Advertisement
E-Paper

পুরনো ক্ষোভ, পুলিশি জুলুমে ফুঁসছে ভূস্বর্গ

জম্মু স্টেশন থেকে গাড়িতে হোটেলে পৌঁছতে লাগল চল্লিশ মিনিট। তারই মধ্যে বার তিনেক বাধা। রাস্তা আটকাচ্ছিলেন যাঁরা, তাঁদের বয়স কুড়ির কোঠায়। মুখে বিশেষ কথা নেই। চোখে কাঠিন্য। গাড়ির চালককে টাকার জন্য ইশারা করতেই বিনা বাক্যব্যয়ে কখনও দশ, কখনও কুড়ি টাকা বের করে দিচ্ছিলেন তিনি।

সোমা মুখোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ০৭ এপ্রিল ২০১৪ ০৩:৩৯

জম্মু স্টেশন থেকে গাড়িতে হোটেলে পৌঁছতে লাগল চল্লিশ মিনিট। তারই মধ্যে বার তিনেক বাধা। রাস্তা আটকাচ্ছিলেন যাঁরা, তাঁদের বয়স কুড়ির কোঠায়। মুখে বিশেষ কথা নেই। চোখে কাঠিন্য। গাড়ির চালককে টাকার জন্য ইশারা করতেই বিনা বাক্যব্যয়ে কখনও দশ, কখনও কুড়ি টাকা বের করে দিচ্ছিলেন তিনি। আগে-পিছে খেয়াল করে দেখা গেল, অন্যান্য গাড়ির হালও এর চেয়ে আলাদা কিছু নয়। এটা কীসের জন্য? তাঁর উত্তর, “জানি না।” তা হলে দিচ্ছেন কেন? “ভুখা আদমি। এরাই বা কী করবে? এমনিতে তো পেট ভরে না। তাই এ ভাবে টাকা নেয়।” স্টিয়ারিংয়ে অবিচল থেকে উত্তর দেন চালক।

নিজের রোজগারের টাকা খরচ করে এই সহানুভূতি দেখানো খুব বাড়াবাড়ি হয়ে যায় না? হেসে ফেলেন চালক রশিদ আহমদ খান, “আমি কেন দেব? গাড়ির মালিক দেন। জানেন, এই বাড়তি খরচটা না করলে ব্যবসা চালাতে পারবেন না। গাড়িতে আগুন জ্বলে যাবে।”

একটা ঝকঝকে, মধুর সকাল কেমন যেন বিস্বাদ হয়ে যায় নিমেষেই। জম্মু-কাশ্মীর পুলিশের এ হেন আচরণে কাশ্মীর সফরে তাল কাটার অভিজ্ঞতা এখন প্রতি পদে। কিন্তু শ্রীনগর, পহেলগাম, গুলমার্গ, সোনমার্গ-সর্বত্রই তো পর্যটকের ভিড়। গাড়ির চালক, ঘোড়ার সহিস, ছোট-বড় দোকানিরা হাসিমুখে স্বাগত জানাচ্ছেন। দাবি করছেন, কাশ্মীর এখন পুরোপুরি স্বাভাবিক! তা হলে কোনটা সত্যি?

কাশ্মীরের বিশিষ্ট নাগরিকেরা বলছেন, দুটোই। এক দিকে উপত্যকাকে ঘিরে বাইরের মানুষের আড় ভাঙছে। অন্য দিকে, ভিতরে ভিতরে ফের কাশ্মীরকে উত্তপ্ত করে দেওয়ার চেষ্টাও চলছে পুরো দমে। ফের দানা বাঁধছে ‘গো ব্যাক ইন্ডিয়া’ শ্লোগান। জম্মু বিশ্ববিদ্যালয়ের এক প্রবীণ অধ্যাপকের কথায়, “এখানে কাজ কোথায়? জিনিসের দাম বাড়ছে হু হু করে। শুধু পর্যটনকে ঘিরে পেট ভরাতে হলে যতটা শান্তি বা স্বস্তি জরুরি, তা এখনও আসেনি। তাই জোর-জুলুম বাড়ছে। আর পুলিশের অত্যাচারও তো থেমে নেই। সব মিলিয়ে ফের আগুন জ্বলতে পারে যে কোনও সময়েই।”

উত্তরে সোপোর থেকে দক্ষিণে অনন্তনাগ-সর্বত্রই এখন ওই পুলিশি জুলুমের অভিযোগ। ডাল লেকের শিকারাচালক থেকে শুরু করে পহেলগামের বড় দোকানি-সকলেই জানাচ্ছেন, আগে ছিল সিআরপি। এখন তাদের কাজ তুলনামূলকভাবে কমেছে। সেই জায়গা নিয়েছে কাশ্মীর পুলিশ। এক দিকে, মানুষের কাজ নেই। দারিদ্র বাড়ছে। অন্য দিকে, রাস্তায় যখন-তখন যে কোনও অভিযোগে টাকা তুলছে পুলিশ। ইনস্পেক্টর জেনারেল এ জি মির অবশ্য দাবি করেছেন, সবটাই মনগড়া। তাঁর কথায়, “পুলিশ সক্রিয় থাকলে এমন অভিযোগ উঠবেই। ও সব নিয়ে বেশি ভেবে লাভ নেই। ফোঁস করে ওঠা লোককে বাগে আনতে গেলে শক্ত হতেই হবে।”

কিন্তু কেন ফের ফুঁসে উঠছেন মানুষ? কেন ফের অস্থির হয়ে উঠছে আপাতশান্ত ভূস্বর্গ? বিরোধীদের দাবি, রাজীব হত্যাকারীদের শাস্তি মকুব নিয়ে তামিলনাড়ু সরকার উদ্যোগী হতেই আফজল গুরুর ফাঁসির পুরনো শোক ফের জেগে উঠেছে। রাজীব হত্যাকারীরা ছাড় পেলেও আফজল গুরুকে কেন ফাঁসিতে ঝুলতে হল, নতুন করে সেই প্রশ্ন উঠছে কাশ্মীরে। আর সেই প্রশ্নে ইন্ধন দেওয়ার লোকজনেরও অভাব নেই। সরকারি ব্যথর্তার অভিযোগ তুলে ধিক্কার কর্মসূচি চলছে বিভিন্ন জেলাতেই।

হুরিয়ত কনফারেন্স নেতা ওমর ফারুকের কথায়, “সরকার ঠুঁটো জগন্নাথ। তাই পরিস্থিতি ফের তেতে উঠতে বাধ্য।” পিপলস ডেমোক্র্যাটিক পার্টি (পিডিপি)-র সভানেত্রী মেহবুবা মুফতি বলছেন, “চোখ বুজে দিল্লির ভরসায় বসে থাকা ছাড়া এ রাজ্যের সরকারের আর কোনও কাজ নেই। মানুষ তাই ফুঁসে উঠবেন, সেটাই স্বাভাবিক।” সর্বত্রই বিরোধীরা দাবি করছেন, মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লার জনপ্রিয়তা ক্রমশ কমছে। কারণ, তাঁর মেরুদণ্ডের জোর নেই। তাঁকে চালাচ্ছে অন্যরা। পিডিপি-র এক শীর্ষ নেতার কথায়, “আরও স্পষ্ট করে বললে, তাঁর রিমোট কন্ট্রোল দিল্লির হাতে।”

দিল্লির মসনদের অধিকারী স্থির হওয়ার নির্বাচনকে ঘিরে কাশ্মীরবাসীর জীবন তাই ফের প্রশ্নচিহ্নের মুখে। জেলায় জেলায় দাবি উঠছে ভোট বয়কটের। শুরু হয়েছে বিক্ষোভ, পাথর ছোড়া। ফের চলছে পুলিশের গুলি। আর এই সিঁদুরে মেঘ দেখেই ফের শিউরে উঠছেন আম কাশ্মীরবাসী।

soma mokhopadhay srinagar
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy