Advertisement
০১ জুন ২০২৪

টাকার অভাবেই পড়া হয়নি, বিতর্ক উস্কে দিলেন স্মৃতি

বাড়িতে অভাব। টাকা নেই পড়া চালানোর। বাধ্য হয়েই পড়াশোনা ছাড়তে হয় শিক্ষামন্ত্রীর। আটকে যায় উচ্চশিক্ষার স্বপ্নও। তাঁর মতোই অর্থের অভাবে বা রোজগারের খোঁজে যাঁরা অল্প বয়সে স্কুল ছেড়ে দিয়েছেন, শিক্ষা মন্ত্রকের দায়িত্ব হাতে নিয়েই তাঁদের উচ্চশিক্ষার লক্ষ্যে এ বার বিশেষ সরকারি পরিকল্পনার কথা ঘোষণা করলেন কেন্দ্রীয় মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রী স্মৃতি ইরানি।

অনমিত্র সেনগুপ্ত
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২৪ অগস্ট ২০১৪ ০২:২২
Share: Save:

বাড়িতে অভাব। টাকা নেই পড়া চালানোর। বাধ্য হয়েই পড়াশোনা ছাড়তে হয় শিক্ষামন্ত্রীর। আটকে যায় উচ্চশিক্ষার স্বপ্নও। তাঁর মতোই অর্থের অভাবে বা রোজগারের খোঁজে যাঁরা অল্প বয়সে স্কুল ছেড়ে দিয়েছেন, শিক্ষা মন্ত্রকের দায়িত্ব হাতে নিয়েই তাঁদের উচ্চশিক্ষার লক্ষ্যে এ বার বিশেষ সরকারি পরিকল্পনার কথা ঘোষণা করলেন কেন্দ্রীয় মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রী স্মৃতি ইরানি।

আজ মুম্বইয়ে এক অনুষ্ঠানে তিনি জানান, রোজগারের খোঁজে যাঁরা অল্পবয়সে চাকরি ছেড়ে দিতে বাধ্য হন, তাঁদের উচ্চশিক্ষার লক্ষ্যে বিশেষ পদক্ষেপ করবে সরকার। ডিসেম্বর মাস থেকে বাস্তবায়িত হবে ওই পরিকল্পনা। স্মৃতির দাবি, “দেখা গিয়েছে গরিব ঘরের ছেলে-মেয়েরা, আদিবাসী ছাত্র-ছাত্রীরা রোজগারের জন্য অল্প বয়সেই স্কুল ছাড়তে বাধ্য হয়। তাঁদের কথা ভেবে ডিসেম্বরে র মধ্যে একটি পরিকল্পনা আনতে চলেছে মন্ত্রক। অষ্টম শ্রেণির পরে যাঁরা পড়া ছেড়ে দিয়েছিলেন তাঁরা চাইলে বেশি বয়সেও একের পর এক সিঁড়ি অতিক্রম করে গবেষণা পর্যন্ত করতে পারবেন।”

মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রকের দায়িত্ব পাওয়া ইস্তক উচ্চশিক্ষার ডিগ্রি না থাকায় বিস্তর সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছে স্মৃতি ইরানিকে। তাঁর নতুন পরিকল্পনাকে স্বাগত জানালেও বিরোধীদের দাবি, সমালোচনার জবাব দিতে এ ভাবে আসলে নিজের জীবনের প্রসঙ্গ টেনে সাফাই দিলেন তিনি।

কী বলেছেন স্মৃতি? আজ স্কুলছুট ছাত্র-ছাত্রীদের প্রতি সহমর্মিতা জানাতে গিয়ে মন্ত্রী বলেন, “রোজগারের লক্ষ্যে অনেককেই অল্প বয়সে পড়া ছাড়তে হয়। টাকার অভাব থাকায় আমিও পড়া ছেড়েছিলাম।” মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রীর ওই বক্তব্য সামনে আসতেই বিতর্ক শুরু হয়। বর্তমানে স্কুলছুট ছাত্র-ছাত্রীদের শিক্ষার জন্য বিকল্প শিক্ষাব্যবস্থা চালু রয়েছে। তা -ও সরকারের এই পরিকল্পনাকে স্বাগত জানিয়েছে শিক্ষামহল-সহ বিরোধীরা।

কিন্তু আজ যে ভাবে নিজের উচ্চশিক্ষা না থাকার কারণ ব্যাখ্যায় তৎপর হন স্মৃতি, তাতে অন্য মানেই খুঁজছে বিরোধী নেতৃত্ব। কংগ্রেসের এক নেতার কথায়, “ওই বক্তব্য সাফাই গাওয়া ছাড়া কিছুই নয়। স্মৃতির শিক্ষাগত যোগ্যতা নিয়ে একাধিক বার প্রশ্ন উঠছে। তা নিয়ে তিনি যে অস্বস্তিতে তা-ই ফের স্পষ্ট হল।” মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রকের কর্তারাও মনে করছেন, অহেতুক ওই মন্তব্য করে স্মৃতি নিজেই ফের বিতর্কের সুযোগ করে দিলেন।

মন্ত্রী হওয়ার পর থেকেই শিক্ষাগত যোগ্যতা নিয়ে বিতর্ক পিছু ছাড়ছে না স্মৃতি ইরানির। সরকারি ভাবে স্মৃতির শিক্ষাগত যোগ্যতা দ্বাদশ শ্রেণি পাশ। এর পর তিনি স্নাতক স্তরের পাঠ্যক্রমে ভর্তি হন। কোন বিষয়ের পাঠ্যক্রম, তা নিয়ে যদিও দু’বার নির্বাচনে দু’রকমের হলফনামা দেন তিনি। কিন্তু সেই পড়াও শেষ হয়নি। যিনি ন্যূনতম স্নাতক পর্যায়ের গন্ডি পার হননি তিনি উচ্চশিক্ষার গুরুত্ব বুঝতে পারবেন কি না তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন শিক্ষাবিদদের একাংশও। আজ টাকার টানাপড়েনকে দায়ী করে অবস্থান স্পষ্ট করলেন স্মৃতি।

বিরোধীদের লাগাতার আক্রমণ, যোগ্যতা নিয়ে বিতর্ক থিতু হওয়ার আগে চলতি মাসেই নতুন ঝামেলায় জড়িয়ে পড়েছিলেন মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রী। দিল্লির একটি অনুষ্ঠানে নিজেকে ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক বলে দাবি করে তিনি বলেন, “আমাকে অনেকে অশিক্ষিত বললেও, আমার কাছে কিন্তু ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক ডিগ্রি রয়েছে।” পরে দেখা যায় স্মৃতি সাংসদ হিসাবে ছ’দিনের এক ওয়ার্কশপে অংশ নিতে ওই বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়েছিলেন। মানবসম্পদ মন্ত্রকও বিবৃতি দিয়ে জানায়, স্মৃতি ইরানি অন্য রাজনৈতিক দলের সাংসদদের সঙ্গে ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘লিডারশিপ’ বা নেতৃত্ব সংক্রান্ত একটি ছ’ দিনের কোর্স করতে যান। তা সফল ভাবে শেষ করার পর শংসাপত্র দেওয়া হয়। পরে স্মৃতিকেও বলতে হয়, “দুর্ভাগ্যজনক ভাবে আমার শংসাপত্র ভুল ব্যাখ্যা করা হয়েছে।”

সেই ঘটনার দশ দিনও কাটেনি, নিজের শিক্ষাগত যোগ্যতা নিয়ে ফের মন্তব্য করলেন স্মৃতি। কংগ্রেস মুখপাত্র রণদীপ সিংহ সুরজেওয়ালার মন্তব্য, “মন্ত্রকের নতুন উদ্যোগ ভাল।” কিন্তু শিক্ষাগত যোগ্যতা না থাকার কারণ হিসেবে স্মৃতি যা বলেছেন তা শুনে সুরজেওয়ালার জবাব, “উনি নিজের শিক্ষাগত যোগ্যতা নিয়ে এক-এক বার এক-এক রকম কথা বলেন। দেশের শিক্ষামন্ত্রীর প্রকৃত যোগ্যতা কী, তা শুধু তিনিই বলতে পারবেন।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

smriti irani anamitra sengupta anamitra
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE