Advertisement
১১ মে ২০২৪

বাঙালি খ্রিস্টান পরিবারের রকমারি রান্না

শান্তনু বন্দ্যোপাধ্যায়পূর্ব বাংলার রান্নার বরাবরই যথেষ্ট সুনাম। মা, ঠাকুমাদের হাতের তৈরি রকমারি আমিষ ও নিরামিষ রান্নার সঙ্গে ঘটি বাঙাল দুই শিবিরই পরিচিত। কিন্তু পূর্ববঙ্গের বাঙালি খ্রিস্টান পরিবারের অসাধারণ কিছু পদ রয়েছে, যেগুলির সঙ্গে অনেকেই সে ভাবে পরিচিত নন। বিখ্যাত শেফ প্রদীপ রোজারিত্ত-র মা ভেরোনিকা রোজারিত্ত-র রান্নার হাত অসাধারণ। বাংলাদেশি খ্রিস্টান পরিবারের এই গৃহিণী রকমারি আমিষ ও নিরামিষ খাবার তৈরিতে অত্যন্ত পারদর্শী।

শেষ আপডেট: ০১ জানুয়ারি ২০১৫ ০১:১৬
Share: Save:

পূর্ব বাংলার রান্নার বরাবরই যথেষ্ট সুনাম। মা, ঠাকুমাদের হাতের তৈরি রকমারি আমিষ ও নিরামিষ রান্নার সঙ্গে ঘটি বাঙাল দুই শিবিরই পরিচিত। কিন্তু পূর্ববঙ্গের বাঙালি খ্রিস্টান পরিবারের অসাধারণ কিছু পদ রয়েছে, যেগুলির সঙ্গে অনেকেই সে ভাবে পরিচিত নন। বিখ্যাত শেফ প্রদীপ রোজারিত্ত-র মা ভেরোনিকা রোজারিত্ত-র রান্নার হাত অসাধারণ। বাংলাদেশি খ্রিস্টান পরিবারের এই গৃহিণী রকমারি আমিষ ও নিরামিষ খাবার তৈরিতে অত্যন্ত পারদর্শী।

হাসিখুশি মানুষটি নানান পদ রান্না করে খাওয়াতে ভালবাসেন। তাঁর হাতের তৈরি রকমারি পদগুলি খেয়ে অভিভূত হয়েছিলাম। বিখ্যাত হোটেল রেস্তোরাঁয় নামীদামি পদগুলিকে চ্যালেঞ্জ জানাতে পারে। সেই পদগুলির থেকে বিশেষ কয়েকটি পদের রেসিপি পাঠকদের জানালাম। মুম্বইয়ে বসে ছুটির দিনে এই ধরনের স্বতন্ত্র পদ রান্না করে খাইয়ে এবং খেয়ে তৃপ্তি পাবেন।

পাংগাম মাছের ভাজাকারি

বাঙালি খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের মানুষেরা পাংগাস মাছ দিয়েই এই পদটি রান্না করেন। তবে কেউ যদি পাংগাস মাছ ব্যবহার করতে না চান বা হাতের কাছে না পান সে ক্ষেত্রে পাংগাসের বদলি হিসেবে বোয়াল বা আর মাছ বা ভেটকি মাছ দিয়েও রাঁধতে পারেন।

উপকরণ: পাংগাস মাছ ২৫০ গ্রাম, মোট ৩টে খণ্ড করে নিন। মাছের খণ্ডগুলো ধুয়ে জল মুছে নিন। মাছের খণ্ডগুলোর গায়ে আন্দাজ মতো নুন ও হলুদ গুঁড়ো মাখিয়ে আলাদা করে রেখে দিন।

সরষের তেল ভাতের হাতার ২ হাতা, তেজপাতা ৪টে, পেঁয়াজের স্লাইজ বড় এক মুঠো, ধনের গুঁড়ো ১ চা চামচ, জিরের গুঁড়ো ১ চা চামচ, হলুদগুঁড়ো ১/২ চা চামচ, শুকনো লঙ্কার গুঁড়ো বা কাশ্মীরি লঙ্কারগুঁড়ো ১ চা চামচ, চৌকো চৌকো ডাইসড করে কাটা পেঁয়াজ এক মুঠো, ২টো বড় সাইজের বেগুন, বেগুনের বোঁটা ও খোসা ছাড়িয়ে পাতলা স্লাইজ করে কেটে নিন। একটা পাত্রে জল ও নুন দিয়ে তার মধ্যে বেগুনের স্লাইজগুলো দিয়ে ৪০ মিনিট ভিজিয়ে রাখুন। ৪০ মিনিট পর বেগুনের স্লাইজগুলো হাত দিয়ে চেপে চটকে নিয়ে একটা মণ্ড মতো করে নিন। তাওয়ায় সেঁকা জিরের গুঁড়ো বড় এক চিমটে, ধনেপাতাকুচি ১ টেবিলচামচ।

প্রণালী: ফ্ল্যাট কড়া আঁচে বসিয়ে সরষের তেল গরম করে তেজপাতা ফোড়ন দিন। পেঁয়াজের স্লাইজ দিয়ে হালকা বাদামি করে ভাজুন। এ বার নুন ও হলুদ মাখানো মাছের খণ্ডগুলো দিয়ে উল্টেপাল্টে হালকা ভেজে নিন। জিরে গুঁড়ো, ধনে গুঁড়ো, হলুদ গুঁড়ো, কাশ্মীরি লঙ্কার গুঁড়ো, ডাইসড করে কাটা পেঁয়াজ দিয়ে নিভু আঁচে কিছুক্ষণ রান্না করুন। এর পর ওর মধ্যে চটকানো বেগুনের মণ্ড তাওয়ায় সেঁকা জিরের গুঁড়ো ধনেপাতার কুচি ও নুন ছড়িয়ে রান্না করুন। এই রান্নাটি করবার সময় বার বার খুন্তি দিয়ে নাড়বেন না। একটু মজে গেলে দু’হাতে কড়াটা ধরে নেড়ে চেড়ে নীচেরটা উপরে উপরেরটা নীচে আনতে হবে। এই ভাবে রান্নাটা করতে হবে। মাছসিদ্ধ হয়ে গেলে আঁচ থেকে নামিয়ে গরম ভাত সহযোগে পরিবেশন করুন।

মাটন ভূনি

উপকরণ: ছোট ছোট কিউব করে কাটা বোনলেস মাটনের খণ্ড ২৫০ গ্রাম, আদাবাটা ১ চা চামচ, রসুনবাটা ১ চা চামচ, জিরের গুঁড়ো ১ চা চামচ, ধনের গুঁড়ো ১চা চামচ, কাশ্মীরি লঙ্কার গুঁড়ো ১ চা চামচ, নুন আন্দাজমতো, সরষের তেল ৪ টেবিল চামচ, পেঁয়াজের স্লাইজ এক মুঠো, গোটা চেরা কাঁচালঙ্কা ৪টে, ১টা মাঝারি টমেটোর ৪ টে খণ্ড, তাওয়ায় সেঁকা জিরের গুঁড়ো ১ চা চামচ, ধনেপাতা কুচি ১ চা চামচ।

প্রণালী: মাটন ভাল করে ধুয়ে পরিষ্কার করে জল মুছে নিন। একটা পাত্রে বোনলেস মাটনের খণ্ডগুলো রেখে তার মধ্যে আদা, রসুনবাটা, জিরে গুঁড়ো, ধনে গুঁড়ো, কাশ্মীরি লঙ্কার গুঁড়ো দিয়ে হাত দিয়ে ঘষে ঘষে ভাল করে মেখে নিন। প্রতিটি উপকরণ যেন মাটনের খণ্ডগুলোর গায়ে ভাল করে লেগে যায়। মিশ্রণ মাখানো মাটনের খণ্ডগুলো ৩ ঘণ্টা আলাদা করে রেখে দিন।

তিন ঘণ্টা বাদে কড়া আঁচে কড়া বসিয়ে সরষের তেল গরম করে নিয়ে পেঁয়াজের স্লাইজগুলো দিয়ে হালকা বাদামী রং করে ভেজে নিন। এর পর মিশ্রণ মাখানো মাটনের খণ্ডগুলো কড়ায় দিন। গোটা চেরা কাঁচা লঙ্কা, টমেটোর খণ্ড, তাওয়ায় সেঁকা জিরের গুঁড়ো দিয়ে নিভু আঁচে ক্রমাগত নেড়ে কিছুক্ষণ কষুন। এর পর তাতে ধনেপাতা কুচি দিয়ে নাড়ুন। সামান্য জল দিয়ে নিভু আঁচে মিনিট পঁচিশেক রান্না করুন। মাটন সিদ্ধ হয়ে গেলে আঁচ থেকে নামিয়ে লুচি, পরোটা বা রুটি এবম স্যালাড সহযোগে পরিবেশন করুন।

চিংড়ি মাছ দিয়ে মিষ্টি কুমড়ো

উপকরণ: চিংড়ি মাছ ৬০০ গ্রাম ( ১ কেজিতে ৫০ পিস ওঠে এ রকম সাইজের চিংড়ি ব্যবহার করতে হবে।)

চিংড়ি মাছের শিরা ও অর্ধেক খোসা বাদ দিয়ে ধুয়ে পরিষ্কার করে নিন। সামান্য নুন ও হলুদ মাখিয়ে সিদ্ধ করুন। সরষের তেল গরম করে সিদ্ধ করা চিংড়ি মাছগুলো দিয়ে হালকা ভেজে কড়া থেকে তুলে আলাদা করে রাখুন। মিষ্টি কুমড়ো ৫০০ গ্রাম, বড় চৌকো করে কেটে ধুয়ে পরিষ্কার করে নিন। হালকা সিদ্ধ করে নিন। কড়া বা ডেচকি আঁচে বসিয়ে সরষের তেল গরম করে তার মধ্যে সিদ্ধ করা কুমড়োর খণ্ডগুলো দিয়ে হালকা ভেজে নিন। হয়ে গেলে আঁচ থেকে নামিয়ে আলাদা রাখুন। সরষের তেল ১ টেবিল চামচ, ১ টা মাঝারি পেঁয়াজের স্লাইজ, আদা বাটা ১ চা চামচ, রসুন বাটা ১ চা চামচ, কাশ্মীরি লঙ্কার গুঁড়ো ১ চা চামচ, ধনের গুঁড়ো ১ চা চামচ, জিরের গুঁড়ো ১ চা চামচ, হলুদ গুঁড়ো ১/২ চা চামচ, নুন আন্দাজ মতো, জল প্রয়োজন মতো, নারকোলের দুধ ১ কাপ বা নারকোল কোরা এক মুঠো।

প্রণালী: কড়া আঁচে সরষের তেল গরম করে পেঁয়াজের স্লাইজ দিয়ে হালকা বাদামি করে ভেজে নিন। ভাজা চিংড়িগুলো দিন। একটু নেড়ে ওর মধ্যে আদা, রসুনবাটা দিয়ে ভাল করে মেশান। কুমড়ো ভাপিয়ে নেবার পর যে তেল জলটা থাকবে সেটা হাত দিয়ে কুমড়োগুলো চেপে কড়ায় ঢেলে দিন। ভাল করে মেশান। কাশ্মীরি লঙ্কা গুঁড়ো, ধনে গুঁড়ো, জিরে গুঁড়ো, হলুদ হুঁড়ো, নুন ও সামান্য জল দিয়ে নিভু আঁচে ভাল করে কষুন। এর পর সিদ্ধ করে তেলে ভাপানো কুমড়োর খণ্ডগুলো দিয়ে অল্প জল দিয়ে নেড়ে নিন। কিছুক্ষণ পর নারকোল দুধ বা নারকোলকোরা দিয়ে নেড়ে নিন। নিভু আঁচে কিছুক্ষণ রান্না করুন। মাখোমাখো হয়ে গেলে আঁচ থেকে নামিয়ে গরম ভাত সহযোগে পরিবেশন করুন।

টমেটো দিয়ে পাংগাস, আড়, বোয়াল বা ভেটকি মাছ

উপকরণ: পাংগাস, আর, বোয়াল বা ভেটকি মাছ ২৫০ গ্রাম। বড় ২টো খণ্ড করে কেটে ধুয়ে পরিষ্কার করে মাছের ৃগায়ে আন্দাজ মতো নুন, হলুদ ও পাতিলেবুর রস মাখিয়ে মিনিট ১৫ আলাদা করে রাখুন। সরষের তেল ৪ টেবিল চামচ, পেঁয়াজের স্লাইজ বড় এক মুঠো, নুন আন্দাজ মতো, আদাবাটা ১ চাচামচ, রসুনবাটা ১ চা চামচ, হলুদগুঁড়ো ১/২ চা চামচ, ধনের গুঁড়ো ১ চা চামচ, জিরের গুঁড়ো ১ চা চামচ, কাশ্মীরি লঙ্কার গুঁড়ো ১ চা চামচ, ১টা বড় সাইজের টমেটো খণ্ড খণ্ড করে কেটে নিতে হবে। ধনেপাতাকুচি এক মুঠো, গোটা চেরা কাঁচা লঙ্কা ৩টে।

প্রণালী: কড়া আঁচে বসিয়ে সরষের তেল গরম করে মাছের খণ্ডগুলো দিয়ে দু’পিঠ ভাল করে ভেজে নিন। ভাজা হয়ে গেলে কড়া থেকে তুলে তেল ঝরিয়ে আলাদা করে রাখুন। মাছ ভাজা হয়ে যাবার পর কড়ায় যে তেলটা পরে থাকবে তার মধ্যে পেঁয়াজের স্লাইজগুলো দিয়ে নুন দিন। পেঁয়াজ হালকা বাদামি রং করে ভেজে নিন। আদা, রসুনবাটা দিয়ে একটু নেড়ে ওর মধ্যে হলুদ, ধনে গুঁড়ো, জিরে গুঁড়ো, টমেটোর খণ্ড দিয়ে নেড়ে জল দিন। নিভু আঁচে মিনিট দশেক রান্না করুন। টমেটো গলে মিশে গেলে ওর মধ্যে ভাজা মাছের খণ্ডগুলো দিন। ধনেপাতাকুচি, গোটা চেরা কাঁচা লঙ্কা ছড়িয়ে দিয়ে নিভু আঁচে আরও কিছুক্ষণ রান্না করুন। মাঝে মধ্যে মাছের খণ্ডগুলো উল্টেপাল্টে দেবেন। হয়ে গেলে আঁচ থেকে নামিয়ে গরম ভাত সহযোগে পরিবেশন করুন।

ছবি: অনুষ্টুপ ভট্টাচার্য।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE