পাঁচ বছর আগে লোকসভা নির্বাচনে প্রথম দিনেই ছত্তীসগঢ় ও ঝাড়খণ্ডে মাওবাদী হানার সাক্ষী ছিল নির্বাচন কমিশন। ২০০৯ সালে পাঁচ দফা ভোটের পুনরাবৃত্তি রুখতে নিরাপত্তার প্রশ্নে তাই কোনও আপস চাইছেন না কমিশন। নির্বাচনের সকাল থেকেই আকাশে তাই দেখা মিলবে বায়ুসেনার হেলিকপ্টারের।
কমিশনের নির্দেশ পেয়ে সম্প্রতি দিল্লিতে এ ব্যাপারে দেশের পদস্থ সেনা-কর্তা এবং আধাসামরিক বাহিনীর শীর্ষ কর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র সচিব অনিল গোস্বামী।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক সূত্রে জানা গিয়েছে, বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে, নির্বাচনের দিনগুলিতে বায়ুসেনার ১০টি হেলিকপ্টার দেশের অতি-স্পর্শকাতর এলাকাগুলিতে টহলদারি চালাবে। বায়ুসেনার এক পদস্থ কর্তা জানান, ইতিমধ্যেই বিভিন্ন বিমান-ঘাঁটিতে হেলিকপ্টার ‘তৈরি’ (রেডি টু মুভ) রাখার বার্তা পাঠানো হয়েছে। শুধু নির্বাচনের দিনেই নয়, বায়ুসেনার ওই কর্তা বলেন, “১৫ মার্চ থেকেই হেলিকপ্টারগুলি তৈরি রাখা হয়েছে। প্রয়োজনে এখনও তা ব্যবহার করতে পারে কমিশন।”
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক সূত্রে জানা গিয়েছে, নির্বাচনের সময়ে ছোট মাপের উড়ান বা হেলিকপ্টারের ব্যবহার নতুন নয়। তবে নির্বাচনের নিরাপত্তায় যুদ্ধে ব্যবহৃত বায়ুসেনার চপার ব্যবহার এই প্রথম। এর আগে নির্বাচনের কাজে আধাসামরিক বাহিনীর হেলিকপ্টার ব্যবহারের অবশ্য নজির রয়েছে। তাহলে এ বার বায়ুসেনার হেলিকপ্টার কেন?
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক সূত্রে জানা গিয়েছে, এ যাবত নির্বাচনের নিরাপত্তায় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর এম আই-১৭ হেলিকপ্টার ব্যবহার করা হত। দুর্গম এলাকায় যাত্রী পরিবহণই যার কাজ। তবে সীমান্তরক্ষী বাহিনী জানিয়ে দিয়েছে, আসন্ন লোকসভা নির্বাচনের দিনগুলিতে ওই হেলিকপ্টার পাওয়া যাবে না। মাওবাদী এলাকায় টহলদারির জন্য নির্দিষ্ট ‘ধ্রুব হেলিকপ্টার’ও অন্ধ্রপ্রদেশ, ওড়িশা, ছত্তীসগঢ় ও ঝাড়খণ্ডের কয়েকটি এলাকার বাইরে সরিয়ে নিয়ে যেতে চাইছেন না বিএসএফ কর্তৃপক্ষ। বাধ্য হয়ে তাই বায়ুসেনার দ্বারস্থ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের এক পদস্থ কর্তা বলেন, “বায়ুসেনা কর্তৃপক্ষ সে ব্যাপারে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন। নির্বাচনের দিনগুলিতে তারা ১০টি করে হেলিকপ্টার টহলদারির জন্য বরাদ্দ করেছে।”
আকাশ পথে নজরদারির পাশাপাশি, ওই বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে, আগামী সপ্তাহ থেকেই সীমান্তরক্ষী বাহিনীকে আন্তঃরাজ্য সীমানায় টহলদারিও জোরদার করতে বলা হয়েছে। মাওবাদী এবং বিভিন্ন জঙ্গি সংগঠনের সদস্যরা যাতে সীমানা উজিয়ে এক রাজ্য থেকে অন্য রাজ্যে আনাগোনা করতে না পারে সে ব্যাপারেও বাড়তি নজরদারি চালাতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এ ব্যাপারে প্রতিটি রাজ্য সরকারকেও সতর্ক করা হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গ ছাড়াও দেশের অন্তত সাতটি রাজ্যকে এ ব্যাপারে বিশেষ সজাগ থাকতে বলা হয়েছে বলেও জানা গিয়েছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক সূত্রে জানা গিয়েছে, নিরাপত্তা নিশ্ছিদ্র করতে নয় দফা নির্বাচনে দেশের বিভিন্ন রাজ্যে নিয়োগ করা হচ্ছে আধাসামরিক বাহিনীর প্রায় দু’লক্ষ জওয়ান।
নিরাপত্তার প্রশ্নে স্বারাষ্ট্রমন্ত্রককে হেলিকপ্টার ব্যবহারের পরামর্শ দিলেও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলগুলির ভোট-প্রচারে হেলিকপ্টার ব্যবহারে খরচ বেঁধে দিয়েছে কমিশন।
কমিশন সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রচারের সময়ে রাজনৈতিক দলগুলি ঠিক কী ধরনের কপ্টার ব্যবহার করেছে, ‘সিঙ্গল’ না ‘ডবল’ ইঞ্জিন, কপ্টারের মডেল--তা জানাতে হবে কমিশনকে। ইঞ্জিনের তারতম্যের ভিত্তিতে ভাড়াও বেঁধে দিয়েছে কমিশন। কমিশন সূত্রে জানা গিয়েছে, বেল-৪০৭ মডেলের হেলিকপ্টারের ভাড়া নির্দিষ্ট হয়েছে ঘণ্টা প্রতি ৮৫ থেকে ৯০ হাজার টাকা। বেল-৪১৮ মডেলের কপ্টারের জন্য ভাড়া ঘণ্টায় ২.৫ লক্ষ টাকা।