লোকসভা ভোট হবে, অথচ অমর সিংহ নামের চরিত্রটাই থাকবেন না! তা-ও কি সম্ভব? আচমকাই যেন শীতঘুম থেকে উঠে এসে আজ নিজেই এর উত্তর দিলেন অমর।
মুলায়ম সিংহের এক সময়ের সদা-সঙ্গী এই ঠাকুর নেতা আজ হাত মেলালেন পশ্চিম উত্তরপ্রদেশের জাঠ নেতা অজিত সিংহের সঙ্গে। অমরের সঙ্গেই আজ রাষ্ট্রীয় লোক দল তথা আরএলডি-তে যোগ দিলেন রাজনীতিতে তাঁর অভিন্ন আত্মা জয়া প্রদাও।
অজিতের দল কেন্দ্রে ইউপিএ-র শরিক। সুতরাং অমরও এখন কংগ্রেসের জোট শরিক নেতা। তাই অজিতের সঙ্গে হাত মেলানোর পরই আজ সনিয়া-ভজনায় নেমে পড়লেন অমর-জয়া জুটি। লোকসভা ভোটের জন্য কংগ্রেস-আরএলডি আসনরফাও আজ চূড়ান্ত হয়ে গিয়েছে। পশ্চিম উত্তরপ্রদেশে অমর ও জয়া-সহ আরএলডি-র জন্য ৮টি আসন ছাড়বে কংগ্রেস।
ঘটনাটা একেবারেই আচমকা নয়। রাজনৈতিক সূত্রে বলা হচ্ছে, তলে তলে কংগ্রেস ও অজিতের সঙ্গে রাজ্যসভার এই নির্দল সাংসদের আলোচনা চলছিল বেশ কিছু দিন ধরে। পরোক্ষে কংগ্রেসেই যোগ দিলেন তিনি। ঘরোয়া আলোচনায় কংগ্রেস নেতৃত্বও তা অস্বীকার করছেন না। কংগ্রেসের উত্তরপ্রদেশের এক নেতা আজ জানান, জয়া প্রদার কংগ্রেসে যোগ দেওয়ার বিষয়টি প্রায় চূড়ান্তই হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু কেঁচে যায় অমরকেও সাথে টানতে চাওয়ায়।
জয়া প্রদা বর্তমানে উত্তরপ্রদেশের রামপুরের সাংসদ। মোরাদাবাদ থেকে তাঁকে কংগ্রেসের প্রার্থী করার ব্যাপারে আলোচনা চলছিল। তার মাঝেই সম্প্রতি অমরকে নিয়ে সনিয়া গাঁধীর সঙ্গে দেখা করতে আসেন জয়া প্রদা। মজা করে কংগ্রেসের নেতাটি বলেন, “জয়ার অনুরোধ ছিল, বাই ওয়ান গেট টু প্যাকেজ হলে ভালো হয়। কিন্তু সনিয়া-রাহুল তাতে রাজি হননি। সাংসদ ঘুষ কাণ্ডের অভিযোগ এখনও রয়েছে অমরের মাথায়। ভোটের আগে তাঁর দায়ভার ঘাড়ে নেওয়া ঠিক হবে না বলেই মনে করা হয়।” তবে সরাসরি অমরকে দলে না নিলেও কংগ্রেস নেতারা আবার এটাও জানেন যে, অমরের রাজনৈতিক উপযোগিতা রয়েছে। আহমেদ পটেল তাই অজিত সিংহের সঙ্গে এ ব্যাপারে কথা বলেন। স্থির হয় আরএলডি-তে যোগ দেবেন অমর সিংহ, জয়া প্রদা।
ঠিক ভোটের মুখে এসে তাঁর সক্রিয় হয়ে ওঠা নিয়ে আজ প্রশ্নের মুখে পড়তে হয় অমরকে। স্বভাবসুলভ হাল্কা মেজাজে তাঁর জবাব দেন একদা বলিউডের ঘনিষ্ঠ এই রাজনীতিক। বলেন, “তোমরা করলেই রাসলীলা, আমি করলেই চরিত্র ঢিলা!” তবে এর পরপরই অমর বলেন, “আমি ভুল স্বীকার করছি। মানুষ মাত্রই ভুল হয়। তা স্বীকার করে শুধরে নেওয়াই বড় ব্যাপার। অতীতে সনিয়া গাঁধী সম্পর্কে কটূ মন্তব্য করে ভুল করেছিলাম।”
পশ্চিম উত্তরপ্রদেশের কোন আসন থেকে অমর লড়বেন তা যদিও আজ আনুষ্ঠানিক ভাবে ঘোষণা করা হয়নি। তবে আরএলডি সূত্র বলছে, ফতেপুর সিক্রি আসন থেকে লড়তে পারেন তিনি। আর জয়া প্রদা পেতে চলছেন বিজনৌর কেন্দ্র।
অমর আবার কংগ্রেসের পাশে ফিরে আসায় বলা যেতে পারে, বৃত্তটা অনেকটাই সম্পূর্ণ হল আজ। এক সময় কলকাতার বড়বাজারে কংগ্রেসের নেতা ছিলেন অমর। পরে সমাজবাদী পার্টি (সপা)-তে যোগ দিয়ে ক্রমে মুলায়মের আস্থাভাজন হয়ে ওঠেন। তাঁর পরামর্শে চলতেন সপা সর্বাধিনায়ক। সেই সুবাদে দলে তখন হাতে মাথা কাটতেন অমর। প্রথম ইউপিএ সরকারে বাইরে থেকে সপা-র সমর্থন দেওয়ার কারিগর ছিলেন তিনি। দ্বিতীয় ইউপিএ সরকারের আমলেও এই অমরই পরমাণু চুক্তির প্রশ্নে সংসদের ভোটাভুটিতে সপা-র ভোট এনে দেন কংগ্রেসের ঝুলিতে। কিন্তু সেই ভোটাভুটিতেই ঘুষ দিয়ে সাংসদ কেনার অভিযোগ ওঠে অমরের বিরুদ্ধে। ক্রমে মুলায়মের সঙ্গে তাঁর দূরত্ব তৈরি হয়। পরে সপা থেকে বহিষ্কৃত হন অমর সিংহ ও জয়া প্রদা। মাথার ওপর থেকে বড় রাজনৈতিক দলের আচ্ছাদন সরে যায়। এর কিছু দিন পরেই সর্বোচ্চ আদালত তাঁকে জেল হাজতে রাখার নির্দেশ দেয় ঘুষ কাণ্ডে। তবে কিছু দিনের মধ্যেই অসুস্থতার কারণে জামিনে মুক্তি পান অমর। সিঙ্গাপুরে তাঁর কিডনিতে অস্ত্রোপচার হয়। এর পরের পর্বে উত্তরপ্রদেশ বিধানসভা ভোটের আগে ঠাকুর সমাজকে নিয়ে রাজনৈতিক মঞ্চ গড়ে ভোটে লড়লেও, মোটেই সুবিধা করতে পারেননি। কার্যত শীতঘুমেই চলে যান তিনি। দিল্লির পেজ থ্রি-র কিছু পার্টি ছাড়া তাঁকে দেখা যেত না বিশেষ।
কিন্তু ভোট আসতেই ফের গা ঝাড়া দিয়ে উঠে এল জাতীয় রাজনীতিতে প্রায় হারিয়ে যাওয়া এই মুখটি! যদিও সপা নেতা রামগোপাল যাদবের বক্তব্য, “ওঁর বাগাড়ম্বরটাই সার। ওঁকে সঙ্গে নিয়ে অজিত সিংহ বা কংগ্রেসের কোনও সুবিধাই হবে না। রাজনীতিতে ওঁর বিশ্বাসযোগ্যতা যে শেষ হয়ে গিয়েছে, তা লোকসভা ভোটে আরও এক বার প্রমাণ হয়ে যাবে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy