তাঁর সংগঠন বেশ কিছু মানুষকে জোর করে হিন্দু ধর্মে ধর্মান্তরিত করেছে বলে অভিযোগ। অথচ আরএসএস-প্রধান সেই মোহন ভাগবতই রবিবার মহীশূরের এক জমায়েতে বললেন, “প্রার্থনার ধরন বা পোশাক-পরিচ্ছদ কিংবা ঐতিহ্যের রকমফের কোনও কিছুর ভিত্তিতেই ভেদাভেদ করা উচিত নয়।”
সম্প্রতি ভারত সফরে এসে ধর্মীয় সহিষ্ণুতার বার্তা দিয়ে গিয়েছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা। তার পরেই ভাগবতের এই মন্তব্যে অনেকের প্রশ্ন, সেই বার্তার জেরেই কি সুর বদল করলেন সঙ্ঘপ্রধান? না কি এর পিছনে নরেন্দ্র মোদীর ভূমিকাও বড় কারণ?
একাংশের ধারণা, শুধুমাত্র মার্কিন প্রেসিডেন্টের ধর্মীয় সহিষ্ণুতার কথা শুনে ভাগবত সুর বদল করবেন, এমন ভাবাটা ভুল। বরং এর পিছনে নরেন্দ্র মোদীর ভূমিকাই প্রধান বলে মনে করা হচ্ছে। আসলে বিজেপির প্রধানমন্ত্রী-পদপ্রার্থী হিসেবে জাতীয় মঞ্চে উঠে আসার পর থেকেই মোদী নিজের প্রচারের স্লোগান হিসেবে উন্নয়ন ও সুশাসনকে তুলে ধরতে চেয়েছেন। কিন্তু বর্তমানে সেই লক্ষ্যজয়ে বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে সঙ্ঘ পরিবারের একটা বড় অংশের কট্টর হিন্দুত্ববাদী কর্মসূচি। পরিস্থিতি এমনই যে এ জন্য সঙ্ঘপ্রধান ভাগবতকে নিয়ে বৈঠকে বসতে হয়েছে মোদীকে। তাঁকে বোঝাতে হয়, উগ্র হিন্দুত্বের বাড়বাড়ন্তে ঢাকা পড়ে যাচ্ছে বিজেপির উন্নয়নের মুখই।
সেই বার্তারই প্রতিফলন ঘটেছে ভাগবতের এ দিনের মন্তব্যে। বয়স্কদের জন্য আয়োজিত মহীশূরের এক সভায় তিনি বলেন, “বৈচিত্রের বিরোধিতা নয়, বরং তাকে সানন্দে মেনে নেওয়া উচিত।” সঙ্ঘপ্রধানের আরও মত, জীবনযাত্রার ধরনে ফারাক থাকলেও সে জন্য মানুষে মানুষে ভেদাভেদ করা উচিত নয়। তাঁর বয়ানে, “আমরা কী ভাবে পাশাপাশি থাকতে পারি, সে পথই খোঁজা উচিত।” ভাগবতের আরও ব্যাখ্যা, এই সহাবস্থান যেন কোনও চুক্তির মতো না হয়। বরং একে অপরকে মন থেকে মেনে নেওয়ার মধ্যে দিয়েই এই একসঙ্গে থাকার মানসিকতার বিকাশ ঘটা উচিত। এ প্রসঙ্গে এক বার ভারতের ঐতিহ্যের কথাও মনে করিয়ে দিয়েছেন সঙ্ঘপ্রধান।
ঠিক যে ভাবে নিজের বক্তৃতায় ভারতের ধর্মীয় সহিষ্ণুতার ঐতিহ্যের কথা মনে করিয়ে দিয়েছিলেন বারাক ওবামা। বলেছিলেন, “ভারত তত ক্ষণই সফল যত ক্ষণ না পর্যন্ত সে ধর্মের ভিত্তিতে টুকরো টুকরো হয়ে যাচ্ছে।”
ভারত অবশ্য জানিয়ে দিয়েছিল, এ ব্যাপারে ওবামার সঙ্গে মোদীও সহমত। ভাগবতের সঙ্গে বৈঠকেও সে কথা বোঝাতে চেয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী নিজেও। ‘ঘর ওয়াপসি’ থেকে শুরু করে মন্ত্রী সাধ্বী নিরঞ্জন জ্যোতি ও সাংসদ সাক্ষী মহারাজের বিতর্কিত মন্তব্য একের পর এক ঘটনায় যে বিজেপিরই ক্ষতি, সে কথা ভাগবতের সামনে তুলে ধরার চেষ্টা করেছিলেন মোদী।
একাংশের ধারণা, সেই বৈঠক ও ওবামার যৌথ বার্তার পরোক্ষ প্রভাবেই এ দিন সুর বদল করেছেন সঙ্ঘপ্রধান। ভবিষ্যতেও এই অবস্থান বজায় থাকে কিনা, সেটাই দেখার।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy