লোকসভা ভোটে ভরাডুবির পর কংগ্রেস সংসদীয় দলের বৈঠক বসছে কাল। তার চব্বিশ ঘণ্টা আগে রাহুল গাঁধীর পরামর্শদাতা ও দলের শীর্ষ সারির নেতাদের বিরুদ্ধে কংগ্রেসের মধ্যে ক্ষোভ আজ আরও তীব্র আকার নিল। ব্যর্থতার প্রসঙ্গে সরাসরি রাহুলের নাম না করেও কংগ্রেসের সাংগঠনিক দায়িত্বে প্রিয়ঙ্কা গাঁধী বঢরাকে নিয়ে আসার দাবিও আরও জোরালো হয়ে উঠল।
রাহুলের পরামর্শদাতাদের বিরুদ্ধে কাল প্রথম মুখ খুলেছিলেন প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী মিলিন্দ দেওরা। বলেছিলেন, “ভোট রাজনীতিতে অভিজ্ঞতাই নেই যাঁদের, তাঁরাই পরামর্শ দিচ্ছিলেন শীর্ষনেতাদের। যাঁরা সেই পরামর্শ নিচ্ছিলেন, তাঁরাও দায় এড়াতে পারেন না।” মিলিন্দের পথ ধরেই একে একে মুখ খোলেন, যুব কংগ্রেস সভাপতি রাজীব সাতব, শশী তারুর, জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়া, রাজ বব্বরের মতো নেতারা।
কংগ্রেসের একটি সূত্র বলছে, এই আপাত বিদ্রোহের পিছনেও হয়তো একটা নকশা বা পরিকল্পনা রয়েছে। ভোট বিপর্যয়ের পর সংগঠনে আমূল সংস্কার করবেন বলে রাহুল ইঙ্গিত দিয়েছেন। সনিয়াও একই বার্তা দেন ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠকে। দলের একাংশ নেতা মনে করছেন, হয়তো সেই প্রক্রিয়াই শুরু করে দিয়েছেন মা-ছেলে। সম্ভবত রাহুল চান তাঁর বর্তমান পরামর্শদাতাদের ছেঁটে ফেলতে। আর সনিয়া সংগঠনকে ঢেলে সাজতে। তাই তাঁদের ইশারাতেই জমি তৈরির কাজ করছেন রাজীব-
মিলিন্দ-জ্যোতিরাদিত্যরা।
রাজীব সাতব আজ বলেন, “দল যখন একের পর এক ভুল সিদ্ধান্ত নিচ্ছিল, তখন অনেকেই মুখ খুলতে পারতেন। কিন্তু জেনেবুঝেও শীর্ষ সারির অনেকেই চুপ করে ছিলেন।” জ্যোতিরাদিত্য, রাজ বব্বরদের অভিযোগ, বাস্তবের রাজনীতি থেকে শীর্ষনেতারা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছিলেন। সরকারের ভাল কাজও মানুষের মধ্যে তাই পৌঁছে দেওয়া যায়নি।”
দশ জনপথের ঘনিষ্ঠ কেরল কংগ্রেসের নেতা কে ভি টমাস তো সরাসরিই ‘প্রিয়ঙ্কা লাও’ দাবি তুলেছেন। তাঁর কথায়, “ভোটের আগে থেকেই দলে এই দাবিটি ছিল। সনিয়া, রাহুল, প্রিয়ঙ্কা এক সঙ্গে কাজ করলে তবেই কংগ্রেসের ভাল হতে পারে।” ঘুরিয়ে চাপ তৈরি করেছেন তারুরও। তাঁর কথায়, “সন্দেহ নেই প্রিয়ঙ্কার গুণ রয়েছে। কিন্তু তিনি সংগঠনের দায়িত্বে আসার ইচ্ছা প্রকাশের আগেই কার্যত অস্কার দেওয়া হচ্ছে তাঁকে।”
প্রশ্ন হল, দলের তুলনামূলক নবীন নেতারাই কেন রাহুলের পরামর্শদাতা ও শীর্ষনেতাদের বিরুদ্ধে এ ভাবে ক্ষোভ উগরে দিচ্ছেন? বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ যেটা তা হল, মিলিন্দ, জ্যোতিরাদিত্য, তারুর, বব্বর এঁরা সকলেই কিন্তু রাহুলের আস্থাভাজন। আরও যেটা লক্ষ্য করার বিষয়দলের বর্ষীয়ানদেরই এত দিন রাহুলের কর্মপন্থার সমালোচনায় মুখর হতে শোনা যেত। এখন যখন নবীনরা এ নিয়ে মুখ খুলতে শুরু করেছেন, তখন কিন্তু বর্ষীয়ানরা সবাই কার্যত কুলুুপ এঁটেছেন মুখে। উল্টে রাহুলে পাশে দাঁড়াতে শুরু করেছেন তাঁরা।
দলের তেমনই এক প্রবীণ নেতার মতে, রাহুলের পরামর্শদাতাদের বিরুদ্ধে মুখ খুলতে গিয়ে মিলিন্দ হয়তো একটু বেশিই বলে ফেলেছেন। এর মাধ্যমে তিনি রাহুলকেও দায়ী করে ফেলেছেন ব্যর্থতার জন্য। অতীতে সরকারের আনা অর্ডিন্যান্সের বিরুদ্ধে বলতে গিয়ে রাহুল যেমন একটু বাড়াবাড়ি করে ফেলেছিলেন, এ-ও তেমনই। কিন্তু এই সম্ভাবনাও খারিজ করা যায় না যে, এ ব্যাপারে ১২ নম্বর তুঘলক রোডের সঙ্গে তাঁর আগাম সমঝোতা ছিল।
কংগ্রেস নেতৃত্ব মনে করছেন, মিলিন্দদের এই বিদ্রোহ দেখিয়েই রাহুল তাঁর পরামর্শদাতাদের ছেঁটে ফেলতে পারেন। একই সঙ্গে বিদ্রোহের কারণ দেখিয়ে মধুসূদন মিস্ত্রী, মোহনপ্রকাশ, জনার্দন দ্বিবেদী, বি কে হরিপ্রসাদের মতো নেতাদের ওয়ার্কিং কমিটি ও সংগঠন থেকে সরিয়ে দিতে পারেন সনিয়া। আনা হতে পারে এমন কিছু তরুণকে, বাস্তবের রাজনীতির সঙ্গে যাঁদের যোগ রয়েছে। এবং এই প্রেক্ষাপটেই কংগ্রেস সংগঠনে প্রিয়ঙ্কাকে আনার দাবি ও সম্ভাবনা কোনওটাই খারিজ করা হচ্ছে না।
তবে কংগ্রেস নেতৃত্ব এ-ও মনে করছেন, প্রিয়ঙ্কা সংগঠনে এলেও রাহুলের মর্যাদা খাটো করা হবে না। সহসভাপতি পদেই থাকবেন তিনি। যার ইঙ্গিত দিয়ে শাকিল আহমেদ আজ বলেছেন, “রাহুল গাঁধী কংগ্রেস সহসভাপতি পদে যোগ্য নেতা। তাঁকে নেতৃত্বে রেখেই ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করবে কংগ্রেস।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy