Advertisement
১৮ মে ২০২৪

ছুটন্ত প্রিমিয়াম ট্রেনে নালিশ ঠুকতে হেল্পলাইন

পচা খাবার থেকে বাতানুকূল যন্ত্রে গড়বড়। নানা অভিযোগের দাগ প্রিমিয়াম এক্সপ্রেসের গায়ে। সেই দাগ তুলতে পরিষেবায় নজর দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে দু’টি ‘হেল্পলাইন’ চালু করছে রেল। হেল্পলাইনের টেলিফোন নম্বর লেখা থাকবে প্রতিটি কামরার ভিতরে। সেই নম্বরে ফোন করে সর্বাধিক ভাড়ার ওই এক্সপ্রেসের যাত্রীরা এ বার ট্রেন থেকেই পরিষেবা নিয়ে অভিযোগ জানাতে পারবেন। অভিযোগ পেলে সঙ্গে সঙ্গেই তার প্রতিকারের ব্যবস্থা হবে বলে জানিয়েছেন রেল-কর্তৃপক্ষ।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৬ মে ২০১৪ ০৩:৩৫
Share: Save:

পচা খাবার থেকে বাতানুকূল যন্ত্রে গড়বড়।

নানা অভিযোগের দাগ প্রিমিয়াম এক্সপ্রেসের গায়ে। সেই দাগ তুলতে পরিষেবায় নজর দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে দু’টি ‘হেল্পলাইন’ চালু করছে রেল। হেল্পলাইনের টেলিফোন নম্বর লেখা থাকবে প্রতিটি কামরার ভিতরে। সেই নম্বরে ফোন করে সর্বাধিক ভাড়ার ওই এক্সপ্রেসের যাত্রীরা এ বার ট্রেন থেকেই পরিষেবা নিয়ে অভিযোগ জানাতে পারবেন। অভিযোগ পেলে সঙ্গে সঙ্গেই তার প্রতিকারের ব্যবস্থা হবে বলে জানিয়েছেন রেল-কর্তৃপক্ষ।

প্রিমিয়াম এক্সপ্রেস চালু হওয়ার পরে পরেই ওই ট্রেনের যাত্রী-পরিষেবা নিয়ে ব্যাপক অভিযোগ উঠতে শুরু করে। সম্প্রতি দক্ষিণ-পূর্ব রেলের একটি প্রিমিয়াম ট্রেনে (বেঙ্গালুরু থেকে হাওড়ায় আসার পথে) যাত্রীদের পচা খাবার সরবরাহ করা নিয়ে গোলমাল হয়। সেই খাবার মুখে তুলতে না-পারায় সে-রাতে অভুক্ত থাকতে হয়েছিল অনেক যাত্রীকেই। ট্রেনের কর্মীদের কাছে বারবার অভিযোগ জানিয়েও কোনও ফল হয়নি। ক্ষুব্ধ যাত্রীরা পরে মোবাইল থেকে কলকাতায় সংবাদপত্রের দফতরে ফোন করে খাবার নিয়ে অভিযোগ জানান। সেখান থেকে রেলের সদর দফতরের কর্তাদের কাছে ওই খবর পৌঁছয়।

হাওড়া থেকে ফের বেঙ্গালুরু যাওয়ার সময়েও ওই একই প্রিমিয়াম এক্সপ্রেসে বিভ্রাট শুরু হয়। একটি কামরার বাতানুকূল যন্ত্র খারাপ হয়ে যাওয়ায় ট্রেনটি হাওড়াতেই আটকে পড়ে। সেখানে এক দফা মেরামতির পরে ট্রেনটি ছাড়ে। কিন্তু সাঁতরাগাছি স্টেশনে ঢোকার আগে কয়েকটি কামরার বাতানূকুল যন্ত্র ফের খারাপ হয়ে যায়। ওই স্টেশনে ট্রেনটি আটকে বিক্ষোভ দেখান যাত্রীরা। রেলকর্মীরা এসে নতুন কামরা জুড়ে দেওয়ার পরে হাওড়া-বেঙ্গালুরু প্রিমিয়াম এক্সপ্রেস ফের যাত্রা শুরু করে।

পচা খাবার এবং শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্র বিকল, এই দু’টি ঘটনাকে কেন্দ্র করে যাত্রীদের মধ্যে ক্ষোভ তৈরি হয়। প্রশ্ন ওঠে, বাড়তি টাকায় টিকিট কিনে যথাযথ পরিষেবা পাওয়া যাবে না কেন? যাত্রীরা দাবি তোলেন, উন্নত পরিকাঠামোর ব্যবস্থা করে তবেই প্রিমিয়াম ট্রেন চালানো হোক।

তার পরেই রেলকর্তারা নড়েচড়ে বসেন। দফায় দফায় বৈঠক করেন তাঁরা। বিভ্রাটের ময়না-তদন্ত করতে গিয়ে বোঝা যায়, সুষ্ঠু ভাবে ট্রেন চালানো ও ঠিকমতো পরিষেবা দেওয়ার জন্য রেলের মূল যে-চারটি দফতর আছে, তাদের মধ্যে সমন্বয় তৈরি করা একান্ত প্রয়োজন। সেখানেই ওই হেল্পলাইন নম্বর চালু করার বিষয়টিকে গুরুত্ব দেওয়া হয়।

কিন্তু অনেক বেশি টাকা খরচ করে টিকিট কাটার পরেও যাত্রীরা পরিষেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন কেন?

দক্ষিণ-পূর্ব রেলের কর্তারা বলেন, “আমরা সুষ্ঠু পরিষেবা দেওয়ার চেষ্টা করছি। তার জন্য কয়েকটি ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।” ওই রেলের ট্রেন চালানোর অধিকর্তা (সিওএম) তথা মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক সৌমিত্র মজুমদারের বক্তব্য, মূলত সময়মতো ট্রেন চালানো, কামরা ও শৌচাগারের পরিচ্ছন্নতা এবং খাবার এই তিনটি প্রাথমিক শর্ত পূরণ করতে পারলেই পরিষেবা নিয়ে অভিযোগ অনেকটা সামাল দেওয়া যাবে।

রেলের কর্তারা জানান, এই তিনটি দিকে নজর দেওয়া হচ্ছে। এর পরেও অসুবিধা থাকলে যাত্রীরা যাতে অভিযোগ জানাতে পারেন, ব্যবস্থা হচ্ছে তারও।

রেল সূত্রের খবর, গত ডিসেম্বরে দিল্লি ও মুম্বইয়ের মধ্যে পরীক্ষামূলক ভাবে প্রথম প্রিমিয়াম ট্রেন চালানো হয়েছিল। তার পরে এ বছর বাজেটে পাকাপাকি ভাবে ওই ট্রেন চালানোর সিদ্ধান্ত ঘোষণা করা হয়। দক্ষিণ-পূর্ব রেলের কর্তারা জানান, ২১ এপ্রিল থেকে ওই রেলে পাঁচটি প্রিমিয়াম ট্রেন চালানো শুরু হয়। পাঁচটির মধ্যে আছে হাওড়া-বেঙ্গালুরু-যশোবন্তপুর ও হাওড়া-চেন্নাই। প্রথম থেকে বেঙ্গালুরুর ট্রেনটির চাহিদা থাকলেও চেন্নাইয়ের ট্রেনটি তেমন জনপ্রিয় হচ্ছিল না। তাই চেন্নাই রুটের ট্রেনটি এক সপ্তাহ বন্ধ রাখা হয়েছিল।

পরে দক্ষিণ রেলের অনুরোধে আবার সেটি চালিয়ে দেখা যায়, ওই রুটের অন্যান্য ট্রেনের চেয়ে প্রায় তিন গুণ আয় হচ্ছে দু’টি রুটেই। দু’টি রুটেই প্রিমিয়াম ট্রেনে যাত্রীদের চাহিদা ১০০% ছাড়িয়ে যাচ্ছে। পাঁচটি প্রিমিয়াম ট্রেনকে এখন ওই দু’টি রুটে ভাগাভাগি করে চালানো হচ্ছে।

সৌমিত্রবাবু জানান, পুরী, মুম্বই-সহ আরও কয়েকটি রুটে প্রিমিয়াম এক্সপ্রেস চালানোর উদ্যোগ চলছে। কিন্তু ওই সব রুটে এমনিতেই এত বেশি ট্রেন চলে যে, সুপারফাস্ট প্রিমিয়াম এক্সপ্রেসের জন্য সময় বার করা যাচ্ছে না। রেলের পরিভাষায় একে বলে ‘পাথ’ পাওয়া। প্রিমিয়ামকে পথ ছেড়ে দেওয়ার জন্য সামনের অন্তত দু’টি স্টেশন পর্যন্ত লাইন ফাঁকা রাখতে হবে। সেটাই এখনও করে ওঠা যায়নি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

premium train helpline
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE