কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠকে মনমোহন সিংহ, সনিয়া গাঁধী ও রাহুল গাঁধী। ছবি: পিটিআই
ভোটের পরে আট মাস কেটে গিয়েছে। হতাশা কাটিয়ে বেরিয়ে আসা তো দূর, মাঝে মহারাষ্ট্র ও ঝাড়খণ্ডের ভোটে হারতে হয়েছে দলকে। সনিয়া গাঁধী তবু চুপচাপই ছিলেন এই ক’মাস। ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠক ডেকে এ বার দলকে গা ঝাড়া দিয়ে ওঠার নির্দেশ দিলেন কংগ্রেস সভানেত্রী। আপাতত কেন্দ্রের জমি নীতির বিরোধিতাকে অন্যতম হাতিয়ার করার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি। তাঁর মতে, ঘুরপথে ব্রিটিশ জমানার আইন চালু করেছে সরকার। এর প্রতিবাদে রাজ্যে রাজ্যে কৃষক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে কংগ্রেসকে। তাঁর নির্দেশে কালইদিল্লি লাগোয়া উত্তরপ্রদেশের ভাট্টা পারসলে গিয়ে কৃষকদের সঙ্গে বৈঠক করবেন প্রাক্তন কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রী জয়রাম রমেশ।
গত কয়েক মাস সামনে থেকে দলকে নেতৃত্ব দেওয়ার চেষ্টা করলেও, রাহুল গাঁধী মূলত ব্যস্ত থেকেছেন সাংগঠনিক সংস্কার নিয়ে। ভোটের কৌশল ঠিক করাই হোক বা বিরোধী দল হিসেবে জাতীয় রাজনীতিতে দলকে প্রাসঙ্গিক করে তোলা কোনও ক্ষেত্রেই কংগ্রেস সহসভাপতি এমন কিছু করে দেখাতে পারেননি, যাতে দলের অন্দরে অন্তত তাঁর নেতৃত্ব দেওয়ার ক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন তোলাটা বন্ধ হয়। এই অবস্থায় ফের নীরবতা ছেড়ে বেরিয়ে এলেন সনিয়া। সরকার ও বিজেপিকে ঝাঁঝালো আক্রমণ করে এ-ও বুঝিয়ে দিলেন, নরেন্দ্র মোদীর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে আপাতত নেতৃত্ব দেবেন তিনিই।
রাহুল শুরু করেছেন ১৩০ বছরের দলকে হাইকম্যান্ড সংস্কৃতি থেকে বের করে আনার কাজ। আর সনিয়া নামলেন কংগ্রেসকে ফের প্রাসঙ্গিক করে তোলার চেষ্টায়। তাঁর সাফ কথা, কেন্দ্র ও স্থানীয় সরকারের জনবিরোধী নীতির বিরুদ্ধে রাজ্যে রাজ্যে কংগ্রেস নেতা ও কর্মীদের পথে নামতে হবে দ্রুত। সংসদকে এড়িয়ে মোদী সরকার সাত মাসে দশটি অর্ডিন্যান্স জারি করেছে। এর পিছনে সরকারের ‘অসৎ উদ্দেশ্য’ রয়েছে কি না সে বিষয়ে আজ প্রশ্ন তোলেন সনিয়া। সেই সঙ্গে এ-ও বলেন, “প্রধানমন্ত্রী ও তাঁর সাঙ্গোপাঙ্গরা এর মধ্যেই তাঁদের আসল চরিত্র ও রং দেখিয়ে দিয়েছেন। সরকার ও বিজেপির উঁচু পদে থাকা নেতারা উস্কানিমূলক মন্তব্য করে সমাজে বিভাজনের বিষ ছড়াচ্ছেন। আর প্রধানমন্ত্রী নীরব থেকে তাতে সায় দিচ্ছেন।” তাঁর কথায়, “মেরুকরণের রাজনীতির জন্য বিজেপি ও সঙ্ঘ পরিবারের চেনা ছকটাই ফের সামনে এসে পড়েছে।”
এই পরিস্থিতিতে সনিয়ার স্পষ্ট নির্দেশ, কৃষক ও সাধারণ মানুষেরদুর্দশা নিয়ে সরকার বিরোধিতায় পথে নামতে হবে কংগ্রেসকে। ইউরিয়া সঙ্কট নিয়ে পঞ্জাব ও হরিয়ানার চাষিদের পাশে থেকে আন্দোলনেরও নির্দেশ দিয়েছেন সনিয়া।
বছর ঘোরার আগেই কেন্দ্রের নতুন সরকারের বিরুদ্ধে বিরোধী পক্ষকে এতটা আক্রমণাত্মক হতে দেখা যায় না সচরাচর। তবে এটা স্পষ্ট যে, হতোদ্যম দশা কাটিয়ে দলকে একটা রাজনৈতিক দিশা দিতেই সনিয়া এ ভাবে সরকার ও বিজেপির কাজকর্মের বিরুদ্ধে মুখর হতে শুরু করলেন আট মাসের মাথায়। এ নিয়ে বিজেপির মুখপাত্র ও সংসদ বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মুখতার আব্বাস নকভি আজ বলেন, “মাত্র ক’দিন ক্ষমতার বাইরে থেকেই অসহিষ্ণু হয়ে পড়েছেন কংগ্রেস নেতারা!” দলকে রাজনৈতিক আন্দোলনের দিশা দেখানোর পাশাপাশি সাংগঠনিক সংস্কার নিয়েও এ দিন আলোচনা হয়। কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটির ৩০ জন সদস্যের উপস্থিতিতে সনিয়া-রাহুল স্পষ্ট করে দেন, কংগ্রেসে সাংগঠনিক সংস্কার এ বার অনিবার্য।
দশ জনপথ ঘনিষ্ঠ এক নেতার বক্তব্য, লোকসভা ভোটের পরপর সরকারের বিরদ্ধে বলার কিছু ছিল না কংগ্রেসের। দলকে চাঙ্গা করার কোনও জাদুদণ্ডও নেই। কিন্তু আট মাস পরে সনিয়া আজ দলকে জানাতে চাইলেন, কংগ্রেসকে রাজনৈতিক আন্দোলনের রসদ জোগাতে এর মধ্যেই বেশ কিছু ভুলভ্রান্তি সরকার করেছে। এ বার অন্তন্ত গা ঝাড়া দিয়ে উঠুক কংগ্রেস।
তবে পর ক্ষণেই সনিয়া-ঘনিষ্ঠ ওই নেতা হেসে বলেন, “কংগ্রেস খানদানি দল তো! দেখুন, গা ঝাড়া দিতেও হয়তো সময় লাগবে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy