Advertisement
E-Paper

বিধায়ক হলেই টিকিট, আর মানবেন না রাহুল

জিতেছি তাই টিকিট পাব। বাদবাকিদের মিলবে না। দলের সাংসদ-বিধায়কদের এই মৌরসিপাট্টা ভাঙতে চান রাহুল গাঁধী। জাতীয় রাজনীতিতে তো বটেই, দলের অন্দরেও তাঁর নেতৃত্ব নিয়ে অনাস্থা কাটেনি। কংগ্রেসের বর্ষীয়ান নেতারা সুযোগ পেলেই চোরাগোপ্তা তাঁর সমালোচনা করতে ছাড়েন না। কিন্তু রাহুল তাতে দমছেন না। মহারাষ্ট্র, হরিয়ানা-সহ চার রাজ্যে বিধানসভা ভোট আসছে।

শঙ্খদীপ দাস

শেষ আপডেট: ২৪ অগস্ট ২০১৪ ০২:১৯

জিতেছি তাই টিকিট পাব। বাদবাকিদের মিলবে না। দলের সাংসদ-বিধায়কদের এই মৌরসিপাট্টা ভাঙতে চান রাহুল গাঁধী। জাতীয় রাজনীতিতে তো বটেই, দলের অন্দরেও তাঁর নেতৃত্ব নিয়ে অনাস্থা কাটেনি। কংগ্রেসের বর্ষীয়ান নেতারা সুযোগ পেলেই চোরাগোপ্তা তাঁর সমালোচনা করতে ছাড়েন না। কিন্তু রাহুল তাতে দমছেন না। মহারাষ্ট্র, হরিয়ানা-সহ চার রাজ্যে বিধানসভা ভোট আসছে। কংগ্রেস সহসভাপতি স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, প্রার্থী বাছাইয়ের ক্ষেত্রে দলের ওই ‘সিটিং গেটিং’ সংস্কৃতি এ বার আস্তাকুঁড়ে ছুড়ে ফেলা হবে। দলের বর্ষীয়ানদের উদ্দেশে তাঁর বার্তাটি স্পষ্ট, বর্তমান বিধায়ক হলেই যে তিনি টিকিট পাবেন, এমনটি আর হবে না। প্রার্থী বাছাই করা হবে জয়ের সম্ভাবনা বিচার করে। তার জন্য রাজ্য স্তরে সমীক্ষাও চালাবে দল।

রাহুল যে এই চেষ্টা প্রথম বার চালাচ্ছেন, তা নয়। এ বারের লোকসভা ভোটে ও তার ঠিক আগে পাঁচ রাজ্যে বিধানসভা ভোটের ক্ষেত্রেও তিনি এই নীতিতে এগোনোর চেষ্টা করেছিলেন। প্রার্থী বাছাইয়ের জন্য মধুসূদন মিস্ত্রির নেতৃত্বে সমীক্ষাও চালিয়েছিলেন। কিন্তু বিশেষ লাভ হয়নি। দিল্লিতে দলের সব বর্তমান বিধায়ককে টিকিট দিতে হবে বলে গোঁ ধরেন তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী শীলা দীক্ষিত। শীলার দাবি ফেলতে পারেননি রাহুল। অজিত যোগীর চাপে ছত্তীসগঢ়েও দলের সব বিধায়ককে টিকিট দেওয়া হয়েছিল। একই ঘটনা ঘটে মধ্যপ্রদেশেও। কিন্তু ভোটের ফল বেরোলে দেখা যায় দিল্লির প্রায় ৩৫ জন কংগ্রেস বিধায়ক পরাস্ত হয়েছেন। ছত্তীসগঢ়ে বিজেপির কাছ থেকে প্রায় ১৮টির মতো নতুন আসন ছিনিয়ে নিতে পারলেও হেরে গিয়েছেন দলের ২৭ জন বিধায়ক। একই অভিজ্ঞতা হয় মধ্যপ্রদেশ ও রাজস্থানেও। সাম্প্রতিক এই অভিজ্ঞতার ভিত্তিতেই রাহুল এ বার আরও একরোখা। এতে একটা পরিবর্তন নজরে আসছে এর মধ্যেই। প্রতি বার বিধানসভা ভোটের আগে টিকিট পাওয়ার জন্য উমেদারদের ভিড় উপচে পড়ে কংগ্রেস দফতরে। রাহুলের মতিগতি বুঝে এ বার তা এক্কেবারে উধাও।

মহারাষ্ট্র, হরিয়ানা, জম্মু-কাশ্মীর ও ঝাড়খণ্ডে আসন ধরে ধরে প্রার্থী বাছাইয়ের জন্য সমীক্ষার কাজ প্রায় গুটিয়ে এনেছেন রাহুল। সেই কাজে দিল্লি থেকে কোনও নেতা না পাঠিয়ে প্রতিবেশী রাজ্য থেকে নেতাদের পাঠানো হয়েছে। যেমন সমীক্ষার জন্য পশ্চিমবঙ্গের প্রদেশ কংগ্রেসের কয়েক জনকে পাঠানো হয়েছে ঝাড়খণ্ডে, মহারাষ্ট্রে গিয়েছেন মধ্যপ্রদেশের নেতারা। হরিয়ানায় সমীক্ষা চালাতে পঞ্জাব, দিল্লি ও উত্তরপ্রদেশ থেকে নেতাদের পাঠানো হয়েছে।

কংগ্রেসের এক সাধারণ সম্পাদক আজ জানান, এখনও পর্যন্ত যা ইঙ্গিত তাতে, মহারাষ্ট্র ও হরিয়ানার ন্যূনতম ২০-৩০% বিধায়ককে এ বার প্রার্থী করা হবে না। মহারাষ্ট্রে গত বার ৮২টি আসন জিতেছিল কংগ্রেস। এর মধ্যে ২৫-৩০ জন বিধায়কের এ বার টিকিট পাওয়ার আশা নেই। হরিয়ানার ৪০ জন বিধায়কের মধ্যে প্রায় ১৫ জনের টিকিট পাওয়ার সম্ভাবনা কম। দলের শীর্ষ সারির ওই নেতার যুক্তি, “টানা ১৫ বছর ক্ষমতায় থাকায় এমনিতেই মহারাষ্ট্র ও হরিয়ানায় এখন সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিষ্ঠান বিরোধিতার হাওয়া রয়েছে। এই দু’রাজ্যে কংগ্রেসের জয়ের সম্ভাবনা তাই কম। তাই এটাই পরীক্ষা-নিরীক্ষার উপযুক্ত সময়।”

তাৎপর্যপূর্ণ হল, রাহুল যেটা হালে করতে চাইছেন, বিজেপি নেতৃত্ব, বিশেষ করে নরেন্দ্র মোদী গত সাত-আট বছর ধরেই সেটা করছেন। বিধায়ক-সাংসদের ঢালাও টিকিট না দিয়ে জয়ের সম্ভাবনা যাচাই করে প্রার্থী দিয়ে হাতেনাতে ফল পেয়েছে বিজেপি। অরুণ জেটলিদের মতে, অনেক সময়ই সামগ্রিক ভাবে দলের জনপ্রিয়তা না কমলেও বিধায়কের বিরুদ্ধে স্থানীয় অসন্তোষের কারণে ভোটের ফলে বিরূপ ছাপ পড়ে। নতুন প্রার্থী দিলে এমন ক্ষেত্রে ভাল ফল পাওয়া যায়।

কিন্তু কংগ্রেসে এত দিন সেটা সম্ভব হয়নি। রাহুল শিবিরের এক নেতা বলেন, “রাজ্য ও কেন্দ্র স্তরে কিছু নেতা প্রার্থী বাছাই ও টিকিট পাইয়ে দেওয়াকে তাঁদের মৌরসিপাট্টা বা প্রায় ব্যবসায় পরিণত করেছেন। এতে যোগ্য নেতা টিকিট পান না। স্বজনপোষণ ও কায়েমি স্বার্থ কাজ করে বহু ক্ষেত্রে। এ ব্যাপারে প্রদেশ নেতা ও সর্বভারতীয় কংগ্রেসের তরফে রাজ্যের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতার মধ্যে আঁতাতও থাকে। প্রার্থী বাছাই নিয়ে এই অনিয়মের জন্য আখেরে ভুগতে হয় দলকেই। গত বিধানসভা ভোটে রাজস্থানে ঠিক এটাই ঘটেছে।

তবু যাঁর নেতৃত্বে ভোটে লড়ে লোকসভায় দল মাত্র চল্লিশের কোঠায় নেমে এসেছে, তাঁর ফরমান কী দলের প্রবীণরা মেনে নেবেন? রাহুল শিবিরের ওই নেতার জবাব, “মজার কথা হল, প্রার্থী বাছাই নিয়ে যাঁরা এত দিন অনিয়ম করেছেন, তাঁরাই বেশি করে রাহুলের নেতৃত্ব নিয়ে অনাস্থা প্রকাশ করছেন। কারণ, তাঁদের আশঙ্কা ওঁদের দোকান বন্ধ হয়ে যাবে। রাহুলের কিছু সিদ্ধান্ত ও অবস্থান আকাশ কুসুম মনে হলেও, কিছু বিষয়ে তিনি ঠিক পথেই হাঁটছেন।”

এর মধ্যে আর একটি বিষয়ও লক্ষ্যণীয়। ভোটে দল গোহারা হওয়ার পরে রাহুল আজকাল প্রকাশ্যে তেমন সরব নন। তবে সাংগঠনিক ভাবে ক্রমশ সক্রিয় হচ্ছেন তিনি। সম্ভবত চার রাজ্যে ভোটের পরই সংগঠনে আমুল রদবদল করবেন তিনি।

assembly vote rahul gandhi sankhadip das
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy