিও লাগামের মধ্যে থাকবে। কিন্তু মন্দার বাজারে উৎপাদন বা ব্যবসা-বাণিজ্য কম হয়। নেমে আসে আয়বৃদ্ধির হার। কর আদায়ও বেশি হয় না। এই অবস্থায় বৃদ্ধির হার বাড়াতে সরকারি ব্যয়ও বাড়াতে হয়। এর কোনওটাই মানেননি চিদম্বরম। অর্থ মন্ত্রকের কর্তাদের আরও অভিযোগ, ২০১৩-’১৪-র রাজকোষ ঘাটতিকে ৪.৫ শতাংশে বেঁধে রাখার সাফল্য দাবি করেছিলেন চিদম্বরম। কিন্তু ঘাটতি কম দেখাতে গিয়ে চিদম্বরম ওই বছরের একটা বড় অংশের খরচ পরের আর্থিক বছরের খাতায় ঠেলে দিয়েছিলেন। জেটলিকে এখন সেই দায় নিতে হচ্ছে।
অর্থ মন্ত্রকের প্রধান অর্থনৈতিক উপদেষ্টা অরবিন্দ সুব্রহ্মণ্যম মনে করছেন, চিদম্বরম জিডিপি ও রাজস্ব আদায় অনেক বেশি হারে বাড়বে বলে ধরে নিয়েছিলেন। দু’টোই ভুল অনুমান ছিল। চিদম্বরম ১ লক্ষ ৫ হাজার কোটি টাকা বাড়তি রাজস্ব আয় হবে বলে ধরে নিয়েছিলেন। অথচ আর্থিক বছরের শেষে দেখা যাচ্ছে, রাজস্ব আয়ে ঠিক ওই পরিমাণ ঘাটতি থেকে যাচ্ছে। চিদম্বরমের ঘনিষ্ঠ মহল বলছেন, আসলে মোদী সরকার রাজস্ব আদায় যথেষ্ট পরিমাণে বাড়াতে পারছে না। নতুন লগ্নি আসছে না। কারখানার উৎপাদনও সে ভাবে বাড়েনি। রাজস্ব আদায়েও তাই ঘাটতি থেকে যাচ্ছে।
অর্থ মন্ত্রকের কর্তাদের অবশ্য যুক্তি, রাজস্ব আদায় প্রত্যাশার চেয়ে কম হলেও রাজকোষ ঘাটতিকে ৪.১ শতাংশে বেঁধে রাখা যাবে। কী ভাবে?
বিশ্ব বাজারে তেলের দাম কমে যাওয়ায় পেট্রোল-ডিজেলের দাম কমছে। ফলে সরকারকে কম ভর্তুকি দিতে হচ্ছে। আবার পেট্রোল-ডিজেলের উপর উৎপাদন শুল্ক বসিয়ে বাড়তি আয়ের রাস্তা খুলেছেন জেটলি। ব্যয়সঙ্কোচ করেছেন। সরকারি মন্ত্রী-আমলাদের বিদেশ যাত্রায় রাশ টানা হচ্ছে। পরিকল্পনা-বহির্ভূত খাতে ১০ শতাংশ খরচ কমানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে। সরকারি সংস্থার বিলগ্নিকরণ করে ৫৮ হাজার ৪২৫ কোটি টাকা তোলার লক্ষ্যমাত্রা নিয়েছিলেন জেটলি। আর্থিক বছরের যে আড়াই মাস বাকি রয়েছে, তার মধ্যে ওএনজিসি-র মতো সরকারি সংস্থার বিলগ্নিকরণ করেও বাড়তি আয়ের চেষ্টা করছেন তিনি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy