Advertisement
E-Paper

দাওবা-দারু-জিনস, সব জাল মুম্বইয়ে

নকল মদের চালান চোরাপথে আসতেই থাকে। কখনও ধরা পড়ে, কখনও পার পেয়ে যায়। রোনাল্ডের কথায়, ভারতের চিকিত্‌সা বিজ্ঞান অতি উন্নত পর্যায়ে তাই নকল ওষুধপত্রে কাজ ঠিকই হয় কিন্তু তবুও ওষুধগুলো নকল। আমাদের দেশে ওষুধও নকল হয় নাকি? আমাদের বৃহত্‌ দেশে কেমিস্ট এবং ড্রাগিস্টদের অভাব নেই। একটা কোম্পানির ওষুধের পাতায় কোন রাসায়নিক কত মাত্রায় দেওয়া হয়েছে তা লেখা থাকে। তার থেকে অল্প বিস্তর পরীক্ষানিরীক্ষা চালিয়ে নকল ওষুধ তৈরি হয়ে যায়। রোনাল্ড বললেন খাতায় কলমে ওষুধ নকল কিন্তু ওষুধের গুণ ঠিক থাকে। সব কিছুই জাল হয়। কারবারটা তবু চলে। লিখছেন পৌলমী সরকার।সঙ্গীতশিল্পী লতা মঙ্গেশকর একটি বিষয়ে বিশেষ চৌকস— গাইবার সময়ে পারিশ্রমিক যাই হোক না কেন রয়্যালিটির অংশ থেকে যাতে তাঁকে কিছুতেই বঞ্চিত না করা যায় তার দিকে বিশেষ নজর রাখেন। আর তাই সঙ্গীত জগতে তিনি সব থেকে বেশি বিত্তশালী শিল্পী। কিন্তু তবুও তিনি সৃষ্টিশীল কাজের ‘পাইরেসি’ থেকে রক্ষা পেয়েছেন কি? পাইরেসি-র জাল এত বেশি বিস্তৃত যে প্রত্যেক মুহূর্তে কোনও না কোনও স্রষ্টার সৃষ্টি কোথাও না কোথাও নকল হয়ে চলেছে।

শেষ আপডেট: ২৩ নভেম্বর ২০১৪ ০১:০৬

সঙ্গীতশিল্পী লতা মঙ্গেশকর একটি বিষয়ে বিশেষ চৌকস— গাইবার সময়ে পারিশ্রমিক যাই হোক না কেন রয়্যালিটির অংশ থেকে যাতে তাঁকে কিছুতেই বঞ্চিত না করা যায় তার দিকে বিশেষ নজর রাখেন। আর তাই সঙ্গীত জগতে তিনি সব থেকে বেশি বিত্তশালী শিল্পী। কিন্তু তবুও তিনি সৃষ্টিশীল কাজের ‘পাইরেসি’ থেকে রক্ষা পেয়েছেন কি? পাইরেসি-র জাল এত বেশি বিস্তৃত যে প্রত্যেক মুহূর্তে কোনও না কোনও স্রষ্টার সৃষ্টি কোথাও না কোথাও নকল হয়ে চলেছে।

বাইবেলে আছে ‘দাও শ্যাল নট স্টিল’— অর্থাত্‌ চুরি কোরো না। কিন্তু কতটুকু খাটে এই বাণী ‘পাইরেট’দের পেশাদারি দক্ষতার কাছে? রোনাল্ড ডি’কস্টা এই নকলনবিশদের হাতকড়া পরানোর কাজে যুক্ত আছেন বিশ বছরের উপর। জানালেন অডিও ভিস্যুয়াল ক্যাসেট এবং সিডি থেকে আরম্ভ করে নকল হয় কম্পিউটার সফ্টওয়্যার, ওষুধ, জামাকাপড়, শিল্পীদের আঁকা ছবি।

আগে নকল ভিডিও ক্যাসেট তৈরি হত। সেগুলো চলে আসত পাড়ার ভিডিও লাইব্রেরিতে। এই রকমই খার পশ্চিমের ১৪ নং রোডে সর্বোদয় ভিডিও পার্লার থেকে ২০০০ সালে বেলা সাড়ে তিনটের সময় ছ’হাজার ভিডিও ক্যাসেট, ভিসিডি, ডিভিডি উদ্ধার করেন ডি’কস্টার দল, প্রাক্তন অ্যাডিশনাল পুলিশ কমিশনার এ এ খানের নেতৃত্বে। এর মধ্যে বহু সাম্প্রতিক মুক্তি পাওয়া ছবিও ছিল। ভিডিও পার্লারের মালিক বকুল চান্দারিয়াকে পুলিশ গ্রেফতার করে। সে সময় ছ’হাজার পাইরেটেড ভিডিও ক্যাসেটের মূল্য ছিল এক কোটি তিরিশ লাখ টাকা। পুলিশের সাহায্য নিয়ে কাজটি করে এনফোর্সাস অফ ইন্টেলেকচুয়াল প্রপার্টি রাইটস নামে এক সংস্থা।

পুলিশ পাইরেসি ধরার কাজগুলো বিভিন্ন এজেন্সির মাধ্যমে করে থাকে। এই সমস্ত এজেন্সিগুলো অ্যাসোসিয়েশন অফ মোশন পিকচার্স ও পুলিশের কাছ থেকে সমর্থন পেয়ে কাজ করে থাকে। এই সব এজেন্সির কর্মীদের পাইরেটেড কপি ধরার বিশেষ প্রশিক্ষণ থাকে। পুলিশের মাধ্যমে পাইরেটদের গ্রেফতার করানোর পরও এই সব এজেন্সিগুলোর কাজ শেষ হয় না। কারণ তখন কোর্টের সওয়াল জবাবের মুখে কখনও পুলিশকে সাহায্য করতে হয়, কখনও পুলিশের হয়ে তাদেরই সওয়াল জবাব সামাল দিতে হয়। ডি’কস্টা বললেন, ‘‘আজকাল পাইরেটরা এমন দুঁদে উকিল ধরে রাখে যে বিচারপতিকে পর্যন্ত ঘোল খাইয়ে দেয়। তাই কেস চলাকালীন অত্যন্ত সতর্ক থাকতে হয়।’’

আশির দশকে আমাদের দেশে অডিও ক্যাসেট তৈরি হত না। সোনির ব্ল্যাঙ্ক ক্যাসেটগুলো বিক্রি হত অত্যন্ত চড়া দামে। সে সময়ে এক অত্যন্ত জনপ্রিয় ক্যাসেট কোম্পানি ক্যাসেট তৈরি করতে শুরু করে। তারা রেকর্ডিং-এর কাজেও ধীরে ধীরে হাত লাগাতে শুরু করে। এক বড়সড় পাইরেটেড অডিও ক্যাসেটের ব্যবসা ফেঁদে ফেলে। আর জন্ম দেয় অনেক লতাকণ্ঠী, কিশোর কণ্ঠীদের। এমনও অনেক ক্যাসেট এরা বাজারে ছেড়েছে যেগুলোর কভারে লতা, কিশোরকুমারের ফোটোর পরিবর্তে স্কেচ থাকত। নব্বইয়ের দশকে যখন এই পাইরেটেড কোম্পানির অডিও ক্যাসেটের ব্যবসা তুঙ্গে তখন নিরুপায় চলচ্চিত্রের নির্মাতা নির্দেশকরা নিজেরাই ঠিক করেন চলচ্চিত্রের গানের অডিও ক্যাসেট বিক্রির স্বত্ব এই পাইরেট কোম্পানিকেই বেচবেন। অনুরাধা পডওয়াল, কুমার শানু, সনু নিগম, অলকা ইয়াগনিকের মতো গুণী শিল্পীদের মুখগুলো এই সময়েই পরিচিত হয়ে ওঠে।

পাইরেসি-র দৌরাত্ম্যে অবশ্য একটা ভাল কাজ হয়। পুরনো শিল্পীদের একচেটিয়া পেশাদারিত্বে ভাটা পড়ে। নতুনরা সেই সুযোগে স্থান করে নেন। ছিয়াশি সালে সুপার ক্যাসেট ইন্ডাস্ট্রি ‘টি সিরিজ’ নামটি রেজিস্টার করাতে চায়। তার বিজ্ঞাপন আসে ট্রেডমার্ক জার্নালে একানব্বই সালে। তখনই বাধ সাধে টাটা ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড লোকোমটিভ লিমিটেড (টেলকো)। তাদের বয়ান অনুযায়ী বৃত্তের মধ্যে ইংরাজি অক্ষর ‘টি’-র উপর একচেটিয়া অধিকার শুধু টাটা কোম্পানিরই আছে। তাই নতুন টি সিরিজ ক্যাসেট কোম্পানির লোগো মানুষের মনে ধন্ধের সৃষ্টি করবে। কারণ ‘টি’কে ঘিরে বৃত্ত টেলকো কোম্পানির নিজস্ব। কিন্তু সুপার ক্যাসেট কোম্পানির সঙ্গে টেলকোর মামলাটি দিল্লি হাইকোর্টে যায়। রায়ে টেলকো কোম্পানির অভিযোগ টেকেনি। কারণ সুপার ক্যাসেট কোম্পানি বৃত্তের মধ্যে ‘টি’র লোগো ব্যবহার করে আসছে ’৭৯ সাল থেকে। এবং টেলকোর টি-এর সঙ্গে টি সিরিজের টি-এর লেখন শৈলীতে কোনও মিল নেই। সুপার ক্যাসেট কোম্পানির বৃত্তের মধ্যে টি অপরিবর্তনীয় থেকে যায়।

অডিও ভিস্যুয়াল ক্যাসেট এবং সিডির ব্যবসাটা রমরমা ছিল বেশ কয়েক বছর আগে পর্যন্তও। মুম্বইয়ে কোলাবা কজওয়ের রাস্তায়, ছত্রপতি শিবাজি টার্মিনাসের সামনে, আন্ধেরি স্টেশনের সামনে— সব জায়গায় চলত এই ব্যবসা। রোনাল্ড ডি’কস্টা বললেন, ‘‘মধ্যপ্রদেশের একটি অঞ্চলে এই নকল সিডিগুলো তৈরি হয়। তার পর এগুলো মুম্বই ও অন্যান্য শহরে ছড়িয়ে পড়ে। এখন একটা ছবি বিদেশে মুক্তি পাবার সঙ্গে সঙ্গে সেটা প্রথম প্রাইভেট শোতেই নকল হয়ে যায়। যখন মাত্র কয়েক জন লোক ছবিটা বসে দেখেন। তাই প্রথম লটের পাইরেটেড কপিগুলোর গুণমান সে রকম উচ্চপর্যায়ের হয় না। দ্বিতীয় লট থেকে ছবিটার গুণমান ক্রমে ক্রমে ভাল হতে থাকে।”

কিন্তু আজ পাইরেটেড গানের ক্যাসেট বা সিডি প্রায় উঠেই গেছে। ল্যামিংটন রোডের ইলেকট্রনিক্সের জিনিসপত্রের বাজারে যে কোনও দোকানে একটা পেনড্রাইভ দিয়ে হিন্দি সিনেমার গান কপি করে দিতে বললে অগুনতি গান পাওয়া যায় মাত্র সত্তর টাকার বিনিময়ে। তা হলে কম্পিউটার, ইন্টারনেট, পেনড্রাইভের যুগে কি কপিরাইট ব্যাপারটার মূল্য কিছুই থাকল না? অনেকে আজকাল মোবাইল ফোনে সিনেমা দেখে নিচ্ছেন। কেউ কেউ ইন্টারনেট ইউটিউবে নতুন মুক্তি পাওয়া ছবির গান দেখে নেন। রোনাল্ড বললেন, “পরিস্থিতির চাপে পড়ে সিনেমা ও মিউজিক অডিও ও ভিডিওর উপর কপিরাইটের কড়াকড়ি অনেকটা শিথিল যেমন হয়েছে আবার একটা সিনেমার থেকে নির্মাতার পয়সা রোজগারের বহু দিকও খুলে গেছে। যেমন আজকাল একটা ছবি দেশের সঙ্গে সঙ্গে বিদেশেও মুক্তি পায়। আবার কিছুুদিন বাদেই টেলিভিশনের কোনও চ্যানেলকে দেখাবার স্বত্ব বিক্রি করা হয়। ফলে একটা সিনেমা লাভের মুখ না দেখলেও ভরাডুবির মুখও দেখে না। লগ্নি করা টাকাটা নির্মাতারা ঠিকই উঠিয়ে নেন।”

তবে ঠিকই, নকল করার অনেক সাধন থাকলেও পাইরেসি-র বাজারে এসেছে মন্দা। এখন একজন ছাত্র ইন্টারনেট থেকে কয়েকটা ছবি ডাউন-লোড করে নিজেদের বন্ধুদের মধ্যে অদলবদল করে একসঙ্গে বেশ কয়েকটি নতুন ছবি মুফতে দেখে নেয়। রোনাল্ড বললেন, এ ক্ষেত্রে যে সব ছবি বা মিউজিক ভিডিও ডাউন-লোড করা হচ্ছে তা সরকারি অনুমোদন থাকে বলেই ইন্টারনেট ব্যবস্থায় সেই সব ভিডিও সহজলভ্য করে রাখা হয়।

মানুষের চাহিদা বুঝেই আজকের দিনে আগের মতো বড় বড় প্রেক্ষাগৃহ দেখা যায় না। কারণ আগে প্রেক্ষাগৃহটাই ছিল সিনেমা দেখার একমাত্র মাধ্যম। এখন একসঙ্গে অনেক মানুষ বসে ছবি দেখার রেওয়াজ উঠে গেছে। ধীরে ধীরে ভিডিও ক্যাসেট এল। যা ঘরের টিভিকে দিব্যি পর্দা বানিয়ে দিনে চারটে করে ছবিও দেখাত। শেষে এল ভিসিডি, ডিভিডির যুগ। এখন একটা ছবি পেনড্রাইভে ভরে নিয়ে ল্যাপটপে তো দ্যাখা যাচ্ছেই, উপরন্তু আধুনিক এলআইডি টিভিগুলোতে পেনড্রাইভ লাগাবার ব্যবস্থা থাকছে। তবে একজন ক্লান্ত মজদুর দিনের শেষে একটা সিনেমা যেমন তার মোবাইল ফোনে দেখতে পছন্দ করেন, সে রকম যারা হলে গিয়ে ছবি দেখতে চান তারা আজও হলে গিয়েই সিনেমা দেখেন। সেখানে ব্যতিক্রম হয়নি।

তবে মার খাচ্ছে ফুটপাথে বসে থাকা পাইরেটেড সিডি, ডিভিডি বিক্রেতারা। দিনে দুটো সিডি বিক্রি হলে অনেক। ফ্লোরা ফাউন্টেন থেকে কালা ঘোড়ার পথে আগে যে পরিমাণ নকল ডিভিডির দোকান দেখা যেত এখন সেখানে দুটো একটার বেশি চোখে পড়ে না।

পরিস্থিতির চাপে পড়ে এখন অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার জন্য সিনেমাওয়ালারা নকল হয়ে যাওয়ার বিষয়ে বিশেষ মাথা ঘামাচ্ছেন না। আজ বছরে পৃথিবীর সব থেকে বেশি ছবি মুক্তি পায় বলিউড ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে। তাই একটা নতুন সিনেমার গানের পাড়ায় পাড়ায় বেজে ওঠার গড় আয়ু এক থেকে দেড় মাস। এর মধ্যেই আবার নতুন ছবি এসে পুরনোর জায়গাটা কেড়ে নেবে। মানুষ আবার নতুন মুক্তি পাওয়া ছবির গান নিয়ে মেতে উঠবে। এক মাস আগের গানগুলো প্রায় ভুলেই যাবে। তাই আজকাল লাভ-ক্ষতির কথা ভুলে গিয়ে সিনেমা নির্মাতারা মানুষের মনে জায়গা করে নেওয়ার বিশেষ প্রয়াস চালিয়ে যায়। তাই সিনেমা মুক্তি পাওয়ার আগে সিনেমার গানগুলোকে জনপ্রিয় করে তোলার নানা রকম কৌশল চলতে থাকে।

টিভিতে এর জন্য বিশেষ কতকগুলো সঙ্গীত চ্যানেল তৈরি হয়ে গেছে। যেখানে মুক্তি পাবে এমন ছবির গান বারে বারে সম্প্রচার করে মানুষকে নতুন গানগুলোর সঙ্গে পরিচিত করে দেওয়া হতে থাকে। তাই মানুষের মনে টিকে থাকার ইঁদুর দৌড়ে নিদেনপক্ষে একটা ব্যক্তিগত পেনড্রাইভে যদি জায়গা করে নিতে পারে একটি গান তা হলে তা চরম সাফল্য মনে করা হচ্ছে। হলই বা সেটা বৈদ্যুতিন ব্যবস্থা থেকে সংগ্রহ করা কোনও গান। তবু তো গানটা আরও কিছুদিন বাজবে।

আখের রস থেকে এক রকম মদ তৈরি করা যায়। মহারাষ্ট্রে আখের উত্‌পাদনটা বেশি বলে পরিচিত মদ কোম্পানিগুলোর নামে নকল মদের ব্যবসাও বেশ রমরমা। রোনাল্ড বললেন, এ ক্ষেত্রে কোম্পানিগুলোর বোতল সংগ্রহ করা হয় পুরনো শিশি-বোতলওয়ালাদের কাছ থেকে। আর নকল ঢাকনাগুলো তৈরি হয় দিল্লির কাছে। আখের রস বার করে তাকে জ্বাল দেওয়া হয় চিনি প্রস্তুত করার জন্য। প্রথম বারের জ্বাল দেওয়াতে চিনির বেশির ভাগ অংশটাই বার করে নেওয়া হয়। এর পর চিনির কলগুলো আখের নির্যাস ফেলে দেওয়ার ব্যবস্থা করে। যাতে এই রস পাইরেট মদ প্রস্তুতকারকদের হাতে না পড়ে এবং যাতে কোনও ভাবেই ব্যবহার করতে না পারে, সে জন্য রসের মধ্যে বেশ কিছু মাত্রায় রাসায়নিক বিষ যেমন বেঞ্জিন ইত্যাদি মিশিয়ে কলের বাইরে বার করে দেয়।

কিন্তু নকল মদ বিক্রেতাদের আটকানোর সাধ্য এই চিনি কলগুলোর নেই। এক বার ব্যবহার হয়ে যাওয়া রস চোরাপথে দমনে চলে আসে। এখানে এই আখের রস পুনরায় জ্বাল দেওয়া হয়। পরিস্রুত করা হয়। পাওয়া যায় মোলাসেস। যদিও তার মধ্যে রাসায়নিক বিষ মেশানো থাকে। এ বার এই মোলাসেসকে পচিয়ে জল এবং তরল পানীয় মিশিয়ে তৈরি হয় অ্যালকোহল। তার পর এই অ্যালকোহল বিখ্যাত কোম্পানির বোতলে ভরে নকল ছিপি লাগিয়ে দমনের গলিতে গলিতে হুইস্কি, রাম, না জানি কত নামে বিক্রি হয়। তাই দমনের অ্যালকোহল পান করলে মাথাযন্ত্রণা হয়। কারণ বেঞ্জিন জাতীয় রাসায়নিক বিষ আরও অন্য তরলের সঙ্গে মিশ্রিত হলেও তার প্রভাব অল্প মাত্রায় থেকেই যায়।

অনেক সময় এই নকল মদ শহর মুম্বইতেও এসে পড়ে। এ বিষয়ে রোনাল্ড চোখটা খুলে দিলেন। যে সমস্ত রেস্তরাঁয় ‘রেস্টুরেন্ট অ্যান্ড বার’ লেখা থাকে সেখানে অথবা শুধু বিয়ার বার লেখা থাকে তার মালিকদের অনেক সময় অ্যালকোহল বিক্রি করার অনুমতি থাকে না। সেখানে অনেক সময়ই দমনের সস্তা নকল মদ পাওয়া যায়। যে সব রেস্টুরেন্টে ‘পারমিট রুম’ কথাটি লেখা থাকে সেখানে মদ বিক্রি করার অনুমতিপত্র বা লাইসেন্স থাকে। পুলিশের সতত প্রয়াস থাকা সত্ত্বেও মানুষকে বিরত করা যায় না নেশা থেকে।

নকল মদের চালান চোরাপথে আসতেই থাকে। কখনও ধরা পড়ে, কখনও পার পেয়ে যায়। রোনাল্ডের কথায়, ভারতের চিকিত্‌সা বিজ্ঞান অতি উন্নত পর্যায়ে তাই নকল ওষুধপত্রে কাজ ঠিকই হয় কিন্তু তবুও ওষুধগুলো নকল। আমাদের দেশে ওষুধও নকল হয় নাকি? আমাদের বৃহত্‌ দেশে কেমিস্ট এবং ড্রাগিস্টদের অভাব নেই। একটা কোম্পানির ওষুধের পাতায় কোন রাসায়নিক কত মাত্রায় দেওয়া হয়েছে তা লেখা থাকে। তার থেকে অল্প বিস্তর পরীক্ষানিরীক্ষা চালিয়ে নকল ওষুধ তৈরি হয়ে যায়। রোনাল্ড বললেন খাতায় কলমে ওষুধগুলো নকল থাকে কিন্তু ওষুধের গুণ ঠিক থাকে।

নামকরা কোম্পানির জামাকাপড়ের নকল আজকাল পাওয়া যায়। ফেলে দেওয়া নামকরা কোম্পানির পুরনো জিন্স বা শার্টের থেকে তার বোতাম, পেতলের জিপ, জিন্সের কোমরে লাগানো চামড়ার টুকরো খুলে নিয়ে নতুন বানানো প্যান্ট শার্টের মধ্যে লাগালেই কাম ফতে— লা কস্ত, লি, লি-ভাইস সব হাজির। মার খায় বড় কোম্পানির ব্র্যান্ড নামক মাথা ঘুরিয়ে দেওয়া শব্দটা। যাকে প্রতিপালন করার জন্য না জানি কত কঠিন শর্ত কোম্পানিটিকে হাসি মুখে মেনে নিতে হয়েছে। তবে এ ক্ষেত্রে নকল জিন্স প্রস্তুতকারীদের একটা জায়গায় বিশেষ বেগ পেতে হয় যদি কোমরের কাছে কোম্পানির নাম লেখা চামড়ার তাপ্পির টুকরো সংগ্রহ না করা যায়।

বহু কৌশল, নিয়ম, আইন করেও পৃথিবী থেকে নকলের বাজার দূর করা যায়নি। কখনও গোয়ার মাপুসাতে আবার কখনও হায়দরাবাদে, কখনও কলকাতার ফ্যান্সি মার্কেটে এই কারবার চলতে থাকে। আর তাই এর সঙ্গে চলতে থাকে চোর-পুলিশের ইঁদুর বেড়ালের খেলা। শুনেছি, পশ্চিমবঙ্গের রামপুরহাট-তারাপীঠে প্রচুর জাল মদ বিক্রি হয়, বছরের পর বছর। সবাই জানে, পুলিশ থেকে নেতা, কারবারটা তবু চলে!

poulami sarkar fake hard drinks medicine jeans
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy