প্রথম দফার ভোটে ঝাড়খণ্ডে ‘তাদের’ উপস্থিতি টের পাওয়া যায়নি। কিন্তু আগামীকাল রাজ্যের ছ’টি লোকসভা কেন্দ্রে দ্বিতীয় দফার নির্বাচনের কয়েক ঘণ্টা আগে নিজেদের অস্তিত্বের জানান দিল মাওবাদীরা।
আজ হাজারিবাগ, গিরিডিতে ছত্তীসগড়ের ধাঁচে ভোটকর্মী, নিরাপত্তা বাহিনীর উপর জঙ্গি হামলার ছক বানচাল হলেও, ওই দুই জেলায় বিস্ফোরণ এবং বোমা উদ্ধারের ঘটনায় চিন্তা বাড়ল প্রশাসনের।
পড়শি বিহারের সাতটি কেন্দ্রেও আগামীকাল ভোট। তার মধ্যে চারটি জঙ্গি-প্রবণ। আজকের ঘটনার জেরে পাশাপাশি দু’টি রাজ্যের ‘মাওবাদী-দুর্গে’ সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা নিয়ে তাই বাড়তি সতর্ক নির্বাচন কমিশন। একই কারণে নজরদারি বেড়েছে মণিপুর-ইনার এলাকাতেও। সেখানে সক্রিয় মণিপুরি জঙ্গিরা।
গিরিডি, হাজারিবাগ, সিংভূম, রাঁচি, খুঁটি, জামশেদপুর ঝাড়খণ্ডে দ্বিতীয় দফায় ওই কেন্দ্রগুলিতেই ভোট গ্রহণ। তার ঠিক আগে, গিরিডি এবং হাজারিবাগে খোঁজ মিলল জঙ্গিদের ল্যান্ডমাইনের। গিরিডিতে ভোটকর্মী, নিরাপত্তা বাহিনীর যাতায়াত করার সড়কের একটি সেতুর নীচে বিস্ফোরণ হলেও, হাজারিবাগে শেষ মুহূর্তে বিস্ফোরক উদ্ধার করে নিষ্ক্রিয় করা হয়। পুলিশের আশঙ্কা, ছত্তীসগঢ়ের ধাঁচে নির্বাচনের প্রহরায় মোতায়েন জওয়ান এবং ভোটকর্মীদের গাড়ি উড়াতে ল্যান্ডমাইন পুঁতেছিল জঙ্গিরা। প্রশাসনিক সূত্রের খবর, গিরিডির পীরটাঁড় এলাকার পঞ্জনাটাঁড়ে জঙ্গলে ঘেরা সড়কের একটি সেতুর নীচে বিস্ফোরণ হয়। তবে, সেতুটি অক্ষত রয়েছে। হাজারিবাগ জেলার বিষ্ণুগড়ের অম্বাটাঁড়ে একটি সেতুর নীচে রাখা ছ’টি কৌটো বোমা উদ্ধার করেন নিরাপত্তা কর্মীরা।
১২ এপ্রিল ছত্তীসগঢ়ে ভোটকর্মী এবং জওয়ানদের গাড়ি নিশানা করেছিল মাওবাদী জঙ্গিরা। সে দিনের হামলায় মৃত্যু হয় ১৫ জনের।
ঝাড়খণ্ডে একই কায়দায় বিস্ফোরণের ছকের হদিস পাওয়ায় ভোটের নিরাপত্তা আরও কঠোর করছে পড়শি বিহার। মাওবাদী-অধ্যুষিত কেন্দ্রগুলিতে জোরদার প্রহরার ব্যবস্থা করা হয়েছে। হেলিকপ্টার থেকেও চলছে নজরদারি। মুঙ্গের, নালন্দা, পটনা সাহিব, পাটলিপুত্র, আরা, বক্সার এবং জহনাবাদে হবে নির্বাচন। কমিশনের হিসেবে, মোট ভোটার সংখ্যা ১ কোটি ২২ লক্ষ।
রাজ্যের মুখ্যসচিব অশোক কুমার সিনহা জানিয়েছেন, নিরাপত্তায় মোতায়েন থাকবেন ৪২ হাজার নিরাপত্তা কর্মী। জঙ্গি-প্রভাবিত মুঙ্গের, আরা, জহনাবাদ, পাটলিপুত্রের ১১ হাজার ৮৪৬টি বুথে হাজির থাকবেন সশস্ত্র পুলিশকর্মীরাও।
বিহার পুলিশের ডিজি অভয়ানন্দ জানান, দ্বিতীয় দফার ভোটে ওই সব কেন্দ্রের পাহারায় থাকবে ১৫২ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী।
একই কথা শোনা গিয়েছে ঝাড়খণ্ড পুলিশের কাছেও। ডিজি রাজীব কুমার জানিয়েছেন, সড়ক পথে লুকানো ‘বিপদ’ এড়াতে মাওবাদী অধ্যুষিত এলাকার বুথগুলিতে কপ্টারে পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে ভোটকর্মীদের। খুঁটি, সিংভূংমের সারাণ্ডার মতো জঙ্গি ঘাঁটিতে কঠোর নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়েছে। ছ’টি কেন্দ্রের নজরদারিতে থাকবেন ৪৫ হাজার আধা-সেনাও।