ভোটের ময়দানে না-লড়েই ঝাড়খণ্ডে পরিষদীয় গণতন্ত্রের মূলস্রোতে ঢুকে পড়ল তৃণমূল কংগ্রেস। জেএমএম-কংগ্রেস জোট সরকারের সমর্থক দুই নির্দল বিধায়ক আজ সপারিষদ যোগ দিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের শিবিরে।
রাঁচির হরমূতে তৃণমূলের কার্যালয়ে সদ্য দলে আসা দুই বিধায়ক, বন্ধু তিরকি এবং চামরা লিণ্ডাকে পাশে বসিয়ে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মুকুল রায় বলেন, “ঝাড়খণ্ড বিধানসভার ট্রেজারি বেঞ্চে এ বার থাকবেন তৃণমূলের প্রতিনিধিও।” একই সঙ্গে বিতর্ক এড়াতে তিনি বলেছেন, “এখন আমাদের মূল লক্ষ্য লোকসভা নির্বাচনে লড়াই করা। এ রাজ্যে দল কোন নীতি নিয়ে চলবে, তা পরে ঠিক করা হবে।”
মুকুলের সঙ্গে সেখানে হাজির ছিলেন কয়েক দিন আগে ওই দলে যোগ দেওয়া জেএমএম শীর্ষ নেতা শিবু সোরেনের ভাই লালুও। আজ তৃণমূলে যোগ দেন পাকুড়ের প্রাক্তন বিজেপি বিধায়ক বেণীপ্রসাদ গুপ্তও।
এ নিয়ে দেশের পাঁচটি রাজ্যের বিধানসভায় পা রাখল তৃণমূল। মণিপুরে ৭, অরুণাচল ও অসমে তৃণমূলের এক জন করে বিধায়ক রয়েছেন। উত্তরপ্রদেশের মথুরার মট বিধানসভা কেন্দ্রের উপ-নির্বাচনে জিতে সে রাজ্যের বিধানসভায় গিয়েছেন তৃণমূল প্রার্থী শ্যামসুন্দর শর্মা।
ভোটের ময়দানে না-নেমেই এ বার ঝাড়খণ্ড বিধানসভাতেও খাতা খুলল তৃণমূল।
রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী তথা রাঁচির মান্দারের বিধায়ক বন্ধু তিরকি। ‘জনজাগরণ মঞ্চ’-এর শীর্ষ নেতা বন্ধু কর্মী-সমর্থকদের নিয়েই তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন। বিষুনপুরের বিধায়ক তথা ‘রাষ্ট্রীয় কল্যাণ পক্ষ’ নেতা চামরা লিণ্ডাও একই পথে হেঁটেছেন।
ঝাড়খণ্ডে জোট সরকারের মূল দু’টি শরিক দল হল, কংগ্রেস এবং ঝাড়খণ্ড মুক্তি মোর্চা (জেএমএম)। নির্দল বিধায়ক হিসেবে পরিচিতি বন্ধু ও চামরা সরকার গঠনে সমর্থন জানিয়েছেন।
রাজ্য সরকারের সমর্থক দুই বিধায়ক তৃণমূল শিবিরে যোগ দেওয়া নিয়ে সমালোচনায় সরব বিজেপি। বিরোধী দল নেতা অর্জুন মুণ্ডা বলেছেন, “লোকসভা ভোটে নিজেদের কংগ্রেস-বিরোধী বলে প্রচার করছে তৃণমূল। কিন্তু এখানে কংগ্রেসের সরকারেই যোগ দিচ্ছে।”
তবে এ ঘটনাকে বিশেষ গুরুত্ব দিতে নারাজ প্রদেশ কংগ্রেস নেতৃত্ব। রাজ্য সভাপতি সুখদেব ভগত বলেছেন, “কত দিন দুই বিধায়ক তৃণমূলে থাকবেন তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে।”
লোকসভা ভোটের জন্য আগেই ‘ঝাড়খণ্ড পিপলস পার্টি’র সুরজ সিংহ বেসরা-র সঙ্গে জোট গড়েছে তৃণমূল। দলীয় সূত্রের খবর, রাজ্যের নির্দল বিধায়ক হরিনারায়ণ রাইয়ের সঙ্গেও তাঁদের কথাবার্তা চলছে।
বন্ধু, চামরা যোগ দেওয়ায় রাজ্য সরকারের উপর কিছুটা হলেও ‘নিয়ন্ত্রণ’ থাকতে পারে তৃণমূলের। কারণ, হেমন্ত সোরেনের নেতৃত্বাধীন সরকার টিকিয়ে রাখতে ওই দু’জনের সমর্থন জরুরি।
তৃণমূলে যোগ দিয়ে বন্ধু বলেন, “কেন্দ্রে পরবর্তী সরকার গঠনে মমতা’দি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেবেন। ওঁর মা-মাটি-মানুষের স্লোগান এখানকার গরিব মূলবাসী মানুষের কাছেও জনপ্রিয় হবে। কারণ, ঝাড়খণ্ডে তাঁরাই অবহেলিত।”